রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন সংস্থার উদ্বৃত্ত অর্থ চলতি অর্থবছরে ১৭ হাজার কোটি টাকা নেয়ার পরিকল্পনা
সোহেল রহমান : রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন সংস্থার উদ্বৃত্ত অর্থ থেকে চলতি অর্থবছরে ১৭ হাজার কোটি টাকা নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। বাজেট বাস্তবায়ন বিশেষত উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে এ অর্থ ব্যয় করা হবে। চিহ্নিত প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে খুব শিগগিরই চাহিদাপত্র পাঠাবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। গত অর্থবছরে এ খাত থেকে ১৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকা নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
সরকারি হিসাবে স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফাইন্যান্সিয়াল কর্পোরেশনসহ মোট ৬৮টি স্বশাসিত সংস্থার ২ লাখ ১২ হাজার ১০০ কোটি টাকা ‘অলস’ হিসেবে বিভিন্ন ব্যাংকে জমা রয়েছে।
জানা যায়, এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উদ্বৃত্ত অর্থ রয়েছে ২৫টি প্রতিষ্ঠানের। এর মধ্যে ‘বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন’ (বিপিসি)-এর ২১ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা, পেট্রোবাংলা’র ১৮ হাজার ২০৪ কোটি টাকা, ‘ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি’র ১৩ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকা, ‘চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ’-এর ৯ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা, ‘রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ (রাজউক)-এর ৪ হাজার ৩০ কোটি টাকা উদ্বৃত্ত রয়েছে। গত অর্থবছরে এসব সংস্থার কাছ থেকে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা নেয়া হয়েছে।
অর্থ বিভাগর সূত্রমতে, গত অর্থবছরে বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে ১৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে এর পরিমাণ প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা হবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কাছে শিগগিরই একটি চাহিদাপত্র পাঠানো হবে।
রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন স্ব-শাসিত সংস্থার উদ্বৃত্ত অর্থ ব্যবহারে গত বছর এ-সংক্রান্ত একটি আইন প্রণয়ন করেছে সরকার। ‘স্বায়ত্বশাসিত, আধা-স্বায়ত্বশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফাইন্যানশিয়াল কর্পোরেশনসহ স্ব-শাসিত সংস্থাসমূহের তহবিলের উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা আইন, ২০২০’ এর উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘সময়াবদ্ধ উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণ এবং তাহাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে একটি উন্নত দেশ গড়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে স্বায়ত্বশাসিত, আধা-স্বায়ত্বশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফাইন্যানশিয়াল কর্পোরেশনসহ স্ব-শাসিত সংস্থাসমূহের তহবিলে জমাকৃত উদ্বৃত্ত অর্থের সুষ্ঠু ব্যবহারের নিমিত্ত বিধান প্রণয়নকল্পে আইনটি প্রণয়ন করা হয়েছে।’ আইনে বলা হয়েছে, ‘উদ্বৃত্ত অর্থ’-এর অর্থ তপশিলভুক্ত কোনো সংস্থার বাৎসরিক পরিচালনা ব্যয়, নিজস্ব অর্থায়নে সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে গৃহীত উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বাৎসরিক ব্যয় এবং বাৎসরিক পরিচালনা ব্যয়ের ২৫ শতাংশের অতিরিক্ত অর্থ।
আইন অনুযায়ী, তপশিলভুক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহ আপৎকালীন ব্যয় নির্বাহের জন্য যুক্তিসঙ্গত পরিমাণ অর্থ যাহা তাদের বাৎসরিক পরিচালন ব্যয়ের সর্ব্বোচ্চ ২৫ শতাংশের সম-পরিমাণ অর্থ অতিরিক্ত হিসাবে পৃথকভাবে সংরক্ষণ করতে পারবে। প্রণীত আইনে ৬১টি সংস্থাকে তপশিলভুক্ত করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছেÑজাতীয় কারিকুলাম এবং টেক্সটবুক বোর্ড; বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড; বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড; উচ্চ মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা; উচ্চ মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, কুমিল্লা; উচ্চ মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, যশোর; উচ্চ মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, রাজশাহী; উচ্চ মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, সিলেট; উচ্চ মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, চট্টগ্রাম; উচ্চ মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, বরিশাল; উচ্চ মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, দিনাজপুর; জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়, গাজীপুর; বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ^বিদ্যালয়; বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমী; পল্লী উন্নয়ন একাডেমী, বগুড়া; বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট; বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ; বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট; বাংলাদেশ মান নিয়ন্ত্রণ ও পরীক্ষা ইনস্টিটিউট; বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ; বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল; জাতীয় স্থানীয় সরকার ইনস্টিটিউট; বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন; বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন; পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড; রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ; চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ; খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ; রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ; বাংলাশে সেরিকালচার বোর্ড; রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো; বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ; বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ; বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস কর্পোরেশন; বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন এবং সহযোগী প্রতিষ্ঠান; বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ এবং সহযোগী প্রতিষ্ঠান; বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল কর্পোরেশন এবং সহযোগী প্রতিষ্ঠান; বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন; পেট্রোবাংলা; বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন; ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ; বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশন; বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন; বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশন; বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন; বাংলাদেশ চা বোর্ড; বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন; বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্পোরেশন; বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ; চট্টগ্রাম ওয়াসা; ঢাকা ওয়াসা; বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড; পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড; চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ; মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ; বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষ; বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন; বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড; বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন ও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ রেগুলেটরি কমিশন। রেজা