সাক্ষাৎকারে ত্রিপুরার বিশিষ্ট সাংবাদিক বিকচ চৌধুরী ভৌগলিক নৈকট্য ও স্থানীয়দের আন্তরিকতায় ত্রিপুরা হয়ে উঠেছিলো মুক্তিযুদ্ধের সুতিকাগার
প্রিয়াংকা আচার্য্য : বিকচ চৌধুরী ত্রিপুরা রাজ্যের একমাত্র সাংবাদিক যিনি ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানের সারেন্ডারের দিন উপস্থিত ছিলেন। কাজ করতেন খ্যাতমান দৈনিক সংবাদে। বর্তমানে মেয়ের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন। আগরতলায় তার ঘনিষ্টজনদের কাছ থেকে ফোন নাম্বার সংগ্রহ করে টেলিফোনে নেয়া হয় এই সাক্ষাৎকার।
‘১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ই মার্চ যে ঐতিহাসিক ভাষণটি দিয়েছিলেন, তা সারা ত্রিপুরাবাসীকে এক অন্যতর প্রাণসম্পন্দনে জাগিয়ে তুলেছিল। ভাষণের ক্যাসেটটি লোক মারফতে রাতের আঁধারে সীমান্ত পার হয়ে আমাদের কাছে চলে এসেছিল। যুদ্ধের সময় আগরতলার প্রায় প্রতি পাড়ার মোড়ে মোড়ে ভাষণটি বাজতো- এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
‘বাঙালি জাতি সম্ভবত নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর ‘দিল্লী চলো’ আহ্বান শোনার পর দ্বিতীয় কোনও দীপ্ত আহ্বান শুনেছিল। এক কণ্ঠে এপাড়ে-ওপাড়ে জয়বাংলা ধ্বনিত হয়েছিল। ত্রিপুরার জাতি-উপজাতির মানুষ বাঙালির এ মুক্তি সংগ্রামকে নিজেদের সংগ্রাম বলে ভেবেছে। দেশভাগের পর বাঙালি জাতি উদ্বাস্তু হয়ে এখানে আসায় তাদের একটা নাড়ীর টান ছিল। আর এখানকার যারা স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ ইতিহাসে তারা আতিথিয়তার জন্য আবারও দৃষ্টান্ত গড়লো। ১৯৪৭ সালের মতো ৭১-এও লাখ লাখ উদ্বাস্তু মানুষকে আশ্রয় দিয়েছিল।’
‘ভৌগলিক নৈকট্যে ত্রিপুরা মুক্তিযুদ্ধের সুতিকাগার হয়েছিল। সকল রাজনৈতিক দল, সামাজিক-অর্থনৈতিক সংগঠন এবং সবকটি পত্রিকা বাংলাদেশের মানুষের পক্ষে কাজ করেছেন আন্তরিকতার সঙ্গে। ত্রিপুরা দুইটি বেসামরিক হাসপাতালও খুলে দেয়া হয়েছিল শরণার্থীদের জন্য। বিশেষ করে এখন যেটা ইন্দিরা গান্ধী হাসপাতাল, তখন ছিল ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হাসপাতাল নামে এবং গোবিন্দ বল্লভ (জিবি) হাসপাতাল সেখানে আজও ইতিহাস হয়ে আছে যে এখানে যতো যুদ্ধাহতদের চিকিৎসা দেয়া হয়েছে পৃথিবীর কোনও যুদ্ধ হাসপাতালে এতো সংখ্যক মানুষের পরিষেবা দেয়া হয়নি। এ তথ্য ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনে রেকর্ড করা আছে।’
‘আমি তখন দৈনিক সংবাদের রণাঙ্গন সংবাদদাতা হিসেবে প্রায় ৯ মাস সীমান্তের দুপাড়েই ঘোরাঘুরি করেছি। মুক্তি সংগ্রামের খবর সংগ্রহ করেছি। ২৬ শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার খবরটি প্রথম দৈনিক সংবাদের মাধ্যমে সারা পৃথিবী জানতে পারে। দৈনিক সংবাদ অফিসটি মুক্তিযুদ্ধের অস্থায়ী কন্ট্রোল রুম হিসেবে ব্যবহৃত হতো। সেখানে নানান লোকের মাধ্যমে সীমান্তের ওপাড় থেকে খবরাখবর চলে আসতো। পরবর্তীতে সেসব তথ্য মুক্তিবাহিনীর কাছে পৌঁছানো হতো।’