বিক্রি কমলেও খুচরা বাজারে কমেনি পেঁয়াজের দাম, পাইকারিতে কিছুটা স্বস্তি
এসআই রাজ : সোমবার ভারত হাঠৎ করে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিলে রাতারাতি এ পণ্যটির দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে যায়। ফলে আরও দাম বাড়ার আতঙ্কে মঙ্গল ও বুধবার একশ্রেণির ক্রেতা বাড়তি পেঁয়াজ কিনে মজুত করেন। এতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বাজারগুলোতে পেঁয়াজ কেনার এক ধরনের হিড়িক পড়ে যায়।
দুইদিন বাড়তি কেনার পর বৃহস্পতিবার পেঁয়াজ কেনার পরিমাণ কিছুটা কমেছে। খুচরা বাজারে দাম না কমলেও একযোগে অভিযান, অভ্যন্তরীণ মজুদ আর বহাল থাকা ঋণপত্রের পেঁয়াজ আসবে, এমন ঘোষণায় পাইকারি বাজারে কেজিতে সর্বোচ্চ ১০ টাকা কমেছে সব ধরনের পেঁয়াজের দাম। পাইকারি পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৭ থেকে ৮০ টাকা দরে।
পাইকাররা বলছেন, বাজারে নতুন করে পেঁয়াজ আসায় কেজিপ্রতি ৫-১০ টাকা পর্যন্ত দাম কমেছে, তবে খুচরার বিষয়ে তথ্য জানা নেই। ভারতে আটকে থাকা পেঁয়াজের ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করলে এবং অন্যান্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হলে দাম আরো কমে আসবে বলেও জানান পাইকাররা। অন্যদিকে খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, গত বছর ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করায় দেশের বাজারে পেঁয়াজের কেজি ২৫০-৩০০ টাকা হয়েছিল। এ কারণে মূলত গত দুদিনেই ভোক্তাদের বড় অংশ পেঁয়াজ কিনে মজুত করেছেন। তবে বৃহস্পতিবার পেঁয়াজের বিক্রি কমেছে। বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
কারওয়ান বাজারের আড়তে পাইকারি দেশি পেঁয়াজ প্রতিপাল্লা (পাঁচ কেজি) বিক্রি হচ্ছে ৪৩০ টাকা (৮৬ টাকা কেজি দরে)। দেশি (কিং) এক পাল্লা (পাঁচ কেজি) বিক্রি হচ্ছে ৪শ টাকা (৮০ টাকা কেজি দরে)। আর আমদানি করা (এলসি) পেঁয়াজ প্রতিপাল্লা ৩১০ টাকা (৬২ টাকা কেজি দরে)।
এদিন কাঠালবাগান, মগবাজার চারুলতা মার্কেট, মালিবাগ ও খিলগাঁও বাজার খুচরা প্রতিকেজি দেশি (কিং) পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯৫-১০০, দেশি পেঁয়াজ ১০০-১১০, আর আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ টাকার মধ্যে। এদিকে পেঁয়াজের দাম নিয়ে অন্তোষ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা। হামিদ মিয়া নামে কারওয়ান বাজারের এক ক্রেতা বলেন, আজ নতুন এলসি পেঁয়াজ বাজারে এসেছে কিন্তু সে তুলনায় ব্যবসায়ীরা দাম কমাচ্ছে না।
কারওয়ান বাজারের বিক্রেতা আশরাফ আলী বলেন, একদিনের ব্যবধানে কেজিতে পাঁচ থেকে দশ টাকা কমেছে। এলসির পেঁয়াজ এসেছে দেখেই দাম কমেছে, বাজারে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ এলে দাম আরও কমবে। একই কথা বলেছেন হাজীপাড়া বৌ-বাজারের ব্যবসায়ী মো. জাহাঙ্গীর। তিনি বলেন, শ্যামবাজারে গিয়ে শুনছি ভারতে পেঁয়াজ বোঝাই অনেক ট্রাক আটকে আছে। টেলিভিশনেও এমন খবর শুনছি। এসব পেঁয়াজ বাংলাদেশে আসার অনুমতি দেয়ার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নাকি অনুরোধ করা হয়েছে। আটকে থাকা পেঁয়াজের ট্রাক বাংলাদেশে আসলে দাম কমবে বলে শ্যামবাজারের ব্যবসায়ীরা বলাবলি করছেন। তবে ভিন্ন কথা বললেন রামপুরার ব্যবসায়ী আরিফুল ইসলাম। তিনি জানান, পেঁয়াজের দাম আগামী দু-তিন মাস কমার সম্ভাবনা কম। ভারত পেঁয়াজ দিলে দাম কিছুটা স্থির থাকতে পারে, কিন্তু দাম কমবে বলে মনে হয় না। ভারত পেঁয়াজ না দিলে দাম আরও বেড়ে যাবে। এবার হয়তো গত বছরের মতো হবে না। কারণ পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে এবার আগেভাগেই অভিযান শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন বাজারে অভিযান চালানো হয়েছে। এই অভিযান না চালালে পেঁয়াজের কেজি দেড়শ টাকা হয়ে যেত। এদিকে পেঁয়াজের দাম বাড়ায় সরকারিভাবে টিসিবির ট্রাকসেলে ৩০ টাকা কেজিদরে পেঁয়াজ বিক্রি অব্যাহত রয়েছে। বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সরকারিভাবে বন্ধের দিন ছাড়া প্রতিদিন এ বিক্রি অব্যাহত থাকবে। সম্পাদনা : শোভন দত্ত