অর্থ বিভাগের পর্যবেক্ষণ সময়মতো ও সুষ্ঠু বাজেট বাস্তবায়ন এখনো একটি প্রধান চ্যালেঞ্জ
সোহেল রহমান : বাজেট সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে অর্থবছরের শুরুতেই সুনির্দিষ্ট ও সময়াবদ্ধ বাজেট বাস্তবায়ন পরিকল্পনা গ্রহণ, যথাযথভাবে সেটি বাস্তবায়ন এবং বাজেট বাস্তবায়ন নিয়মিত পর্যবেক্ষণের জন্য প্রত্যেক মন্ত্রণালয়-বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে আগামী ৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তাদের বাজেট বাস্তবায়ন পরিকল্পনা অর্থ বিভাগে পাঠাতে বলা হয়েছে। এছাড়া প্রত্যেক প্রান্তিক (তিন মাস) শেষ হওয়ার পরবর্তী দুই সপ্তাহের মধ্যে বাজেট বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ প্রতিবেদন পাঠাতে হবে। পরিকল্পনা প্রণয়ন ও প্রতিবেদন তৈরিতে বিভিন্ন ফরমও তৈরি করে দিয়েছে অর্থ বিভাগ।
সোমবার অর্থ বিভাগ থেকে জারিকৃত ‘বাজেট বাস্তবায়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন অগ্রগতি পরিবীক্ষণ’ শীর্ষক এক পরিপত্রে এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
অর্থ বিভাগের পর্যক্ষেণে বলা হয়, বিগত বছরগুলোর অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়-বিভাগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বাজেট বাস্তবায়ন সাধারণত অর্থবছরের প্রথমদিকে ধীরগতিতে চলে। একইভাবে অর্থবছরের শুরুতে রাজস্ব আদায়ে ধীরগতি লক্ষ্য করা যায়। অন্যদিকে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা ছাড়া অন্যান্য সব আইটেমের বিপরীতে ব্যয়ের পরিমাণও কম থাকে। বিশেষ করে বিভিন্ন ইউটিলিটি বিল পরিশোধ, মেরামত সংরক্ষণ, নির্মাণ ও পূর্ত কাজ এবং মালামাল সংগ্রহের ক্ষেত্রে অর্থবছরের শেষদিকে পদক্ষেপ নেয়া হয়। ফলে অনেক ক্ষেত্রে সরকারি ব্যয়ের গুণগত মান নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। উপরন্তু বছরের শেষে এসে সরকারকে অপরিকল্পিত ঋণের দায়ভার গ্রহণ করতে হয়। ফলে বাজেট শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা যায় না।
এছাড়া সরকারের আয় ও ব্যয়ের মধ্যে ভারসাম্যহীনতার একটি প্রধান কারণ হচ্ছে রাজস্ব আহরণ ও সরকারি অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে সুষ্ঠু পরিকল্পনা না-থাকা। এমতাবস্থায় বাজেট সুষ্ঠুভাবে ও সময়মত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আগাম পরিকল্পনা গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে অপরিকল্পিত সরকারি ঋণ এড়ানো এবং সরকারের ঋণজনিত ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমিয়ে আনা সম্ভব।
পরিপত্রে বলা হয়, প্রতিবছর বাজেটে কিছু নতুন নীতি, কর্মসূচি, কার্যক্রম ঘোষণা করা হয়। গত তিন বছরে ঘোষিত কার্যক্রমগুলোর মধ্যে কিছু এখনো বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এছাড়া চলতি বাজেটেও কিছু কার্যক্রম ঘোষণা করা হয়েছে। এগুলো যথাসময়ে ও সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট ও সময়াবদ্ধ পরিকল্পনা গ্রহণ প্রয়োজন।
পরিপত্রে রাজস্ব আহরণকে গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন আইটেমের বিপরীতে ধার্যকৃত লক্ষ্যমাত্রার ভিত্তিতে কোয়ার্টারভিত্তিক লক্ষ্য নির্ধারণ করতে বলা হয়েছে।
ব্যয় পরিকল্পনা প্রসঙ্গে অর্থ বিভাগের পরিপত্রে বলা হয়, সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতাসহ অন্য সব আইটেমের বিপরীতে তিন মাস অন্তর সমানুপাতিক হারে ব্যয় নির্ধারণ করতে হবে। তবে এক্ষেত্রে চাকরিজীবীদের বর্ধিত (বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট) বেতনের বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে। এছাড়া প্রত্যেক মাসের তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে আগের মাসের সরকারের সব ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করতে হবে এবং এ লক্ষ্যে প্রত্যেক কোয়ার্টারে প্রয়োজনীয় অর্থের পরিমাণ প্রদর্শন করতে হবে। একইভাবে সরবরাহ ও সেবা খাতে অন্তর্ভুক্ত অন্যান্য আইটেমের ক্ষেত্রে বিগত বছরগুলোর ব্যয়ের প্যাটার্ন বিবেচনায় নিয়ে তিন মাসভিত্তিক বরাদ্দ নির্ধারণ করতে হবে। অর্থবছরের প্রথম কোয়ার্টার থেকেই সব ধরনের সরকারি কাজের মেরামত ও সংরক্ষণ কাজ শুরু করতে হবে। যাতে বিভিন্ন কোয়ার্টারে এসব কাজের বিল পরিশোধে ভারসাম্য বজায় থাকে। সম্পদ সংগ্রহ ও ক্রয়ের ক্ষেত্রে পরিচালনা ও উন্নয়ন উভয় বাজেটের আওতায় পণ্য ও সেবা ক্রয়ের একটি ‘সংগ্রহ পরিকল্পনা’ প্রস্তুত করতে হবে। এ পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রতি কোয়ার্টারে যে পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করা প্রয়োজন হবে, ব্যয় পরিকল্পনায় এর যথাযথ প্রতিফলন থাকতে হবে।
বৈদেশিক অনুদান ও ঋণ সংগ্রহের অর্থ সাধারণত অর্থবছরের চার কোয়ার্টারে চারটি সমান কিস্তিতে অবমুক্ত করা হয় বিধায় সে অনুযায়ী লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে বলা হয়েছে।