নীতিমালার অভাবে ট্রান্সফ্যাটজনিত হৃদরোগ ঝুঁকি বেড়েই চলেছে
মো. আখতারুজ্জামান : বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য মঞ্জুর মোর্শেদ আহমেদ বলেন, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ২০২৩ সালের মধ্যে বিশ্ব থেকে ট্রান্সফ্যাট নির্মুলের যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তা আমাদের দেশে পরিপালন করা নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। আমাদের দেশের বাজারে অনেক বিস্কুট এবং জন্মদিনের কেক রয়েছে যা অতিমাত্রায় স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতির কর।
সোমবার রাজধানীর বিএমএ ভবনে এক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় তিনি এ কথা বলেন। কর্মশালাটির আয়োজন করে তামাক বিরোধী সংগঠন প্রজ্ঞা।
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য প্রফেসর আব্দুল আলিম বলেন, খাদ্যে ট্রান্সফ্যাটের মাত্রা ২ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট পণ্যে দাম কিছুটা বৃদ্ধি পাবে। তবে এই দাম বৃদ্ধির বিষয়টা আমাদেরকে মেনে নিতে হবে। কারণ এখন যে সব খাবার খাচ্ছি তাদের যে রোগ সৃষ্টি হচ্ছে তার চিকিৎসাবাদ যে খরচ হয় তা এই দাম বৃদ্ধি চেয়ে বেশি। বিএসটিআইর ডেপুটি ডিরেক্টর গোলাম মো. সারওয়ার বলেন, আমরা কাজ করে থাকি জনগণের জন্য। জনগণ যাতে ভালোমানের খাদ্য পায় সেই বিষয়টি নিশ্চিত করাই আমাদের কাজ। খাদ্যে ট্রান্সফ্যাটের মাত্রা নির্ধারণের ক্ষেত্রে আমরা ছোট বা বড় কোম্পানির কথা ভাববো না।
অন্যদিকে আজ বিশ্ব হার্ট দিবস উপলক্ষ্যে প্রজ্ঞার পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ বছরের প্রতিপাদ্য, হৃদয় দিয়ে হৃদরোগ প্রতিরোধ। কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ বা হৃদরোগ পৃথিবীব্যাপী মৃত্যুর একক কারণ হিসেবে শীর্ষে। যেসব কারণে হৃদরোগ ঝুঁকি বাড়ে ট্রান্সফ্যাট তারমধ্যে অন্যতম এবং আশংকার কথা হলো ট্রান্সফ্যাটজনিত হৃদরোগে মৃত্যুর সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ ১৫টি দেশের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে প্রতিবছর ২ লাখ ৭৭ হাজার মানুষ হৃদরোগে মারা যায়, যার ৪.৪১ শতাংশের জন্য দায়ি ট্রান্সফ্যাট। বিশ্বে ট্রান্সফ্যাট এর কারণে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার মানুষ।
ট্রান্সফ্যাটের প্রধান উৎস পারশিয়ালি হাইড্রোজেনেটেড অয়েল, যা বাংলাদেশে ডালডা বা বন¯পতি ঘি নামে পরিচিত। সম্প্রতি ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউট এর গবেষণায় ঢাকার পিএইচও নমুনার ৯২ শতাংশে ডব্লিউএইচও সুপারিশকৃত ২ শতাংশ মাত্রার চেয়ে বেশি ট্রান্স ফ্যাট পাওয়া গেছে। প্রতি ১০০ গ্রাম পিএইচও নমুনায় সর্বোচ্চ ২০.৯ গ্রাম পর্যন্ত ট্রান্স ফ্যাট এর উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে; যা ডব্লিউএইচও’র সুপারিশকৃত মাত্রার তুলনায় ১০ গুণেরও বেশি। উচ্চমাত্রায় ট্রান্সফ্যাট গ্রহণ হার্ট অ্যাটাকসহ হৃদরোগজনিত মৃত্যুঝুঁকি বৃদ্ধি করে। ট্রান্সফ্যাটের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত কোনো আইন হয়নি। তবে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ খাদ্যে ট্রান্সফ্যাট নিয়ন্ত্রণে নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করেছে। কমিটির আওতায় ইতোমধ্যে ট্রান্স ফ্যাটি এসিড নিয়ন্ত্রণে একটি ধারণা পত্র তৈরি করা হয়েছে।
প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের বলেন, ট্রান্সফ্যাট নিয়ন্ত্রণে সারাবিশ্ব একত্রিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে বিলম্ব করার কোনো সুযোগ বা অজুহাত থাকতে পারে না। খাদ্যদ্রব্যে ট্রান্সফ্যাট নিয়ন্ত্রণ এমন এক সাশ্রয়ী পদক্ষেপ যা একইসাথে হৃদরোগজনিত অসুস্থতা ও মৃত্যুঝুঁকি হ্রাস এবং অসংক্রামক রোগ সংক্রান্ত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ৩.৪ অর্জনে সহায়তা করবে। রেজা