রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিরাপত্তায় সেনা ক্যাম্প স্থাপনে প্রতীকী মূল্যে হস্তান্তর হচ্ছে নর্থ বেঙ্গল পেপার মিলের ১০০.৫১ একর জমি
সোহেল রহমান : বাস্তবায়নাধীন ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে’র নিরাপত্তা ও ভৌত সুরক্ষায় পাবনার পাকশী-তে অবস্থিত রাষ্ট্রায়ত্ত ‘নর্থ বেঙ্গল পেপার মিল’-এর ১০০ দশমিক ৫১ একর জমি প্রতীকী মূল্যে ‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়’-এর অনুকূলে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যেই এ-সংক্রান্ত নির্দেশ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দপ্তরসমূহে চিঠি পাঠানো হয়েছে। শিল্প মন্ত্রণালয় ও ‘বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন’ (বিসিআইসি)-এর আওতাধীন মিলটির ১০০ দশমিক ৫১ একর জমির মূল্য ১ হাজার ৪০৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছিল শিল্প মন্ত্রণালয়। কিন্তু এ প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি ‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়’। এর বিপরীতে প্রতীকী মূল্য হিসেবে জমির দাম ১ হাজার ১ টাকা ধরা হয়েছে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে মিলটির দায়-দেনা রয়েছে প্রায় ১ হাজার ৫০ কোটি টাকা।
একাধিক সূত্রমতে, ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র’ প্রকল্পটি ‘ফাস্ট-ট্র্যাক’ভুক্ত একটি প্রকল্প এবং একই সঙ্গে স্পর্শকাতর এই প্রকল্পের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় মিলটির জমি প্রতীকী মূল্যে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিরাপত্তা ও ভৌত সুরক্ষায় মিলের এ জমিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি ফোর্স বেইস স্থাপন করা হবে।
এদিকে বিপুল দায়-দেনা সত্ত্বেও প্রতীকী মূল্যে মিলের জমি হস্তান্তরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগও সম্মতি দিয়েছে বলে জানা গেছে। এ-প্রসঙ্গে অর্থ বিভাগের অভিমত হচ্ছে, ‘নর্থ বেঙ্গল পেপার মিল’-এর ১০০ দশমিক ৫১ একর জমি ‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়’-এর অনুকূলে হস্তান্তরে কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। জমির দায়-দেনা নিষ্পত্তি করার দায়িত্ব ও দায়বদ্ধতা শিল্প মন্ত্রণালয়ের।
জানা যায়, ‘নর্থ বেঙ্গল পেপার মিল’-এর মোট দায়-দেনার পরিমাণ ১ হাজার ৪৯ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে মিলের পুঞ্জিভূত লোকসান ৪২৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা এবং অন্যান্য দীর্ঘ মেয়াদী ঋণ, মালামাল সরবরাহ বাবদ দায়, খরচের বিপরীতে দায়, অন্যান্য আর্থিক দায়, চলতি হিসাব দায় (কারখানা), বিসিআইসি চলতি হিসাব ঋণ ও বিসিআইসি’র ঋণ হিসাব বাবদ ৩৪৭ কোটি ১৯ লাখ টাকা, বৈদেশিক ঋণ-এডিপি (উন্নয়ন) ও এডিপি (পে-অফ) বাবদ সরকারের কাছ থেকে গৃহীত ঋণ ৬৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ও রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের কাছে অপরিশোধিত ৬ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে। এছাড়া বকেয়া বেতন-ভাতা বাবদ কারখানার শ্রমিকদের পাওনা প্রায় ২০০ কোটি টাকা।
জানা যায়, বিপুল পরিমাণ এ দায়-দেনা মওকুফ বা নিষ্পত্তিতে পাঁচ দফা সুপারিশ করেছে অর্থ বিভাগ। এর মধ্যে মিলের পুঞ্জিভূত লোকসান ৪২৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা অবলোপন এবং অন্যান্য দেনা ও দায় বাবদ ৩৪৭ কোটি ১৯ লাখ টাকা মওকুফের জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়/বিসিআইসি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে।
সরকারের কাছ থেকে গৃহীত অবশিষ্ট ৬৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ঋণ মওকুফ এবং সোনালী ব্যাংকের পাওনা ৬ কোটি টাকার বিষয়টি অর্থ বিভাগ বিবেচনা করবে। তবে সোনালী ব্যাংকের দাবিকৃত সুদ মওকুফের বিষয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়কে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে সুনির্দষ্ট প্রস্তাব দিতে হবে।
কারখানার শ্রমিকদের প্রায় ২০০ কোটি টাকা পাওনার বিষয়ে অর্থ বিভাগ বলেছে, এক্ষেত্রে আদালতের রায়ের আলোকে প্রকৃত পাওনা হিসাব কেইস-টু-কেইস ভিত্তিতে অর্থ বিভাগ পরিশোধ করবে। সম্পাদনা : শোভন দত্ত