প্রথম পাতা • লিড ৪ • শেষ পাতা
সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকার রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে কাজের অগ্রগতি ৫০ ভাগ
শাহীন চৌধুরী : করোনা মহামারীর কারণে কিছুটা ছন্দপতন ঘটলেও বহুল আলোচিত রামপাল ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ আবার পুরোদমে শুরু হয়েছে। করোনার জন্য ভারতীয় শ্রমিকরা চলে যাওয়ায় বিগত পাঁচ মাসে কাজের কিছুটা ক্ষতি হয়। কর্মকর্তরা দাবি করেছেন, ইতিমধ্যেই এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৫০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।
বাংলাদেশ ভারতের যৌথ উদ্যোগে নির্মাণাধীন এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে শুরুতেই নানা বিতর্কের সৃষ্টি হয়। সুন্দরবনের কাছাকাছি বিদ্যুৎকেন্দ্রটির অবস্থান হওয়ায় দেশের পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো এই কেন্দ্র নির্মাণের বিরোধীতা শুরু করে। এক পর্যায়ে তাদের এই দাবির সাথে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও একাত্মতা ঘোষণা করে। ফলে অনেকটাই থেমে যায় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ।
এদিকে পরিবেশবাদীদের এই বিরোধীতার কারণে ইউনেস্কো সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্যের ঝুকিপূর্ণ তালিকায় স্থান দেয়। ফলে কিছুটা বিব্রবতকর অবস্থায় পড়ে সরকার। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নিয়ে বিরোধীতার এই অবস্থায়ও হাল ছাড়তে রাজি হয়নি সরকার। এক পর্যায়ে ইউনেস্কোর বৈঠকে সরকার নানা তথ্য উপাত্ত দিয়ে প্রমান করতে সক্ষম হয় যে, এই বিদ্যুৎকেন্দ্র ্র নির্মাণের কারনে সুন্দরবনের কোনই ক্ষতি হবে না। আর এরপর থেকেই বিরোধীরা কিছুটা হলেও থেমে যায়। একই সঙ্গে দ্রুত গতিতে শুরু হয় বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্মাণ কাজ। সূত্রমতে, রামপাল ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট ৬৬০ মেগাওয়াট আগামী ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পূর্ণ মাত্রায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে যাবার কথা রয়েছে। একই বছর আগস্টে দ্বিতীয় ইউনিটেরও উৎপাদনে যাবার কথা। এই প্রকল্পের জন্য মোট ব্যয় বরাদ্দ ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বর্তমান ডলার মূল্য অনুযায়ি যা বাংলাদেশী টাকায় দাঁড়ায় ১৩ হাজার ৪শ ৪০ কোটি টাকা। সূত্রমতে ৯শ ১৫ দশমিক ৫ একর জমির উপর নির্মানাধীন এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটির ল্যান্ড ভেভেলপমেন্ট, বাউন্ডারি দেয়াল নির্মাণসহ সব অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ ইতিপূর্বে শেষ হয়েছে। বর্তমানে প্রকল্পের ওয়াটার ট্রিটমেন্টপ্ল্যান্ট, ব্রয়লার নির্মাণও টারবাইন বসানোর কাজ চলছে। তবে বিদ্যুৎকেন্দ্রের স্থানে মাটির অবস্থানগত কারণে প্রকল্প ব্যয় আরও বাড়তে পারে কর্মকর্তারা মনে করছেন।
বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণের জন্য বাংলাদেশ ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিআইএফপিসিএল) নামে একটি কোম্পানি গঠন করা হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বা বিপিডিবি এবং ভারতের পক্ষ থেকে সেদেশের রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ কোম্পানি ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড বা এটিপিসি উভয় দেশের প্রতিনিধিত্ব করছে। সূত্রমতে, এই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দকৃত মূল টাকার ৩০ ভাগ ভারত ইকুইটি হিসেবে প্রদান করবে। বাকি ৭০ ভাগ ঋণ হিসেবে প্রদান করবে ভারতীয় এক্সিম ব্যাংক। দীর্ঘ মেয়াদে এই ঋণ প্রকল্পের আয় থেকে পরিশোধ করতে হবে। প্রকল্পটির মালিকানা বাংলাদেশের ৫০ ভাগ এবং ভারতের ৫০ ভাগ। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পুরো বিদ্যুৎই ব্যবহার করবে বাংলাদেশ।
বিদ্যুৎকেন্দ্রের উপ-প্রকল্প পরিচালক রেজাউল করিম আমাদের অর্থনীতিকে বলেন, করোনা মহামারীর কারণে কাজের গতি কিছুটা থেমে গেলেও আশা করছি নির্দিষ্ট সময়েই প্রকল্পটি উৎপাদনে যাবে। নানা প্রতিকুলতার মধ্যেও আমরা ইতিমধ্যেই ৫০ ভাগ কাগ শেষ করেছি। বিপিডিবি’র পরিচালক সাইফুল হাসান চৌধুরী বলেন, করোনায় শুধু রামপাল নয় সব প্রকল্পই কিছুটা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তারপরও রামপালের অগ্রগতি সন্তোষজনক।