আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে, বললেন প্রধানমন্ত্রী
মিলটন খন্দকার : বৃহস্পতিবার সকালে গাজীপুরের সফিপুরে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৪০তম জাতীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এ বাহিনীর প্রায় ৫০ হাজার অঙ্গীভূত আনসার সদস্য সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা বিধান করে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে অনন্য ভূমিকা পালন করছে। তিনি আরও বলেন, বিমান বন্দরের নিরাপত্তায় এ বাহিনীর সদস্যরা ‘এভসেক (এভিয়েশন সিকিউরিটি)’ এর অংশ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। দেশ ও জনপদকে নিরাপদ রাখতে ২টি মহিলা ব্যাটালিয়নসহ এ বাহিনীতে ৪২টি আনসার ব্যাটালিয়ন রয়েছে। পার্বত্য এলাকায় এ বাহিনীর ১৬টি ব্যাটালিয়ন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে অপারেশনাল ও শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছে। এছাড়া নবগঠিত আনসার গার্ড ব্যাটালিয়নের সদস্যরা কূটনৈতিক এলাকা, কূটনৈতিক ব্যক্তি এবং দেশের বিশিষ্ট ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
আপনাদের যেকোনো সমস্যা সমাধানে আমাদের সরকার সবসময় আন্তরিক এবং সহানুভূতিশীল। এই বাহিনীর উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে এবং তা অব্যাহত আছে।
এর আগে সকাল ১০টা ৪৮ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী একাডেমীতে এসে পৌঁছালে স্বরাস্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল কাজী শরীফ কায়কোবাদ তাঁকে স্বাগত জানান। পরে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের সালাম গ্রহণ ও খোলা জীপে করে কুচাওয়াজ পরিদর্শন করেন।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আকম মোজাম্মেল হক এমপি, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এমপি, মেহের আফরোজ চুমকি এমপি, ইকবাল হোসেন সবুজ এমপি, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোঃ আনোয়ার হোসেন, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস.এম তরিকুল ইসলাম, পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে সাহসিকতা ও সেবা এই দুই ক্ষেত্রে ৮টি ক্যাটাগরিতে ১৪৩জন আনসার সদস্যকে পদক প্রদান করেন। পরে তিনি আনসার সদস্যদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। আনসার-ভিডিপি সদস্যদের তৈরি বিভিন্ন হস্তশিল্পের স্টল ঘুরে দেখেন এবং ভূয়সী প্রশংসা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে সকলকে কঠোর পরিশ্রম ও সততার সঙ্গে একযোগে কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, এ বাহিনীর গর্বিত সদস্য ভাষা শহিদ আনসার কমান্ডার আব্দুল জব্বার ১৯৫২ সালের ২১ এ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষার জন্য জীবন বিসর্জন দেন। এ বাহিনীর ১২২৯ বীর সদস্য ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের আম্রকাননে বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার প্রধানকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন।
প্রধনমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলা গঠনের যে স্বপ্ন দেখিয়েছেন, জাতি সে স্বপ্ন পূরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশের কাতারে আমরা প্রবেশ করেছি। সম্প্রতি বিশ্বের ৪১তম অর্থনীতির দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলাদেশ। এসবই গত এগার বছরে আমাদের সরকারের ধারাবাহিক উন্নয়নের ফলে সম্ভব হয়েছে। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ আজ বিশ্বের দরবারে শান্তি, উন্নয়ন এবং দুর্যোগ মোকোবিলায় রোলে মডেল হিসেবে সমাদৃত। মাথাপিছু আয়, জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ও শিক্ষার হার বৃদ্ধি পেয়েছে। দারিদ্রের হার আগের তুলনায় অনেক নেমে এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মেট্রোরেল নির্মাণ, কর্ণফুলী টানেল স্থাপন এ সবই আমাদের উন্নয়নের প্রতি অগ্রযাত্রার বহিঃপ্রকাশ। এছাড়া নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে।