অবৈধ বাড়িঘর সরানো ও ভূমি অধিগ্রহণে বাড়তি অর্থ চাইছে ঠিকাদার
সাইদ রিপন : ২০১৬ সালে রুরাল পাওয়ার কোম্পানীর (আরপিসিএল) কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘পটুয়াখালী ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ, ভূমি উদয়ন এবং পূর্নবাসন’ শীর্ষক প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। এতে ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৮৭০ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের জুন নাগাদ এর কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কাজে গতি না থাকায় দুইবার প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়। পরে প্রকল্পে কাজে কিছুটা সংশোধনী এনে এর ব্যয় কিছুটা কমিয়ে চলতি বছরের ডিসেম্বর নাগাদ বাস্তবায়ন করার লক্ষ্য ধরা হয়। কিন্তু ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত জটিলতায় প্রকল্পের কাজ এবারও শেষ হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রকল্পের আওতায় ৯১৫ দশমিক ৭৪ একর ভূমি অধিগ্রহণ, অধিগৃহীত ভূমির আংশিক উন্নয়ন, বাঁধ নির্মাণ ও ভূমি সুরক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করার কথা রয়েছে। গত ৩১ আগষ্ট এ প্রকল্পটির ওপর স্টিয়ারিং কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন আরপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুস সবুর। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সভার কার্যপত্রে দেখা গেছে, এ প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। ২০১৬ সালে প্রকল্পের কাজ শুরু আগে এই অঞ্চলে ঘরবাড়ি ছিল ২৯৭টি। এখন অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আশায় স্থানীয় জনগণ প্রকল্প এলাকায় রাতারাতি ১ হাজার ৪০২ টি নতুন ঘর-বাড়ী নির্মাণ করেছে। এখন অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণের জন্য তারা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা আরপিসিএল উপর নানা ধরণের চাপ সৃষ্টি করছে। অবৈধ বাড়ি-ঘর সরানো ও ভূমি অধিগ্রহণে বাড়তি সময়ের কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বাড়তি অর্থ দাবি করছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে স্টিয়ারিং কমিটির (পিআইসি) ৯ম সভায় এ বিষয়টি নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উন্নয়ন প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণে ক্ষতিপূরণ বাবদ সরকার বাজার মূল্যের দেড়গুণ পরিশোধ করতো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ক্ষতিপূরণ তিনগুণ পরিশোধ করার নির্দেশ দেন। এখন সে অনুসারেই প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। কিন্তু মানুষের লোভের কারনে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিপত্তিও ঘটছে। এতে প্রকল্পের কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। আলোচ্য প্রকল্পের আওতায় ভূমি উন্নয়ন, বাধ নির্মাণ ও ভূমি সুরক্ষা কাজ এবং বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ কাজ ব্যহত হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রকল্পের কাজ শুরু করার আগেই জেলা প্রশাসকের সহায়তায় ওই অঞ্চলের ঘর-বাড়ির হিসাব (কাউনডাউন) করেছিলাম। কিন্তু কিছু লোভি মানুষ ওই অঞ্চল বিদ্যুৎ প্রকল্প হবে খবর শুনে পানির উপরে টিনের ঘর বসায় কিছু লোভি মানুষ। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ২৯৭টি পরিবারের জন্য আমরা একটি পূর্ণবাসন কেন্দ্র তৈরি করেছি। যেখানে ১০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট দিয়েছি। এছাড়া ওখানে সমজিদ, কমিউনিটি সেন্টার, সাইক্লোন শেল্টার নির্মান করেছি। এর বাইরে তাদের তিনগুণ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পরে উঠানো ঘরবাড়িতে কোন ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না। মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু এখন শুধু ১ বছর মেয়াদ বাড়ানো হবে, ব্যয় বাড়বে না বলে জানান তিনি।
সভায় বলা হয়, প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্থাদের ক্ষতিপূরণ বাবদ বাজার মূল্যের দেড়গুণ দেওয়া হবে নাকি ৩ গুণ হবে সেই সিদ্ধান্ত নিতে প্রায় দেড় বছর সময় পার করা হয়। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে আরপিসিএল এর নিজস্ব তহবিল হতে প্রণোদনার অর্থ হিসেবে প্রায় ৬০ কোটি টাকা ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিকদের প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু নতুন নতুন ঘরবাড়ি উঠানোর কারনে সে টাকা দিয়ে ক্ষতিপূরণ সম্পন্ন করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় প্রকল্প এলাকায় নির্মিত অবৈধ ঘরের বিষয়টি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, জেলা প্রশাসন, পুলিশ, আরপিসিএল প্রশাসন ও ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে আলোচনা করে দ্রুত সমাধান করার পরামর্শ দিয়েছেন আবদুস সবুর। সভায় আবদুস সবুর বলেন, জেলা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করে অধিগ্রহণ-মূল্য পরিশোধকৃত জমির মালিকদের তালিকা দ্রুত সংগ্রহের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রাপ্ত তালিকা ও দলিলাদি যাচাই-বাছাই করে ক্ষতিগ্রস্তদের আরপিসিএল প্রণোদনার অর্থ দ্রুত পরিশোধ করা হবে। সম্পাদনা : শোভন দত্ত