ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ১১ দিন আগেই পাঁচ দেশ থেকে আমদানির উদ্যোগ নেন ব্যবসায়ীরা
মো. আখতারুজ্জামান: ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করায় দাম বাড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা। যদিও সরকার বলছে, দেশে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ মজুদ রয়েছে। বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির প্রক্রিয়া শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। দাম বৃদ্ধি ঠেকাতে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার।
হিলি স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ভারতে আটকে থাকা বাংলাদেশে ব্যবসায়ীদের এলসি করা পেঁয়াজভর্তি ট্রাক বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে আসার অনুমতি দিয়েছে ভারত। তবে নতুন করে পেঁয়াজের এলসি বন্ধই রয়েছে।
ভারত থেকে আমদানি বন্ধের একদিনের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারগুলোতে পেঁয়াজের দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে এখন প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। অন্যদিকে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৬৫ টাকা করে কেজিতে। সোমবার বাজারটিতে পেঁয়াজের দর ছিল ৪৫ টাকা। রপ্তানি বন্ধের খবরে একদিনেই কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা। কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, একদিনে এতো দাম বৃদ্ধি কাম্য নয়। এক শ্রেণির মুনাফাখোর সংকট তৈরি করে পণ্যে দাম বৃদ্ধি করে থাকে। কৃত্রিম সংকট তৈরি এবারই প্রথম নয়। সরকারের উচিৎ হবে ব্যবসায়ীরা যাতে মজুদ করতে না পারে, সেই ব্যবস্থা নেয়া। প্রয়োজনে মজুদদারের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া। সোমবার হঠাৎ পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় ভারত। বিষয়টি আগে থেকে আঁচ করতে পেরে ১১ দিন আগে অন্য দেশ থেকে আমদানির উদ্যোগ নেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা। ৩ সেপ্টেম্বর থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিতে শুরু করেন তারা।
চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বুলবুল জানান, চলতি বছরের জুন, জুলাই ও আগস্ট পর্যন্ত চীন ও মিয়ানমার থেকে ১ হাজার টন পেঁয়াজ এসেছে। তবে সেপ্টেম্বরে পেঁয়াজ আসেনি। সেপ্টেম্বর মাসে গতকাল পর্যন্ত ৫৪টি এলসি ইস্যু করা হয়েছে। এতে ১৯ হাজার ৮৪৩ টন পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে। গতকাল একদিনে পাকিস্তান, তুরস্ক, মিয়ানমার, মিশর ও চীন থেকে ১০ হাজার ৭৪২ টন পেঁয়াজের এলসি ইস্যু করা হয়েছে। গোলাম রহমান বলেন, কিছু কিছু ভোক্তাদের চাহিদার চেয়ে বেশি পণ্য ক্রয় করে থাকে; যা বাজারে বিরুপ প্রভাব সৃষ্টি করে। এমন মানুষিকতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি বলেন, গত বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরে গিয়ে বলেন, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করলে আগেই যেন বাংলাদেশকে জানায়। কিন্তু তারা সেই অনুরোধ রাখেনি। দেশিয়ভাবে পেঁয়াজ উৎপাদন বাড়াতে সরকারকে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করেন তিনি। এদিকে পেঁয়াজ নিয়ে যাতে কোনো অরাজকতা তৈরি না হয়, সে জন্য মঙ্গলবার সরকার বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে। এগুলো হলো দেশের আট বিভাগীয় কমিশনারসহ ৬৪ জেলা প্রশাসকের কাছে বাজার মনিটরিংয়ের চিঠি; ফরিদপুর, পাবনা, রাজবাড়ী ও নাটোর- এই চার জেলার জেলা প্রশাসকদের পেঁয়াজের উৎপাদন, মজুত, সরবরাহ এবং মূল্য পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখার ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা পালনে বাণিজ্য সচিব ডিও লেটার দিয়েছেন। সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে আমদানিকারকদের এলসি খোলাসহ সার্বিক সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বরাবর চিঠি পাঠানো হয়েছে। সম্পাদনা: সিরাজুল ইসলাম