
আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ৩
কোন্দল থাকা সত্ত্বেও চলচ্চিত্র ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে সবাই এককাট্টা

ইমরুল শাহেদ : বহুমুখী সংকটে আবর্তিত চলচ্চিত্রশিল্পকে কিভাবে বাঁচানো যায় এবং কিভাবে এই সংকট থেকে উত্তরণ হতে পারে এই নিয়ে সকলেই এখন চিন্তিত। কোভিড-১৯ শুরু হওয়ার পর লকডাউনে চলচ্চিত্র ব্যবসায়ের প্রাণ সব সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ২১১ দিন পর প্রদর্শন ব্যবসা যখন চালু হলো তখন দেখা গেল মাত্র ৮০টি সিনেমা হল খুলেছে। অথচ বর্তমানে দেশে সিনেমা হলের সংখ্যা মাত্র ২৮০টি। চলমান ৮০টি সিনেমা হলেও নতুন ছবি সরবরাহের ক্ষমতা নেই চলচ্চিত্রশিল্পের। প্রযোজক পরিবেশক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে ‘কেন সন্ত্রাসী’ নামে একটি ছবিই মুক্তি পেয়েছে। এ মাসে মুক্তি পাওয়ার মতো আর কোনো ছবি নেই। প্রদর্শক সমিতির কর্মকর্তা মিয়া আলাউদ্দিন বলেছেন, কিভাবে আমরা সিনেমা চলচ্চিত্র ব্যবসা টিকিয়ে রাখব। গত বছর মুক্তি পেয়েছে অল্প কিছু ছবি। কিন্তু মহামারীর কারণে গত বছরের মুক্তির সংখ্যা ধর্তব্যের মধ্যে পড়ে না। এ বছরের শুরুতেই পরিস্থিতি শোচনীয় দেখা যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘ছবির অভাবে যদি চলমান সিনেমা হলগুলোও বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে সেগুলো আর সচল হবে না। সেক্ষেত্রে দেশ সিনেমা হল শূন্য হয়ে পড়বে।’ প্রযোজক পরিবেশক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু বলেন, ‘আগে বলা হতো প্রযোজক বাঁচলে সিনেমা হল বাঁচবে। এখন সেই শ্লোগান বদলে গেছে। এখন বলা হচ্ছে সিনেমা হল বাঁচলে প্রযোজক বাঁচবে।’
পক্ষান্তরে চলচ্চিত্র ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখার জন্য সম্প্রতি প্রদর্শক, প্রযোজক পরিবেশকসহ ব্যবসা সংশ্লিষ্ট সকলে মিলে একমত হয়েছেন, মহামারীকালীন সংকট মোকাবেলার জন্য অন্তত দশটি হিন্দি ছবি আমদানি করা যেতে পারে। প্রযোজক পরিবেশক সমিতির সভাপতি বলেছেন, মহামারী চলে গেলেই এই আমদানি বন্ধ হয়ে যাবে। তিনি বলেন, ছবিগুলো কিভাবে মুক্তি দেওয়া হবে তা নিয়ে একটি খসড়া প্রস্তাবনা তৈরি করা হচ্ছে। ঈদসহ কোনো উৎসবে আমদানি করা ছবি মুক্তি দেওয়া হবে না। এই সময়ে স্থানীয়ভাবে নির্মিত ছবি মুক্তি পাবে। এছাড়া যে সপ্তাহে স্থানীয় ছবি মুক্তির জন্য প্রস্তুত থাকবে সে সপ্তাহে আমদানি করা ছবি মুক্তি দেওয়া হবে না।
প্রশ্ন হচ্ছে, তারা কি ধরনের হিন্দি ছবি আমদানি করার পক্ষে। প্রদর্শক সমিতির কর্মকর্তা মিয়া আলাউদ্দিন বলেন, ‘কি ছবি আমদানি হবে বা কারা ছবি আমদানি করতে পারবেন সে সব এখনও ভাবা হয়নি। সরকারি অনুমোদনের পর সে সব ভাবা হবে। তবে হিন্দি ছবির সংখ্যা দশটিই হবে এমন কোনো কথা নেই। এই সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।’ তবে চলচ্চিত্র ব্যবসায়ের বিশ্লেষকরা মনে করেন, চলচ্চিত্রশিল্পকে আগের মতো সচল করতে হলে চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনের মধ্যে বিদ্যমান কোন্দল মিটিয়ে ফেলে কর্মোপযোগী পরিবেশের সৃষ্টি করতে হবে।
বর্তমানে চলচ্চিত্রশিল্পের ১৯টি সংগঠনের মধ্যে প্রধান তিনটি সংগঠনÑপ্রযোজক পরিবেশক সমিতি, পরিচালক সমিতি এবং শিল্পী সমিতি নানা বিবাদ-বিসম্বাদে জড়িয়ে থাকায় চলচ্চিত্রে একটা অস্থির পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রযোজক পরিবেশক সমিতির নির্বাচিত কমিটিকে বাতিল করে প্রশাসক বসায়। কিন্তু কমিটি থেকে এর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট আবেদন করলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নেওয়া ব্যবস্থা স্থগিত হয়ে যায়। সুতরাং কমিটি পুনরায় উজ্জীবিত হয়। ফিরেই তারা চলচ্চিত্র ব্যবসাকে সচল রাখার জন্য সিনোম হল রক্ষার উদ্যোগ নেয় এবং প্রদর্শন ব্যবসাকে সচল সজীব রাখার জন্য মহামারীকালীন দশটি হিন্দি ছবি আমদানীরও প্রস্তাবনা তৈরি করেছে। সঙ্গে রয়েছে আরও কিছু সাংগাঠনিক উদ্যোগ। এছাড়া গত শনিবার ছিল প্রযোজক পরিবেশক সমিতির সাধারণ সভা। তাতে সমিতির গঠনতন্ত্র সংশোধন করে নির্বাচন প্রার্থিতার মেয়াদ সংকট দূর করা হয়েছে।
এখন থেকে সমিতির সদস্যরা যে কোনো সময়ই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। ভোটাররা যদি প্রত্যাখান না করেন তাহলে প্রার্থিতার কোনো মেয়াদ নেই। অন্যদিকে পরিচালক সমিতির বর্তমান কমিটির মেয়াদ গত ডিসেম্বরেই শেষ হয়েছে। কোভিড মহামারীর কারণে পরিচালক সমিতি নির্বাচন দিতে পারেনি। তবে সব পরিচালকই নির্বাচনের জন্য মুখিয়ে আছেন। আগামী ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে পরিচালক সমিতির সাধারণ সভা। সেখানে ঘোষিত হবে নির্বাচনের দিনক্ষণ।
একজন পরিচালক জানান, আগামী মার্চ মাসের যে কোনো একটি সুবিধাজনক তারিখে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার একটা আবহ এখনই তৈরি হয়ে আছে। এছাড়া শিল্পী সমিতির নির্বাচনও খুব বেশি দূরে নয়। এই সমিতির বর্তমান নেতৃত্বের দু’একজনের সঙ্গে বড় ধরনের কোন্দল চলছে চলচ্চিত্রশিল্পের ১৮টি সংগঠনের। শিল্পী সমিতির নির্বাচন নিয়ে এখনই একটা প্রস্তুতি শুরু হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। কিন্তু সংগঠনগুলোর মধ্যে যত কোন্দলই থাকুক না কেন, আপৎকালীন এই সময়ে ছবি আমদানির ব্যাপরে সকলে একমত হয়েছেন। রেজা
