৩ শতক পর নাজুক ব্রিটিশ অর্থনীতি
আসিফুজ্জামান পৃথিল : গত ৩০০ বছরে এতোটা খারাপ অবস্থায় কখনই পরেনি যুক্তরাজ্য। এ টালমাটাল বছরে দেশটির অর্থনীতি আগের ৭ বছরে অর্জিত সমস্ত প্রবৃদ্ধি হারিয়ে ফেলেছে। বর্তমানে ব্রিটিশ অর্থনীতির আকার ২০১৩ সালের অবস্থায় ফিরে গেছে। সিএনএন
আগেই ধারণা করা হচ্ছিলো, ব্রিটিশ অর্থনীতি বড়সর ধাক্কা খাবে। বাস্তবে সেটি হলেও। এবার তাদের জিডিপি কমেছে ৯.৯ শতাংশ। যা ১৯২১-এর মহামন্দার সময়কালের ৯.৭ শতাংশের চেয়ে বেশি। ১৭০৯ সালের পর দেশটির অর্থনীতি কখনই এতটা নেতিবাচক ধারায় ছিলো না বলে জানাচ্ছে ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের ডাটাবেস। তবে সে বছর ইউরোপের ৫০০ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে তীব্র শীত পড়েছিলো। মারা গিয়েছিলেন অজ¯্র মানুষ। এনবিসি
তবে ২০২০ সালের শেষ মাসগুলোতে উন্নতির সম্ভাবনা দেখা গিয়েছিলো। এসময় জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১ শতাংশ। তবে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের এ উন্নতিতে সার্বিক অর্থনীতিতে কোনও প্রভাবই পড়েনি। যে দুবার লকডাউন দেওয়া হয়েছে, তা ব্রিটিশ অর্থনীতিকে একেবারে বিদ্ধস্ত করে দিয়েছে।
প্রধান অর্থনীতিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ মন্দা মোকাবেলা করা দেশের একটি যুক্তরাজ্য। ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতি জার্মানি এ সময় ৫ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। আর ইউরোপের সার্বিক অর্থনীতি সংকুচিত হয়েছে ৬.৪ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি সংকুচিত হয়েছে ৩.৫ শতাংশ। ইউরোস্ট্যাট
যুক্তরাজ্যের অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আজকের পরিসংখ্যান বলছে, করোনার প্রভাবে আমাদের অর্থনীতি বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে। সারা বিশ্বের সব দেশই এরকম ধাক্কা অনুভব করেছে। তবে শীতকালে অর্থনীতিতে আমরা কিছু উল্লম্ফন দেখেছি। যদি আবারও লকডাউন দেয়া হয়, পরিস্থিতি খারাপ হবে।’ দ্য গার্ডিয়ান
৫ জানুয়ারি যুক্তরাজ্যে আবারও জাতীয় লকডাউন দেওয়া হয়। ফলে ২০২১ সালের প্রথম প্রান্তিতে অর্থনীতি আবারও আঘাত পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। ফলে ২০২০ সালের শেষ প্রান্তিকে হওয়া ক্ষতিপূরণ তেমন কাজে আসবে না। এর বাইরে যুক্ত হয়েছে ব্রেক্সিট সৃষ্ট বাণিজ্য ক্ষতি। এমন এক সময় যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে আলাদা হয়েছে, যখন অর্থনৈতিক অবস্থা ব্যাপক খারাপ। ব্রিটিশ রপ্তানিকারকরা চুক্তি জটিলতায় নিজ পণ্য সীমান্ত পার করতে পারছেন না। ফলে, বাণিজ্য ঘাটতির শঙ্কাতেও পড়েছে দেশটি। অতিমহামারীর কারণে এক চতুর্থাংশ ব্রিটিশ প্রাপ্তবয়স্ক অর্থনৈতিক সঙ্কটে পড়েছেন। তাদের এত বেশি ঋণ কিংবা এত কম সঞ্চয় যে, পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারেননি। এফসিএ
এ জরিপ বলছে, ৪০ শতাংশ ব্রিটিশ অর্থকষ্টে ভুগছেন। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে তরুণ কর্মী, কৃষ্ণাঙ্গ এবং নিজের কর্মসংস্থান করা ব্যক্তিরা। তবে ১৫ শতাংশ ব্রিটিশ প্রাপ্তবয়স্ক আগের চেয়ে ভালো অবস্থায় গেছেন। এরা বেশিরভাগই শেতাঙ্গ ব্যবসায়ী। ডেইলি মেইল
তবে ব্রিটিশ সরকার মনে করে, গণটিকাদান পরিস্থিতি পরিবর্তনে সহায়ক হবে। ঠিকমতো টিকা দেওয়া গেলে ২য় প্রান্তিকেই ঘুরে দাঁড়াবে ব্রিটিশ অর্থনীতি। ৩১২ বছর আগে ব্রিটিশ অর্থনীতি খারাপ অবস্থায় পড়েছিলো। তা তারা পুষিয়ে নিয়েছিলো ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মনোপলি ব্যবসার মুনাফা আর নতুন কলোনি গড়ে। এরপর ব্রিটিশ অর্থনীতি শুধুই বেড়ে গেছে। এবার করোনা তাদের বাধ্য করলো অবনমিত হতে। সম্পাদনা : ভিক্টর রোজারিও