১২ বছরে ১৪ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা সুদ মওকুফ করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত ৮ ব্যাংক
সোহেল রহমান: ‘বিপদগ্রস্ত’ গ্রাহকের সুদ মওকুফ ব্যাংকিং ব্যবস্থার সাধারণ নীতি। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ নীতির অপ-ব্যবহারের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকের সুদ মওকুফ না করে প্রভাবশালী ও ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিদের মন্দ ঋণের সুদ বিভিন্ন সময়ে নানা কারণে ব্যাংক মওকুফ করে দিয়েছেÑ এমন কথা শোনা যায়।
সম্প্রতি জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রায়ত্ত ৮টি (সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক, বিডিবিএল, বিকেবি ও রাকাব) ব্যাংক কর্তৃক ঋণের সুদ মওকুফের তথ্য তুলে ধরেছেন অর্থমন্ত্রী। এতে দেখা যায়, ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে চলতি ২০২০ সালে ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১২ বছরে মওকুফকৃত মোট সুদের পরিমাণ ১৪ হাজার ৫৬০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।
এর মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি শুধু এ দুইমাসেই ৮টি ব্যাংক মোট সুদ মওকুফ করেছে ১ হাজার ৩০৭ কোটি ৭২ লাখ টাকা।
জানা যায়, এর আগে ২০০১ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো ৬৪০ টি হিসাবের বিপরীতে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার ঋণ ও সুদ মওকুফ করেছিলো। প্রাপ্ত তথ্যমতে, সবচেয়ে বেশি সুদ মওকুফ করা হয়েছে ২০১৯ সালে। আলোচ্য বছরে সুদ মওকুফের পরিমাণ হচ্ছে ২ হাজার ৮৩৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। আর সবচেয়ে কম সুদ মওকুফ করা হয়েছে ২০১৬ সালে। ওই বছর সুদ মওকুফের পরিমাণ ছিল ৪০৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।
বড় অঙ্কের টাকার মধ্যে ২০১১ সালে ২ হাজার ৩৫৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, ২০১০ সালে ২ হাজার ১০৫ কোটি ৬২ লাখ টাকা ও ২০১৮ সালে ১ হাজার ১৯৮ কোটি ২০ লাখ টাকার সুদ মওকুফ করা হয়েছে।
এছাড়া ২০১২ সালে ৯৯৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, ২০০৯ সালে ৭৭৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা, ২০১৭ সালে ৭৫১ কোটি ১ লাখ টাকা, ২০১৫ সালে ৭৪৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা, ২০১৪ সালে ৫৬২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ও ২০১৩ সালে ৫১৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকা সুদ মওকুফ করা হয়েছে।
অন্যদিকে ব্যাংকওয়ারি হিসেবে সুদ মওকুফের শীর্ষে রয়েছে অগ্রণী ব্যাংক। ১২ বছরে অগ্রণী ব্যাংক সুদ মওকুফ করেছে ৪ হাজার ২৯১ কোটি টাকা ৭০ লাখ টাকা। অন্যান্য ব্যাংকের মধ্যে জনতা ব্যাংক ৩ হাজার ৭৪৩ কোটি ৮৮ লাখ টাকা, সোনালী ব্যাংক ৩ হাজার ৩৮৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা, রূপালী ব্যাংক ১ হাজার ৩২৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ১ হাজার ৩০৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকা, বাংলাদেশ ডেভলেপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল) ৩২২ কোটি ৬১ লাখ টাকা, বেসিক ব্যাংক ১০১ কোটি ৯৮ লাখ টাকা ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ৭৬ কোটি ২৭ লাখ টাকা সুদ মওকুফ করেছে। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সূত্রমতে, গত বছর সরকার ঘোষিত বিশেষ ঋণ পুনঃতফসিল ও এককালীন এক্সিট সুবিধার আওতায় রাষ্ট্রায়ত্ত ৮টি ব্যাংক গত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত ১০ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকা ঋণ পুনঃতফসিলের বিপরীতে সুদ মওকুফ করেছে ৫ হাজার ৯৫২ কোটি টাকা। একই সময়ে ১ হাজার ৩২ কোটি টাকার এককালীন এক্সিট সুবিধার বিপরীতে সুদ মওকুফ করেছে ১ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকা।
প্রসঙ্গত: গত বছরের ১৬ মে ঋণ পুনঃতফসিল ও এককালীন এক্সিট সুবিধার বিশেষ নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মন্দমানে খেলাপি হওয়া ঋণ মাত্র ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট বা এককালীন জমা দিয়ে ১০ বছরের জন্য পুনঃতফসিলের সুযোগ দেয়া হয়। পুনঃতফসিলের আগে সুদ মওকুফ সুবিধা দেয়া যাবে বলে বলে ওই নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়। সম্পাদনা: সালেহ্ বিপ্লব