দেশি মাছ সংরক্ষণ ও শামুক বাড়াতে ২০২ কোটি টাকার প্রকল্প নিচ্ছে সরকার
সাইদ রিপন : মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ‘দেশীয় প্রজাতির মাছ এবং শামুক সংরক্ষণ ও উন্নয়ন’ প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২০২ কোটি ৪ লাখ টাকা। একনেকে অনুমোদনের পর প্রকল্পটি চলতি বছর থেকে ২০২৪ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে মৎস অধিদপ্তর। একনেক কার্যপত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
কার্যপত্রে দেখা গেছে, দেশে-বিদেশে শামুকের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। দেশে খাদ্য হিসেবে শামুক গ্রহণে অভ্যস্ত না থাকলেও অপ্রচলিত এ জলজ প্রাণিটি এদেশের উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর কাছে এটি খুব সুস্বাদু খাবার হিসেবেই বিবেচিত। পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শামুকের মাংস খাদ্য হিসেবে প্রচলিত। এছাড়া দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে চিংড়িঘেরে গলদা চিংড়ির খাদ্য হিসেবে এ শামুকের মাংসের কদরও রয়েছে বেশ। হাঁস ও চিংড়ি মাছের খাদ্য হিসেবে শামুক ব্যবহার করা হয়। প্রকল্পের আওতায় দেশে শামুক চাষ বৃদ্ধি করা হবে মূলত প্রকৃতি ভারসাম্য রাখার জন্য। পরে দেশে শামুকের বিস্তার বাড়লে চীন, ভারত, থাইল্যান্ড, নেপাল, জাপান , দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইনে শামুক রফতানি করা হবে। এসব দেশে শামুকের স্যুপ খুব সুস্বাদু খাবার হিসেবেই বিবেচিত। তবে দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে বর্তমানে শামুক রফতানি হয় না বলা চলে। ‘দেশীয় প্রজাতির মাছ এবং শামুক সংরক্ষণ ও উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় এমন উদ্যোগ। প্রকল্প এলাকায় অভ্যন্তরীণ জলাশয়ের মাছের উৎপাদন ও উৎপাদনশীল ৩ দশমিক ৮৩ মেট্রিক টন থেকে ১৬ শতাংশ বৃদ্ধি করে ৪ দশমিক ৪৬ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীতকরণ করা হবে। দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে চিংড়ি ঘেরগুলোতে দিনে গড়ে ৬৫ দশমিক ৫ কেজি হেক্টর প্রতি শামুকের মাংস ব্যবহৃত হয়ে থাকে। দেশে শামুকের ৪৫০টি প্রজাতি রয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রাপ্য দু‘টি প্রজাতি হলো আপেল শামুক ও পন্ড স্নেইল। সাধারণত শামুকের মাংস অংশ খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত। মৎস অধিদপ্তর সূত্র জানায়, দেশীয় প্রজতির মাছ এবং শামুক সংরক্ষণ উন্নয়নের লক্ষ্যে ৩৯২টি দেশীয় প্রজাতির মাছ চাষ প্রদর্শনী করা হবে। ১১০টি ধানক্ষেতে মাছ চাষ প্রদর্শনী ও ৩৯১টি পেনে মাছ চাষ প্রদর্শনী স্থাপন করা হবে। মৎস সেক্টর সংশ্লিষ্ট প্রকল্প এলাকার ১ লাখ ৮ হাজার ৮৪৭ জন সুফলভোগীর দক্ষতা উন্নয়ন করা হবে।
মৎস অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ঢাকা বিভাগের গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর জেলার সকল উপজেলা, ফরিদপুরের ২টি উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। বরিশাল, ঝালকাঠি, ফিরোজপুর ও বরগুনা জেলার সকল উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। খুলনা বিভাগের নড়াইল ও বাগেরহাট জেলার সকল উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পের আওতায় ১৬০টি মৎস অভয়াশ্রম স্থাপন, ২৪০টি মৎস অভয়াশ্রম, পুনঃসংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে।
৩৯২টি স্থানভেদে লাগসই প্রযুক্তির প্রদর্শনী স্থাপন করবে সরকার। ১৯৬টি বিল নার্সারী স্থাপন, দুটি বাঁওড়, ১১০টি বিলে দেশীয় প্রজাতি ও রুই মাছের পোনা অবমুক্তকরণ করা হবে। ১১০টি পর্যায়ক্রমে ধানক্ষেতে পেনে মাছ চাষ প্রদর্শনী করা হবে। ১০০টি উনিট খাঁচায় মাছ চাষ ও ১৫টি শামুকের প্রদর্শনী স্থাপন করবে সরকার।
অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনায় অপ্রচলিত এ জলজ প্রাণীর বাণিজ্যিক চাষের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। শামুক উৎপাদনে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করে তাদের জীবন-জীবিকার উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রকল্পটির মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ঝিনুক ও শামুকের পোনা উৎপাদন এবং চাষ পদ্ধতি উদ্ভাবন করা হবে। এছাড়া বাংলাদেশে ঝিনুক ও শামুকের পপুলেশন ডিনামিক্সের ওপর বেইজ-লাইন তৈরি, ঝিনুক ও শামুক সংরক্ষণের জন্য সচেতনতা সৃষ্টি এবং প্রযুক্তিভিত্তিক প্রশিক্ষণ প্রদানের উদ্যোগও রয়েছে প্রকল্পটিতে। সম্পাদনা : শোভন দত্ত