‘পাত্র-পাত্রী চাই’ বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণাকারী সাদিয়া গ্রেপ্তার
সুজন কৈরী : দেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় বয়স্ক পাত্র চেয়ে বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেয়া একজন নারী প্রতারককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গ্রেপ্তার নারী হলেন- সাদিয়া জান্নাত ওরফে জান্নাতুল ফেরদৌস (৩৮)। বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর গুলশান-২ নম্বর এলাকা থেকে সাদিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। শুক্রবার তাকে আদালতে সোপর্দ করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে সিআইডি। শুনানি শেষে আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
সিআইড বলছে, ‘কানাডার সিটিজেন ডিভোর্সি ও সন্তানহীন নারীর জন্য পাত্র চাই’, সংবাদপত্রে এমন চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে ৩০ কোটিরও বেশি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন সাদিয়া। শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি পাস হলেও তার কথাবার্তা ও চলনে কানাডা প্রবাসী ভেবে ভুল করেছেন অনেকে। তার ফাঁদে পড়ে এখন পর্যন্ত শতাধিক ব্যক্তি কোটি কোটি টাকা খুইয়েছেন। শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ রেজাউল হায়দার বলেন, একজন ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে সাদিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার কাছ থেকে ৯জন ভুক্তভোগীর পাসপোর্ট, ১০টি মোবাইল ফোনসেট, ৩টি মেমরি কার্ড, ৭টি সিল, অসংখ্য সিম, ২ সেপ্টেম্বর ব্যাংক এশিয়ায় জমা দেয়া ৪৮ লাখ টাকার একটি স্লীপ ও প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাত করা টাকার হিসাব বই উদ্ধার করা হয়েছে।
সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, চলতি বছরের ৯ জুলাই একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়া হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়- প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, কানাডার সিটিজেন, ডিভোর্সি, সন্তানহীন, বয়স ৩৭, ৫.৩ ফুট লম্বা, নামাজি পাত্রীর জন্য ব্যবসার দায়িত্ব নিতে আগ্রহী বয়স্ক পাত্র চাই। যোগাযোগের জন্য ঠিকানা- বারিধারা। এরপর একটি মোবাইল নম্বর দেয়া হয়। বিজ্ঞাপন দেখে একজন ভুক্তভোগী সাদিয়ার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেন। এক পর্যায়ে গত ১২ জুলাই গুলশান-১ নম্বরের থাই সিগনেচার রেস্টুরেন্টে দেখা করেন। সাদিয়া ভুক্তভোগীকে জানান, কানাডায় তার ২০০ কোটি টাকার ব্যবসা আছে। বিয়ের পর তাকে কানাডায় নিয়ে যাবেন। সাদিয়ার কথায় বিশ্বাস করে ভুক্তভোগী প্রাথমিকভাবে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও পাসপোর্ট দেন। পরে প্রতারক সাদিয়া ভুক্তভোগীকে বলেন, ‘কানাডায় প্রচ- শীত। তুমি থাকতে পারবা না, আমার টাকাগুলো তোমার নামে দেশে নিয়ে আসি। তুমি ওই টাকা দিয় ব্যবসা করবা’। এমন প্রলোভন দেখিয়ে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে ডিএইচএল এর মাধ্যমে ওই টাকা ফেরত আনতে বিভিন্ন তারিখে ট্যাক্স, ভ্যাট ও ডিএইচএল’র বিল বাবদ মোট ১ কোটি ৭৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে ফোন বন্ধ করে দেন প্রতারক সাদিয়া। এরপর উপায়ান্ত না পেয়ে ভুক্তভোগী সিআইডির সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
শেখ রেজাউল হায়দার বলেন, এভাবেই সাদিয়া ২০১০ সাল থেকে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছিলেন। সাদিয়া তার প্রথম স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে মিলে এই প্রতারণা শুরু করেন। সেআইডি তদন্ত করে ঢাকা ও এর আশপাশে তার ২০ কোটি টাকার জমি ও অন্যান্য সম্পত্তির খোঁজ পেয়েছে। এছাড়া তার কাছ থেকে জব্দ করা হিসাব খাতায় পর্যালোচনা করে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ কোটি টাকার হিসাব পাওয়া গেছে। তার চারটি ব্যাংক হিসাব রয়েছে। যেখানে ১ কোটি টাকা পাওয়া গেছে। সাদিয়ার নিজ হাতে লেখা ২০১৫ ও ১৬ সালের একটি হিসাবের খাতা পাওয়া গেছে। সেখানে কোন ভুক্তভোগীর কাছ থেকে কতবারে কত টাকা নিয়েছেন, তার বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার পর সাদিয়া মোবাইল নম্বর বন্ধ করে দিতেন। এই চক্রের আরও সদস্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
এদিকে শুক্রবার সাদিয়া জান্নাতকে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর ঢাকা মহানগর হাকিম মাসুদ-উর-রহমান। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির ইন্সপেক্টর শরীফুল ইসলাম শরীফ আসামিকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। আসামিপক্ষে অ্যাডভোকেট জুলহাস উদ্দিন আহম্মেদ সবুজ রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। বাদীপক্ষের আইনজীবী তারিকুল ইসলাম এর বিরোধীতা করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে সাদিয়া জান্নাতের দুই দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন। সম্পাদনা : শোভন দত্ত