
একনেকে ১০ হাজার ৭০২ কোটি টাকার সাত প্রকল্প অনুমোদন দেশেই উৎপাদন হবে স্মার্ট কার্ড, কমবে ব্যয়

শাহীন মোল্লা : নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং একসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ) ২য় পর্যায় প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ৮০৫ কোটি ৯ লাখ টাকা। চলতি বছরের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে। নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে যুক্ত হয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেন, দেশের বাইরে ৪০টি দেশে যেখানে বাংলাদেশিরা আছেন তাদেরকেও এই তালিকায় আনা হবে। বর্তমান যে স্মার্ট কার্ডটি চলমান রয়েছে সেটি মূলত ফ্রান্স থেকে আমদানি করা হত। এখন যে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। সেটিতে আমাদের বিশেষজ্ঞ টিমের মাধ্যমে দেশেই স্মার্ট কার্ড উৎপাদন করা হবে এবং তাতে তুলনামূলক ব্যয় ও কম হবে।
মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ১০ হাজার ৭০২ কোটি ২৩ লাখ টাকা ব্যয় নির্ধারণ করে সাতটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৬ হাজার ৪৫৯ কোটি ২৭ লাখ টাকা এবং বিদেশি অর্থায়ন ঋণ ৪ হাজার ২৪২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। প্রধানমন্ত্রী এবং একনেক-এর চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গণভবনের সাথে সংযুক্ত হয়ে ভিডিও কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে শেরেবাংলা নগরস্থ এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। একনেক-এর সভায় এসব প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
অনলাইনে একনেক সভা শেষে সাংবাদিকদের সামনে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন পরিকল্পনা কমিশন বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আসাদুল ইসলাম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা কমিশনের অন্যান্য সদস্যরা।
জানানো হয়, অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রাণিপুষ্টির উন্নয়নে উন্নত জাতের ঘাস চাষ সম্প্রসারণ ও লাগসই প্রযুক্তি হস্তান্তর প্রকল্প রয়েছে। এতে খরচ হবে ১১৬ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। চলতি বছরের এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের মার্চের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের খুরুশকুল বিশেষ আশ্রায়ণ প্রকল্পে খরচ হবে ১ হাজার ৩৩৩ কোটি ৬১ লাখ টাকা। প্রকল্পটির মেয়াদকাল ধরা হয়েছে চলতি বছরের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুন মাস পর্যন্ত।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উইকেয়ার ফেজ-১ আরসিএমআইআইপি প্রকল্পে খরচ হবে ২ হাজার ১৮০ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৬৪৩ কোটি ৬৮ লাখ দেবে সরকার এবং বিশ্বব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া হবে এক হাজার ৫৩৭ কোটি ৩১ লাখ টাকা। চলতি বছরের অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের নির্ধারিত সময় ধরা হয়। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উইকেয়ার ফেজ-১: ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়ক এন-৭ উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৪ হাজার ১৮৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকার দেবে এক হাজার ৪৮২ কোটি ৫ লাখ এবং বিশ্বব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া হবে ২ হাজার ৭০৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। চলতি বছরের অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময় ধরা হয়।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের পায়রা বন্দরের কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো সুবিধাদির উন্নয়ন প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধন আনা হয়েছে। প্রকল্পটির মূল খরচ ছিল এক হাজার ১২৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। প্রথম সংশোধনে তা বাড়িয়ে করা হয় ৩ হাজার ৩৫০ কোটি ৫১ লাখ এবং আজ দ্বিতীয় সংশোধনীতে তা আরও বাড়িয়ে করা হলো চার হাজার ৩৭৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এ প্রকল্পের সম্পূর্ণ ব্যয় নিজস্ব অর্থায়নের মাধ্যমে ধরা হয়। প্রকল্পটি ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ জুন সময়ের মধ্যে শেষ করার কথা থাকলেও প্রকল্পটি ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের শেখ হাসিনা তাঁতপল্লী স্থাপন-১ম পর্যায়, প্রকল্পটি জুলাই ২০১৮ শুরু করে ২০২১ জুন পর্যন্ত সম্পাদন মেয়াদকাল ধরা হলেও ১ম সংশোধনীর মাধ্যমে প্রকল্পের সংশোধন আনা হয়েছে। উক্ত সংশোধনীর মাধ্যমে খরচ বেড়েছে ৫৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা। প্রকল্পটির মূল ব্যায় ধরা হয়ে ছিল ২৫৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা। প্রথম সংশোধনে তা বাড়িয়ে করা হলো ৩০৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। ২০১৮ সালের জুলাইয়ে শুরু হওয়া প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়িয়ে করা হলো ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। জানানো হয়, প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য হল তাত শিল্পের সাথে জড়িত শ্রমিক ও তাদের পরিবারকে উন্নত সুযোগ সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে পূণর্বাসন করা।
অনলাইন ভিত্তিক একনেক সভায় অংশ নেন কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক, তথ্য মন্ত্রী হাসান মাহমুদ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন এবং নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী প্রমুখ।
