শ্রমিকদের আগস্টে বেতন প্রদানেও প্রণোদনা ঋণ চায় বিজিএমইএ
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : করোনা পরিস্থিতিতে দেশের সর্ববৃহৎ রপ্তানিমুখী খাত পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের বেতন-ভাতা প্রদানে গত ২৫ মার্চ ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল সরকার। এই ঋণের সুদ বা সার্ভিস চার্জ ছিল মাত্র ২ শতাংশ। এ প্রণোদনা ঋণের আওতায় পোশাক খাতের শ্রমিকদের তিন মাসের (এপ্রিল, মে ও জুন) বেতন-ভাতা পরিশোধ করেছেন পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা।
কিন্তু দেশে ও বিশ্বব্যাপী করোনা পরিস্থিতির আশানুরূপ উন্নতি না-হওয়ায় এবং চলমান পরিস্থিতিতে পোশাক খাতের রপ্তানি আদেশ বাতিল, কমে যাওয়া ও পূর্বের রপ্তানি বিল পেতে দেরি হওয়ায় শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধে প্রণোদনা তহবিল থেকে ঋণ গ্রহণের সুযোগ আরও তিন মাস (জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর) বাড়ানোর জন্য গত জুনে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক বরাবর আবেদন করে বস্ত্রখাতের মালিকদের চারটি (বিজেএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএ ও বিটিটিএলএমইএ) সংগঠন। তাদের সে আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রণোদনা তহবিল থেকে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা প্রদানের মেয়াদ আরও এক মাস অর্থাৎ জুলাই পর্যন্ত বাড়িয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে বর্ধিত মেয়াদে প্রণোদনা ঋণের সুদের হার ছিল সাড়ে ৪ শতাংশ।
এ ধারাবাহিকতায় চলতি আগস্টেও প্রণোদনা ঋণের আওতায় শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধে অর্থমন্ত্রীর কাছে অতি সম্প্রতি পুনরায় অনুরোধ জানিয়েছে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন ‘বিজিএমইএ’।
এদিকে প্রণোদনা তহবিলের আওতায় বস্ত্র ও পোশাক খাতের শ্রমিকদের চার মাসের বেতন-ভাতা প্রদানে এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে বলে জানা যায়। ঘোষিত প্যাকেজ থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকা বেশি। এমতাবস্থায় চলতি আগস্টেও প্রণোদনা ঋণ দেয়া হলে আরও প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা লাগতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিজিএমইএর সাম্প্রতিক চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত ওপর মহল থেকে কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি এবং কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। ইতিপূর্বেও তারা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রণোদনা ঋণের আওতায় শ্রমিকদের বেতন-ভাতা প্রদানের আবেদন করেছিলেন। যা যৌক্তিক বলে মনে করেনি সরকার। কারণ একটি খাতকে এত সহায়তা দিলে অন্যান্য খাতগুলো সহায়তা থেকে বঞ্চিত হতে পারে।
অর্থমন্ত্রীর কাছে পাঠানো চিঠিতে ‘বিজিএমইএ’ বলেছে, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পে চরম বিপর্যয় নেমে এসেছে এবং এর প্রভাবে তৈরি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে গভীর সংকটময় মুহূর্ত অতিক্রম করছে এই খাত। প্রতিনিয়ত আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলো তাদের অর্ডার বাতিল বা স্থগিত করছে। এ পর্যন্ত ৩০০ কোটি ডলারেরও বেশি রপ্তানি আদেশ বাতিল বা স্থগিত করা হয়েছে। এ ছাড়া পূর্বের শিপমেন্টগুলোর বিপরীতে পেমেন্ট পেতে ৮-৯ মাস সময় লেগে যেতে পারে। ফলে তৈরি পোশাক খাত নিদারুণ আর্থিক সংকটের মধ্যে রয়েছে। এদিকে বর্তমানে সচল কারখানাগুলোর শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদানের জন্য রপ্তানিকারকদের ওপর প্রচন্ড চাপ রয়েছে। উদ্যোক্তাদের আর্থিক সংকটের কারণে সকল শ্রকিদের বেতন-ভাতা পরিশোধে অর্থের যোগান দেয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে তৈরি পোশাক শিল্পকে সহায়তার জন্য শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধে গত জুলাইয়ের ন্যায় অন্তত আগস্টেও সহজ শর্তে ও স্বল্প সুদে ঋণ প্রদান করা একান্ত আবশ্যক। রেজা