সরকারি ২১ সংস্থার কাছে রাষ্ট্রায়ত্ত ৫ বাণিজ্যিক ব্যাংকের পাওনা ২৯ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা
সোহেল রহমান : রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বকেয়া ঋণের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে বিভিন্ন সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার কাছে। গত জুলাই শেষে এ ধরনের ২১টি সরকারি সংস্থার কাছে রাষ্ট্রায়ত্ত ৫ বাণিজ্যিক (সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী ও বেসিক) ব্যাংকের বকেয়া পাওনার স্থিতি দাঁড়িয়েছে ২৯,৩৮৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে নগদ ঋণের পরিমাণ ১৬ হাজার ৩৩২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। আর নন-ফান্ডেড বা এলসি, ব্যাংক গ্যারান্টির মাধ্যমে নেয়া বকেয়া ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ১৩ হাজার ৫০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ঋণগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে বার বার তাগাদা দেয়া সত্ত্বেও দীর্ঘদিন ধরে বকেয়া ঋণ পরিশোধ করছে না বলে ব্যাংকগুলোর অভিযোগ।
সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রেরিত বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে সোনালী ব্যাংকের পাওনা ১২ হাজার ৬০ কোটি ৮২ লাখ টাকা, জনতা ব্যাংকের পাওনা ২ হাজার ৩৪০ কোটি ৮৪ লাখ টাকা, অগ্রণী ব্যাংকের পাওনা ৫৪৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকা, রূপালী ব্যাংকের পাওনা ১ হাজার ৩৩১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা এবং বেসিক ব্যাংকের ৪০ কোটি ৯ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে।
জানা যায়, নগদ ১৬ হাজার ৩৩২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ঋণের মধ্যে শ্রেণিকৃত ঋণের পরিমাণ ৬৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংক ২৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা, জনতা ব্যাংক ৬ কোটি ১৩ লাখ টাকা, অগ্রণী ব্যাংক ৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকা, রূপালী ব্যাংক ২৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ও বেসিক ব্যাংক ২ কোটি টাকা শ্রেণীকরণ করেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, শিল্প খাতের ছয় প্রতিষ্ঠানের কাছে সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী ও বেসিক ব্যাংকের পাওনার পরিমাণ হচ্ছে ৯ হাজার ৭৮৬ কোটি ২৭ লাখ টাকা। এ ছয় প্রতিষ্ঠান হচ্ছেÑ ‘বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিল্স কর্পোরেশন’ (বিটিএমসি), ‘বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশন’ (বিজেএমসি), ‘বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন(বিএসইসি), ‘বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন’ (বিএসএফআইসি), ‘বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন’ (বিসিআইসি) এবং ‘বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশন’ (বিএফআইডিসি)। এর মধ্যে বিএসএফআইসি’র কাছে পাওনা ৬ হাজার ৬১০ কোটি ২৮ লাখ টাকা।
বাণিজ্যিক খাতের তিন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছেÑ ‘বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি), ‘বাংলাদেশ জুট করপোরেশন’ এবং ‘ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ’-এর (টিসিবি) কাছে ব্যাংকগুলো ২ হাজার ৬৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা পায়। এর মধ্যে বিপিসি’র কাছে ১ হাজার ৭৫৪ কোটি ৫ লাখ টাকা পায় ব্যাংকগুলো।
কৃষি ও মৎস্য খাতের ‘বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন’-এর কাছে সরকারি ৩টি ব্যাংক ২ হাজার ২৭৫ কোটি ৬২ লাখ টাকা পায়। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংক ১ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকা, জনতা ব্যাংক ৭৫৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ও রূপালী ব্যাংক ২১ কোটি ২৭ লাখ টাকা পায়।
গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ খাতের ৫ প্রতিষ্ঠানের কাছে ৫ ব্যাংকের পাওনা ৭ হাজার ৮৯১ কোটি টাকা। ঋণগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছেÑ ‘বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড’, ‘ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কর্তৃপক্ষ’, ‘চট্টগ্রাম ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড সুয়্যারেজ অথরিটি’, ‘ঢাকা ওয়াসা’ ও ‘বাংলাদেশ অয়েল গ্যাস অ্যান্ড মিনারেল কর্পোরেশন। এর মধ্যে শুধু ‘বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড’-এর কাছে পাওনা ৭ হাজার ৫৪৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা।
পরিবহন ও যোগাযোগ খাতের ছয় প্রতিষ্ঠানের কাছে ৫ ব্যাংকের বকেয়া পাওনার পরিমাণ ৫ হাজার ৬৭৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। এ ছয় প্রতিষ্ঠান হচ্ছেÑ ‘বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন’, ‘বাংলাদেশ ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন’, ‘চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ’, ‘মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ’, ‘বাংলাদেশ বিমান’ ও ‘বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন’। এর মধ্যে বিমানেরকাছে পাওনা ৫ হাজার ৪৭৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। বাকি ২০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে ৫ প্রতিষ্ঠান। সম্পাদনা : শোভন দত্ত