এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে দলবদ্ধ ধর্ষণ : প্রধান আসামিসহ গ্রেপ্তার ২
আব্দুল আহাদ : সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার প্রধান আসামি সাইফুর রহমান এবং ৪ নম্বর আসামি অর্জুন লস্করকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রোববার ভোর ও সকালে পৃথক অভিযান চালিয়ে সুনামগঞ্জের ছাতক থেকে সাইফুল এবং হবিগঞ্জের মাধবপুরের মনতলা থেকে অর্জুনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (গণমাধ্যম) জ্যোতির্ময় সরকার বলেন, ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামী সাইফুর রহমানকে রোববার সকাল ৭টায় ছাতকের খেয়াঘাট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে ছাতক থানা পুলিশ। আর সিলেট জেলা ডিবি পুলিশ হবিগঞ্জের মাধবপুরের মনতলা এলাকা থেকে ভোরে অর্জুন লস্করকে গ্রেপ্তার করে মহানগর পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। এ নিয়ে ধর্ষণ মামলার ছয় আসামির মধ্যে দুই জন গ্রেপ্তার হলো। এখনও পলাতক রয়েছে মামলার অপর আসামিরা। তারা যেন কোনোভাবে পালিয়ে যেতে না পারে, সেজন্য সিলেটের সীমান্ত এলাকায় কড়া নজরদারি জারি করেছে পুরিশ। সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, সহযোগীসহ বাকি সবাইকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। ধর্ষণে অপর অভিযুক্তদের পালানো ঠেকাতে সিলেট বিভাগের সীমান্ত এলাকায় কড়া নজরদারি জারি করা হয়েছে।
এদিকে রোববার দুপুরে সিলেটের মহানগর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত- ৩ এর বিচারক শারমিন খানম নীলার এজলাসে জবানবন্দি দিয়েছেন ভুক্তভোগী গৃহবধূ। এদিন বেলা সোয়া ২টায় পর্যন্ত জবানবন্দি দেন নির্যাতনের শিকার ওই তরুণী। এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহপরাণ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য ওই গৃহবধূকে এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসি সেন্টার থেকে আদালতে নিয়ে যান। ২২ ধারায় আদালতে জবানবন্দি রেকর্ডের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পুলিশ কর্মকর্তা ইন্দ্রনীল। এদিকে ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি ছাত্রলীগকর্মী সাইফুর রহমান গ্রেপ্তার এড়াতে দাড়ি কামিয়ে ছদ্মবেশ ধরেছিলেন। তার মুখভর্তি দেড় ইঞ্চি পরিমাণ লম্বা দাড়ি ছিল। রোববার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর দেখা যায় সাইফুরের মুখে দাড়ি নেই। তার মুখে দাড়ি না থাকায় অবাক হন অনেক পুলিশ কর্মকর্তা। পুলিশ জানায়, সাইফুরের মুখে লম্বা দাড়ি থাকলেও গ্রেপ্তার এড়াতে দাড়ি কেটে ফেলেন। চুলও ছোট করেন তিনি। তবে রক্ষা পাননি লাগঞ্জের চান্দাইপাড়া গ্রামের তাহিদ মিয়ার ছেলে সাইফুর।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, সাইফুর গ্রেপ্তার এড়াতে তার মুখের দাড়ি কেটে ফেলেন এবং সীমান্ত পথ ব্যবহার করে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
এমসি কলেজের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, সাইফুর এমসি কলেজের ইংরেজি বিভাগ থেকে মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়েছেন। তার ইভটিজিং ও হয়রানির কারণে এমসি কলেজ থেকে অনেক মেয়ে অন্য কলেজে চলে যান।
অপরদিকে, অপর আসামি অর্জুন লস্কর হবিগঞ্জের প্রত্যন্ত এলাকায় পালিয়ে যায় সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে চলে যাওয়ার ধান্দায়। তবে পুলিশের কারণে তাদের সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়।
মাধবপুর থানার ওসি ইকবাল হোসেন বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, অর্জুন মাধবপুর উপজেলার মনতলা সীমান্ত দিয়ে ভারত পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন।
জানা গেছে, শুক্রবার সন্ধ্যায় স্বামী-স্ত্রী এমসি কলেজে বেড়াতে যান। এ সময় কলেজ ক্যাম্পাস থেকে কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী জোর করে কলেজের ছাত্রাবাসে নিয়ে যায় দম্পতিকে। সেখানে একটি কক্ষে স্বামীকে আটকে রেখে ২০ বছর বয়সি তরুণী গৃহবধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণ করে তারা। খবর পেয়ে পুলিশ গৃহবধূকে উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টার-ওসিসিতে ভর্তি করে। এ ঘটনায় সিলেটের শাহপরাণ থানায় ছাত্রলীগের ৬ জনের নাম উল্লেখসহ আরও তিনজনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা করেন ভুক্তভোগীর স্বামী।
এছাড়া ধর্ষণের ঘটনার অন্যতম হোতা এম সাইফুর রহমানের রুমে অভিযান চালিয়ে একটি আগ্নেয়াস্ত্র, চারটি রামদা, একটি ছোরা ও জিআই পাইপ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় সাইফুরের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে পুলিশ বাদি হয়ে একটি মামলা করেছে। সম্পাদনা : শোভন দত্ত