আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ২
অর্থনীতি সম্পূর্ণ পুনরুদ্ধারে সরকারের সহায়তা অব্যাহত রাখা উচিত : সিপিডি
সোহেল রহমান : চলমান কোভিড পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মিশ্র সঙ্কেত পরিলক্ষিত হচ্ছে। সামষ্টিক অর্থনীতির কিছু সূচকে ইতিবাচক ধারা দেখা গেলেও কিছু সূচকে নিম্নমুখী প্রবণতা রয়েছে। সার্বিকভাবে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে আরও সময় লাগতে পারে। এমতাবস্থায় অর্থনীতি সম্পূর্ণ পুনরুদ্ধারে মধ্যমেয়াদে সরকারের নীতিগত সহায়তা অব্যাহত রাখা, সবচেয়ে জরুরি খাতে সরাসরি অর্থ সরবরাহ করা এবং দ্রুততম সময়ে সংশোধিত বাজেট প্রণয়নের পরামর্শ দিয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ‘সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ’ (সিপিডি)।
চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে এক পর্যালোচনা প্রতিবেদনে এসব পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি। সোমবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে পর্যালোচনা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, সম্মানীত ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ও সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান যৌথভাবে এ প্রতিবেদন তৈরি করেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, কোভিড প্রভাব থেকে বিশ্ব অর্থনীতির পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হতে পারে। এর বিপরীতে অভ্যন্তরীণ চাহিদা শক্তিশালী হয়ে ওঠেছে। এমতাবস্থায় অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির এমন সব বিষয়গুলোর দিকে নজর দিতে হবে। সংশোধিত বাজেট প্রণীত হলে ত্রুটিপূর্ণ কর্মসূচীগুলো থেকে অর্থনীতি বেরিয়ে আসতে পারবে।
প্রণোদনা কর্মসূচীর পরবর্তী ধাপে সেগুলো পুনঃপর্যালোচনা ও কাঠামোগত পুনর্গঠনের ওপর গুরুত্বারোপ করে সিপিডি বলেছে, শুধু সময় বাড়িয়ে একই প্রণোদনা কর্মসূচীর পুনঃঘোষণা কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়ক হবে না। নতুন কর্মসূচীতে ক্ষুদ্র ও ছোট শিল্প খাত, কৃষি, তরুণ ও নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য উদ্ভাবনীমূলক উদ্যোগ নিতে হবে। একই সঙ্গে আগামী বাজেটে কর অব্যাহতি ও ভর্তুকি ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে পরিকল্পিত নীতি অনুসরণ এবং নির্ভরযোগ্য ও সময়োপযোগী উপাত্তের মাধ্যমে অর্থনীতির পুনরুদ্ধার চিত্র সতর্কতার সঙ্গে মনিটরিং করতে হবে। বর্তমানে দেশের চলমান সামষ্টিক অর্থনতিক সূচকগুলো মিশ্র প্রকৃতির উল্লেখ করে সংস্থাটি বলেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম চারমাসে (জুলাই-অক্টোবর) বাজেট ব্যয় উদ্বৃত্ত থাকা, রিজার্ভ ও রেমিটেন্স প্রবাহ, সার্বিকভাবে চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকা, মুদ্রা বিনিময় হার স্থিতিশীল ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকা, শিল্প উৎপাদন বৃদ্ধি ইত্যাদি ইতিবাচক। তবে বাজেট উদ্বৃত্ত থাকাটা বিস্ময়কর। সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার ঘাটতি এবং এডিপি বাস্তবায়ন ও মেগা প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নে ধীরগতির কারণেই বাজেট উদ্বৃত্ত রয়েছে বলে মন্তব্য করেছে সিপিডি। অন্যদিকে ওভেন খাতে রপ্তানি, মূলধন যন্ত্রপাতি আমদানি, সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ, নিট বৈদেশিক বিনিয়োগ, রাজস্ব আহরণ ইত্যাদি খাতে নেতিবাচক প্রবণতা বিদ্যমান।
সিপিডি’র প্রতিবেদনে চলতি অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রাকে উচ্চাভিলাষী হিসেবে আখ্যায়িত করে বলা হয়েছে, ইতিমধ্যেই সম্ভাব্য প্রবৃদ্ধির হার নিয়ে সরকারি সংস্থার সঙ্গে আন্তর্জাতিক সংস্থার হিসাবে বড় ধরনের পার্থক্য এবং এ নিয়ে বির্তক ওঠেছে। তবে প্রবৃদ্ধির এই হার অর্জিত হলেও অর্থনীতির সকল খাত একইভাবে পুনরুদ্ধারিত হবে না।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে সিপিডি’র সিনিয়র ফেলো তাওফিকুল ইসলাম খান বলেন, অর্থনীতির সব খাত করোনার ক্ষতি থেকে সমানভাবে পুনরুদ্ধার নিশ্চিত করতে পারছে না। বড় ও মাঝারি খাত এগিয়ে থাকলেও মাইক্রো ও ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানগুলো অনেকটাই পিছিয়ে। এ হিসাবে বর্তমান পুনরোদ্ধারের গতি কে-শেপড, মাইক্রো ও ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থার অবনতি হচ্ছে। করোনা থেকে পুনরুদ্ধারে সরকারের ঘোষণা করা প্রণোদনা সব খাতে সমানভাবে বিতরণ হয়নি।
জানুয়ারি পর্যন্ত কৃষিখাতের প্রণোদনার অর্ধেকও বিতরণ হয়নি। ব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্ক না থাকায় ছোট খাতের উদ্যোক্তারা প্রণোদনা পাচ্ছেন না। বিতরণ করা প্রণোদনার টাকা কারা পাচ্ছেন, এ প্রণোদনার কতটুকু ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের হাতে যাচ্ছে, আর কতটুকু অনাদায়ী থাকার আশঙ্কা রয়েছেÑ এসব বিষয়ে সার্বিক পর্যালোচনা প্রয়োজন। পাশাপাশি যারা প্রণোদনা পাননি, তাদের জন্য নতুন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা প্রয়োজন। আর অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের ছোট উদ্যোক্তাদের অর্থপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে এ প্রণোদনায় ব্যাংকের ভূমিকা কমাতে হবে।