
চসিক নির্বাচন দুই প্রার্থীর সমর্থকদের গোলাগুলিতে নিহত ১
মনির ফয়সাল : চট্টগ্রাম নগরীর ২৮ নম্বর পাঠানটুলি ওয়ার্ডে চসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী ও ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীর অনুসারীদের মধ্যে গোলাগুলিতে একজন নিহত হওয়ার ঘটনায় ‘বিদ্রোহী’ কাউন্সিলর প্রার্থী মো. আবদুল কাদেরকে প্রধান আসামি করে মামলা দায়ের হয়েছে।
বুধবার ভোরে নিহত আজগর আলী বাবুলের ছেলে সেজান মাহমুদ সেতু বাদি হয়ে ডবলমুরিং থানায় মামলাটি দায়ের করেন । মামলায় ‘বিদ্রোহী’ কাউন্সিলর প্রার্থী মো. আবদুল কাদেরকে এক নম্বর আসামি করে মোট ১৩ জনকে এজাহারনামীয় আসামি করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাত ৩০-৪০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
আসামিরা হলেন- মো. আবদুল কাদের (৫০), হেলাল উদ্দিন প্রকাশ হেলাল (৪০), ওবাইদুল করিম মিন্টু (৪৫), আবদুল ওয়াদুদ রিপন (৪২), আবদুর রহিম রাজু (৪৫), আসাদ রায়হান (৩৫), আলাউদ্দিন আলো (৩৫), ইমরান হোসেন ডলার (২৪), দিদার উল্লাহ (৪৮), সালাউদ্দিন সরকার (৪৫), দেলোয়ার রশিদ (৪২), মো. আলমগীর (৪৫) ও আবদুন নবী (৪৭)।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ডবলমুরিং সার্কেলের সহকারী পুলিশ কমিশনার শ্রীমা চাকমা বলেন, ‘নিহত আজগর আলীর ছেলে সেজান মাহমুদ বাদি হয়ে ১৩ জনকে এজাহারনামীয় ও অজ্ঞাত ৩০-৪০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। মামলাটি গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত করবে।’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (ডিবি-পশ্চিম) মনজুর মোরশেদ বলেন, ‘ডিবিকে মামলার তদন্তভার দেওয়া হয়েছে। ডিবি পরিদর্শক শাহাদাত মামলা তদন্ত করবেন।’
এর আগে মঙ্গলবার সোয়া ৭টার দিকে ২৮ নম্বর পাঠানটুলি ওয়ার্ডের মগপুকুরপাড় এলাকায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাহাদুর ও ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী এবং সদ্য সাবেক কাউন্সিলর মো. আবদুল কাদেরের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে আজগর আলী বাবুল (৫৫) নামে একজন মারা যান। এছাড়া মাহবুব নামে গুলিবিদ্ধ এক যুবক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
ঘটনার পর প্রতিপক্ষের বিক্ষুদ্ধ কর্মী-সমর্থকদের তোপের মুখে বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী মো. আবদুল কাদেরসহ তার অনুসারীরা মগপুকুর পাড়ার আজিম ম্যানসনে ঢুকে পড়েন। বিক্ষুদ্ধ কর্মী-সমর্থকরা ওই ভবন ঘিরে রাখে। এছাড়া কাদেরের পোস্টারে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে পুলিশ এসে ভবনের চারদিকে অবস্থান নেয়। রাত ১২টা ২০ মিনিটে ভবনের বিভিন্ন ফ্লোরে অভিযান চালিয়ে প্রার্থী কাদেরসহ ২৬ জনকে গ্রেপ্তার করে। আটক ‘বিদ্রোহী’ কাউন্সিলর প্রার্থী মো. আবদুল কাদেরসহ অন্যদের এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
নিহত আজগর আলী বাবুল আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাহাদুরের সমর্থক। তিনি মোগলটুলির কাটা বটগাছ এলাকার বাসিন্দা। তার ২ ছেলে ও ২ মেয়ে রয়েছে। বড় ছেলে চট্টগ্রাম কমার্স কলেজে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত।
ঘটনার দিন মঙ্গলবার বিকেল ৩টার দিকে কাউন্সিলর প্রার্থী আবদুল কাদের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাহাদুরের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দায়ের করেন। এর ৫ ঘণ্টার ব্যবধানেই সংঘর্ষের ঘটনায় আজগর আলী নিহত হন। অভিযোগে বলা হয়েছে, মতিয়ারপুল থেকে কদমতলী, আবেদীয়া স্কুল গলি পর্যন্ত কাদেরের নির্বাচনী পোস্টার ছিঁড়া ফেলা, গণসংযোগে বাধা-হামলা, কর্মী-সমর্থকদের নির্বাচনী প্রচারণায় না আসার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এজন্য বাহাদুর ও তার অনুসারীসহ সাত জনের নাম উল্লেখ করা হয়। বিকেলেই অভিযোগ করে সন্ধ্যায় দুই প্রার্থী সংঘাত-সংঘর্ষ ও গোলাগুলিতে জড়িয়ে পড়ে।
উল্লেখ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) ২৮ নম্বর পাঠানটুলি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন নজরুল ইসলাম বাহাদুর। ২০১০-২০১৫ মেয়াদে তিনি ওয়ার্ড কাউন্সিলর ছিলেন।
অপরদিকে নগর যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আবদুল কাদের ২০১৫ সালে ওই ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। এবার তিনি দলের সমর্থন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। এ নিয়ে গত ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের প্রথম তফসিল ঘোষণার পর থেকে দুই প্রার্থীর মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। আগামী ২৭ জানুয়ারি সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
