ই-ভ্যালির ‘ঈদ ধামাকা’ অফার বার্ষিক টার্নওভার, আয়-ব্যয়সহ ৯ তথ্য জানতে চেয়েছে প্রতিযোগিতা কমিশন
সাইদ রিপন : অনলাইন বিজনেজ প্লাটফর্মে ধামাকা অফার দিয়ে বাজারে অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরি করেছে বর্তমানে এ প্লাটফর্মে আলোচনায় থাকা ই-ভ্যালি। প্রথমে অনলাইন বিজনেজ প্লাটফর্মে ই-ভ্যালি সুনাম অর্জন করলেও গ্রাহকদের আস্থা অর্জনের পাশাপাশি প্রতারণার বিশাল ছক কষে কোম্পানিটি। সর্বশেষ ‘ঈদ ধামাকা’ অফারের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির প্রতারণার মাত্রা চরমে পৌঁছেছে। ই-ভ্যালি বিভিন্ন পণ্যে এতো বেশি ক্যাশব্যাক অফার দিয়ে কিভাবে টিকে আছে, সেটি সংশ্লিষ্টদের বোধগম্য হচ্ছে না। বিভিন্ন ব্যবসায়িরা বলেছে, ই-ভ্যালির কারণে বাজারে অসুস্থ পরিবেশ তৈরি হয়েছে। আর প্রতিযোগিতা কমিশন বলছে, ই-ভ্যালির অস্বাভাবিক অফার আমাদের নজরে এসেছে।
এ বিষয়ে প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপারসন মো. মফিজুল ইসলাম বলেন, বাজারে ব্যবসার প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব বিস্তার করে একচেটিয়া (মনোপলি) অবস্থার সৃষ্টি করা আইন বিরোধী। এজন্য গত মঙ্গলবার প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশকে (ই-ক্যাব) চিঠি দিয়েছি।
তিনি বলেন, দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য যে কেউ করতে পারে। আমরা ই-ভ্যালির কাছে জানতে চেয়েছি, কিভাবে তারা ৮০ থেকে ১৫০ শতাংশ ছাড় দিয়ে ব্যবসা করে। তাদের কোম্পানির বিস্তারিত বিবরণ, বার্ষিক টার্নওভার ও আয়-ব্যয়সহ ৯ ধরনের তথ্য চেয়েছি। আমাদের আইন রয়েছে। এই আইনের পরিপন্থী কেউ কোনো কাজ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এখনও আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করেনি, স্বপ্রণোদিত হয়ে এই চিঠি ইস্যু করা হয়েছে বলে জানান চেয়ারপারসন।
প্রতিযোগিতা কমিশন তাদের চিঠিতে বলেছে, ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ই-ভ্যালির ওয়েবসাইটে ‘ঈদ ধামাকা’ নামে একটি অফার সম্প্রতি নজরে আসে। এ অফারে বিভিন্ন পণ্যের জন্য বিভিন্ন ধরনের ক্যাশব্যাক অফার রয়েছে। সাধারণত এ ধরনের অফার ভোক্তাকে কমমূল্যে পণ্য কিনতে প্রলুব্ধ করে থাকে। কিন্তু এ অফারের শর্তাবলির ৪ নম্বর শর্তে বলা হয়েছে ‘ঈদ ধামাকা’ ক্যাম্পেইনে পার্শিয়াল পেমেন্ট অ্যালাউড না, ফুল পেমেন্ট করতে হবে। ক্যাশব্যাক ই-ভ্যালি ব্যালেন্সে যোগ হবে, পেমেন্ট করার ৩ দিন পর। এই ক্যাশব্যাক পরবর্তী সময়ে ই-ভ্যালিতে যে কোনো রেগুলার শপ থেকে কেনাকাটায় ব্যবহার করা যাবে। সেক্ষেত্রে প্রোডাক্টের ৬০ শতাংশ ব্যালান্স থেকে এবং ৪০ শতাংশ নিউ পেমেন্ট করতে হবে।
প্রতিযোগিতা কমিশন মনে করে, ই-ভ্যালির অফারের ৪ নম্বর শর্তের কারণে এটি প্রচলিত ডিসকাউন্ট/ক্যাশব্যাক/লয়ালটি রিবেট না হয়ে প্রতিযোগিতা আইন, ২০১২ এর ১৫ (৩)(ক) ধারা অনুযায়ী শর্তযুক্ত ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। উপযুক্ত শর্ত থেকে প্রতীয়মান হয় ই-ভ্যালির ক্যাশব্যাক অফারের কারণে বাজারে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব বিস্তার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বা বিস্তারের কারণ ঘটছে বা বাজারে মনোপলি অবস্থার সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় উল্লিখিত প্রেক্ষাপটে প্রতিযোগিতা আইন, ২০১২ এর ধারা ৮ এর উদ্দেশ্য পূরণকল্পে কিছু তথ্যাদি পত্র প্রাপ্তির ১৫ দিনের মধ্যে প্রদানের জন্য তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ই-ভ্যালির কাছে প্রতিযোগিতা কমিশন ই-ভ্যালি সম্পর্কিত তথ্যাদি (কোম্পানির বিস্তারিত বিবরণ), ই-ভ্যালির বাৎসরিক টার্নওভার ও আয়-ব্যয়ের তথ্য (বিগত ৩ বছরের অথবা প্রতিষ্ঠাকাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত), ই-ভ্যালির আওতাভুক্ত পণ্যসমূহের বিবরণ, ই-ভ্যালির পণ্যের ভৌগোলিক সীমানার বিবরণ (বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বা বহির্বিশ্বে (যদি থাকে), ই-ভ্যালির মাধ্যমে যেসব ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান ব্যবসা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে তাদের তালিকা ও ব্যবসায়িক লেনদেনের পদ্ধতি ও শর্তাবলি, ৮০-১৫০ শতাংশ ছাড় দিয়ে কীভাবে ব্যবসা করছে তার তথ্য, ই-ভ্যালির ঈদ ধামাকা অফারের সঙ্গে অন্যান্য অফারের পার্থক্য কী (বিস্তারিত বিবরণসহ), ঈদ ধামাকা অফার সময়ের আগের ৩ মাসের বিক্রি, আয় ও মুনাফার সঙ্গে অফার চলাকালীন বিক্রি, আয় ও মুনাফার তুলনামূলক বিবরণী।
এ বিষয়ে জানতে ই-ভ্যালির সিইও মোহাম্মদ রাসেলের সঙ্গে মঙ্গলবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে বুধবার তাকে ফোন করা হলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে।