বায়ু শক্তি থেকে ৩০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা থাকলেও অগ্রগতি কম
শাহীন চৌধুরী : দেশের জ¦ালানি সংকটের কারণে নবায়নযোগ্য জ¦ালানি দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। বর্তমানে মাত্র ২.৯৫ ভাগ বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য জ¦ালানি দিয়ে উৎপাদন হচ্ছে। চলতি বছরের মধ্যে এই পরিমাণ ১০ ভাগে দাঁড়ানোর কথা। এক গবেষণায় দেখা গেছে, বায়ু শক্তি থেকে দেশে ৩০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হলেও অগ্রগতি আশানুরূপ নয়।
সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এনআরইএল পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৩০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বায়ু শক্তি থেকে উৎপাদন করা সম্ভব। মার্কিন এই সংস্থার অতি দক্ষ বিশেষজ্ঞ এবং পরামর্শদাতারা এই তথ্য উপাত্ত খুঁজে পেয়েছেন। সুতরাং এই সম্ভাবনা উপেক্ষা করা উচিত নয় বলে এই খাতের বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। তাদের মতে, বায়ু শক্তির দিকে আমাদের প্রচেষ্টা ও দৃষ্টি বাড়াতে হবে।
বাংলাদেশে বায়ু ঋতু বা গ্রীষ্মকালীন ঋতু মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ধরা হয়। এটি বিদ্যুতের জন্য সামার-পিক-ডিমান্ড সিজনও। এটি একটি প্রাকৃতিক ঘটনা। এই সামার ঋতুর সময় এখানকার বায়ুর গতি খুব ভাল থাকে। কিন্তু শীতকালীন ঋতুর সময় বাতাসের গতি ভাল হয় না। যখন গড় বায়ুর গতি গণনা করা হয়, তখন বার্ষিক গতির মান নিচে আসে। অবশ্য এখানে সামার-পিক-ডিমান্ডের সময় বিদ্যুৎ চাহিদা হঠাৎ বৃদ্ধি পাওয়ায় চাহিদা মেটানো সম্ভব হয় না। এ কারণে আমাদের দেশ অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়ে। আর এজন্যই বায়ু শক্তিকে কাজে লাগিয়ে এই সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই ফেনীর সোনাগাজিতে ৩০ মেগাওয়াটের একটি বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করতে যাচ্ছে ভারতীয় কোম্পানি উইন্ড এনার্জি প্রাইভেট লিমিটেড। বাংলাদেশে বৃহৎ পরিসরে এই প্রথম কোনও উইন্ড মিল স্থাপিত হচ্ছে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে প্রকল্পটির কাজ চলছে। এ ছাড়া বিপিডিবি’র কক্সবাজারে ৫০ মেগাওয়াটের আরও একটি প্রকল্প রয়েছে। এর আগে মাত্র দুই জায়গায় ইউন্ড মিল করা হয়েছে। তবে তার পরিমাণ এক মেগাওয়াটের কম। ভারত তার উপকূলে ২৭ হাজার মেগাওয়াট উইন্ড মিল স্থাপন করেছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, ১১ দশমিক ১ সেন্ট প্রতি ইউনিট বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ দেখানো হয়েছে। এই দাম দেশের সৌর ও তেলচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদনের চেয়ে কম। তিনি বলেন, আরও ব্যাপকভাবে উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব হলে বায়ু বিদ্যুতের দাম আরও কমে আসতে পারে। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানায়, সাধারণত ২ দশমিক ৩ থেকে ২ দশমিক ৫ মিটার/ সেকেন্ড হলেই বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব সেক্ষেত্রে অবশ্য বিদ্যুতের দাম বেশি পড়ে। কিন্তু ৫ থেকে ৬ মিটার/সেকেন্ড বাতাসের গতিবেগ হলে বিদ্যুৎ উৎপাদন অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক করা সম্ভব। এখন আধুনিক প্রযুক্তি এসেছে তাই একটি টারবাইন দিয়ে ৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ৫ থেকে ৬ মিটার/সেকেন্ড বাতাসের গতিবেগ রয়েছে। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যায় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।এ প্রসঙ্গে বিপিডিবি’র পরিচালক সাইফুল হাসান চৌধুরী আমাদের অর্থনীতিকে বলেন, পিডিবি’র বাইরে আরটিসিএল ১০০ মেগাওয়াটের একটি বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এনডব্লিউপিজিসিএল পায়রায় ৫০ মেগাওয়াটের একটি বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। এ ছাড়া শ্রেডাও কয়েকটি প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে। পর্যায়ক্রমে আমরাও নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে ভালো অবস্থানে চলে যাব। প্রসঙ্গত, ভারতের নিউ অ্যান্ড রিনিউবেল এনার্জি মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইটে তাদের দেশে বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ ২ দশমিক ৪৪ রুপি বা তিন সেন্ট দেখানো হচ্ছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ২ দশমিক ৫২ টাকা। অর্থাৎ বাংলাদেশের দেশের গ্যাস চালিত বিদ্যুতের চেয়ে ভারতে বায়ু বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ কম। বায়ু বিদ্যুতে ২৪ ঘণ্টাই বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। বাংলাদেশের উপকূলে নভেম্বর থেকে জানুয়ারি বায়ুর প্রবাহ কম থাকলেও বাকি নয় মাস বাতাস থাকে। সুতরাং এই সময়কে কাজে লাগানো যায় বলে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। রেজা