ঋণখেলাপি কমাতে আদালতে বিশেষ বেঞ্চ প্রয়োজন
ড. আহমদ আল কবির
দেশে ঋণখেলাপির যে সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে, করোনা পরিস্থিতি ঋণখেলাপির সে অবস্থাকে আরও একটু সঙ্গিন করে ফেলেছে। আরও একটু সংকটময় করে ফেলেছে। ঋণখেলাপি থেকে বের হওয়ার সহজ কোনো পথ আছে বলে আমি মনে করি না। ধারাবাহিকভাবে প্রত্যেকটি ব্যাংক নিয়মতান্ত্রিকভাবে যদি গ্রাহক ও ব্যাংকের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি করে এবং বাংলাদেশে ব্যাংক যদি নীতিনির্ধারণী সহায়তা দেয়, তখনই ত্রিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদিভাবে ঋণখেলাপি সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।
ঋণখেলাপির জন্য যে বিচারব্যবস্থা আছে সেটা উচ্চ আদালতে যেয়ে আটকে যাচ্ছে। কোনো বিশেষ আদালত না থাকায় সবগুলো মামলাই উচ্চ আদালতে গিয়ে বছরের পর বছর পরে থাকে। বড় বড় ঋণখেলাপিরা মামলাটাকে উচ্চ আদালতে নিয়ে গিয়ে অনেক টাকা খরচ করে দীর্ঘসূত্রিতার আশ্রয় নেয়। একজন একশ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে মামলা পাঁচ বছর যদি আদালতে রেখে দিতে পারে তাহলে আদালতে যাওয়ার পর ব্লক করে দেওয়ায় এই একশ কোটি টাকা আর বাড়ে না। ফলে অর্থও বাড়ছে না, আবার পাঁচ বছর ধরে এই একশ কোটি টাকা ব্যবহার করে তারা যদি ফেরতও দেয় তাহলেও রিটার্ন আসলো না কারণ এই সময়ে এই অর্থ দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ার কথা। অর্থ তো আদায় হয়ই না উপরন্তু এই মামলা ৫ বছর নয়, অনেক সময় ১০-১৫ বছর পর্যন্ত উচ্চ আদালতে বসে থাকে। অর্থঋণ আদালত থেকে যেসব মামলার সিদ্ধান্ত হয়ে যায় সেগুলো উচ্চ আদালতে গিয়ে বসে না থাকে তার জন্য একটি বা দুইটি বিশেষ বেঞ্চ তৈরি করা গেলে এবং সেগুলোতে খেলাপি ঋণের মামলার সমাধান করা হলে ঋণখেলাপি কমবে।
সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও গ্রাহকের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি করে খেলাপিঋণ থেকে বের হওয়া সম্ভব। ছোট ঋণগ্রহীতারা এই বিষয়টাতে বেশ ভালো সাড়া দেবে, আমার অভিজ্ঞতা তাই বলে। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে, দুইপক্ষের সুবিধা অসুবিধা দেখে যদি এখানে বাংলাদেশ ব্যাংকও নীতি নির্ধারণী সহায়তা দিলে ঋণখেলাপি কমবে। অর্থঋণ আদালত থেকে রায় পাওয়ার পরে সরাসরি উচ্চ আদালতে বিশেষ বেঞ্চ তৈরি করে দ্রুত সমাধানের দিকে যেতে পারলে ঋণখেলাপি কমবে। দীর্ঘসূত্রিতার আশ্রয় নিয়ে কেউ বছরের বছরের আর ঋণ আটকে রাখতে পারবে না। ঋণখেলাপিরা তখন ভয় পাবে। যারা ঋণখেলাপির সংস্কৃতিতে ঢুকে গেছে তারা কিন্তু এই সংস্কৃতি থেকে বের হতে চায় না। কারণ তারা দেখে যে তাদের একটা নিরাপদ আশ্রস্থল আছে। নিম্ন আদালতে রায় না পেলে উচ্চ আদালতে যেয়ে তারা স্টল করে রাখতে পারে। অর্থমন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং বিভাগকে প্রধান বিচারপ্রতির সঙ্গে আলাপ করে বিশেষ আদালত তৈরি করার চেষ্টা করতে হবে।
বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ঋণের কিস্তি আগামী জুন পর্যন্ত হয়তো স্থগিত করা হবে। এই সুযোগ দিতে কোনো অসুবিধা হওয়ার কারণ নেই। বাংলাদেশকে ব্যাংকে তার গ্রাহকদের সুবিধার্থে এই জুন পর্যন্ত ঋণের কিস্তি স্থগিত করা উচিত। বেসরকারি ও সরকারি সবগুলো ব্যাংকেই এই সুযোগের আওতায় নিয়ে আসা উচিত। বিশেষ ক্ষেত্রে শর্তসাপেক্ষে ঋণ পরিশোধের সময় বাড়ানোর কিছু সুযোগ রেখেছে নতুন সার্কুলার থেকে। ব্যাংকগুলো থেকে জুন পর্যন্ত ঋণ পরিশোধের সময় বাড়ানোর চাহিদা থাকলে, এটা করা উচিত। এটা করলে ভালোই হবে। লেখক পরিচিতি : সাবেক চেয়ারম্যান, রূপালী ব্যাংক। সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে লেখাটি লিখেছেন আমিরুল ইসলাম