আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ১
ব্লুমবার্গকে জাপানি রাষ্ট্রদূত জাপান দক্ষিণ এশিয়ায় ব্যবসার জন্য বাংলাদেশকে গুরুত্ব দিচ্ছে
দেবদুলাল মুন্না : ঢাকায় নিযুক্ত জাপানি রাষ্ট্রদূত নাওকি ইটো গতকাল ব্লুমবার্গের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, যেহেতু করোনা মহামারি শুরু হয়েছে চীনে, তাই সরবরাহ চেইন অব্যাহত রাখতে জাপানের কোম্পানিগুলোকে অন্য স্থানে সরিয়ে নেয়ার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। এতে বাংলাদেশ ভাল সুবিধা পাবে। জাপান তার কোম্পানিগুলোকে চীনের বাইরে স্থানান্তরে উৎসাহিত করছে। এক্ষেত্রে তাদের সম্ভাব্য গন্তব্য হিসেবে তালিকায় যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ।
গতকাল ব্লুমবার্গের রিপোর্টে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে সংযুক্ত করার এক কৌশলগত ভৌগলিক অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশের মধ্যে অন্যতম এই দেশ। এখানে আছে কমপক্ষে ১৬ কোটি মানুষের বসবাস। জাপানের তুলনায় শতকরা মাত্র ৪০ ভাগ এ দেশের আয়তন। জুনে সমাপ্ত অর্থবছরে দক্ষিণ এশিয়ার এ দেশে জাতীয় প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে শতকরা ৫.২ ভাগ। তবে বর্তমান অর্থবছরে তা শতকরা ৭.৪ ভাগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর আগে এই প্রবৃদ্ধি শতকরা ৮.২ ভাগ পূর্বাভাস করা হয়েছিল। প্রবৃদ্ধির দিক দিয়ে এখনও এ অঞ্চলে ভাল অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। জাপানি রাষ্ট্রদূত ইটো বলেছেন, বাংলাদেশে ক্ষতি কাটিয়ে উঠার হার প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে দ্রুত হচ্ছে।
রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ৩২ কিলোমিটার দূরে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলায় ১০০০ একর জায়গার ওপর বিস্তৃত শিল্প এলাকাকে বলা হয় স্পেশাল ইকোনমিক জোন। এখানেই জাপানি কোম্পানিগুলো ব্যবসার ঘাঁটি করবে। বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটির মতে, এখানে জাপানি ২০০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগের আশা করছে বাংলাদেশ।
ব্লুমবার্গের খবরে বলা হয়, রাষ্ট্রদূত ইটোর মতে, গত ১০ বছরের বেশি সময় নিয়ে বাংলাদেশে কার্যক্রম চালানো জাপানি কোম্পানির সংখ্যা তিনগুন বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০০। তিনি বলেন, শিল্প এলাকার উন্নয়নে ১০০ কোটি ডলারের প্রকল্পে জাপান বিশেষ উন্নয়ন ঋণ বরাদ্দ দিয়েছে ৩৫ কোটি ডলার। এশিয়ায় স্পেশাল ইকোনমিক জোনে এটাই জাপানের সর্বোচ্চ সহায়তা। আড়াইহাজারের এই শিল্প পার্ক কার্যক্রম শুরু করার কথা আগামী বছর। রাষ্ট্রদূত ইটোর মতে, এখানে সুজুকি মোটারস করপোরেশন এবং মিটসুবিসি করপোরেশনের মতো অটোমেকারদের কাছ থেকে নতুন বিনিয়োগ প্রত্যাশা করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশে জাপানের সর্বোচ্চ বিনিয়োগকারী দুটি প্রতিষ্ঠান হলো জাপান ট্যোবাকো ইনকরপোরেশন ও হোন্ডা মোটারস কোম্পানি।
এর আগে চলতি মাসের ২ তারিখে টোকিওস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস, বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অথোরিটি (বিডা), বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথোরিটি (বেজা), জাপান এক্সটারনাল ট্রেড অর্গানাইজেশন (জেট্রো) এবং জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো–অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) সম্মিলিত উদ্যোগে বাংলাদেশ বিজনেস সেমিনার (ওয়েবিনার) অনুষ্ঠিত হয়েছিল। জাপানি বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দুইশতাধিক প্রতিনিধি সেমিনারে অংশ নিয়েছিলেন।
সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেওয়ার সময় জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শাহাবুদ্দিন আহমদ ওয়েবিনারে সব অংশগ্রহণকারীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, এশিয়ায় বাংলাদেশের অন্যতম রপ্তানি গন্তব্য জাপান। রাষ্ট্রদূত সবাইকে জানান, বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ বিদ্যমান এবং সরকার বিনিয়োগকারীদের জন্য নানাবিধ আর্থিক ও অনার্থিক প্রণোদনা প্রদান করছে। বাংলাদেশে বিনিয়োগে জাপানি ব্যবসায়ীদের আগ্রহ আমাদের অনুপ্রাণিত করে উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যথাসম্ভব সহযোগিতা, তথ্য ও পরামর্শ প্রদান করতে টোকিওস্থ দূতাবাস সদাপ্রস্তুত রয়েছে। তিনি জাপানি ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে অধিক হারে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।