আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ১
৬০.৫ শতাংশ অভিভাবক স্কুল খোলার পক্ষে : সিপিডি বন্ধ থাকায় সাধারণ স্কুল ছেড়ে কওমি মাদরাসায় যাচ্ছে ছাত্ররা
বিশ্বজিৎ দত্ত : স্কুল বন্ধ থাকায় অনেক ছাত্র কওমি মাদরাসায় চলে গেছে। তাদের আর সাধারণ স্কুলে ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয় বলে অভিমত দিয়েছেন প্রাথমিক টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট আবুল কাশেম। গতকাল নাগরিক প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত এক সংলাপে এই বিষয়টি তুলে ধরেন তিনি। পরে রংপুরের একজন শিক্ষিকা জানান, তিনি কয়েকজনকে অনেক বুঝিয়ে মাদরাসা থেকে স্কুলে ফেরত এনেছেন।
ভার্চুয়াল এই সংলাপে সিপিডির পক্ষ থেকে স্কুল খোলার বিষয়ে একটি জরিপ উপস্থাপন করা হয়। সেখানে দেখানো হয়, অভিভাবক ও শিক্ষক বাদে অন্যান্য শ্রেণি-পেশার ৬০ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ স্কুল খুলে দেওয়ার পক্ষে। তবে ৫২ শতাংশ মানুষ স্কুল খুলে দেওয়ার পর সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কার কথা বলেছেন। আর প্রায় ৫৫ শতাংশ অভিভাবক তাদের সন্তানকে স্কুলে পাঠাতে নিরাপদ বোধ করছেন না। প্রায় অর্ধেক অভিভাবক মনে করেন, তাদের সন্তানেরা স্কুল স্বাস্থ্য নির্দেশিকা মেনে চলতে সক্ষম না। মোট ১ হাজার ৯৬০ জনের ওপর জরিপটি পরিচালনা করা হয়। এর মধ্যে অভিভাবক ছিলেন ৫৭৬ জন এবং শিক্ষক ছিলেন ৩৭০ জন। বাকি ব্যক্তিরা অন্যান্য শ্রেণি-পেশার। ১৭ থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি এই অনলাইন জরিপ পরিচালনা করা হয়। সংলাপে জরিপের তথ্য তুলে ধরেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) পরিচালক অভ্র ভট্টাচার্য। জরিপের মাধ্যমে অভিভাবকদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, স্কুল খুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকার প্রণীত স্বাস্থ্য নির্দেশিকা সম্পর্কে তারা অবগত কি না। জবাবে জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় ৮৭ শতাংশ অভিভাবক বলেছেন, তারা এই স্বাস্থ্য নির্দেশিকা সম্পর্কে অবগত। ৫৪ দশমিক ৭ শতাংশ অভিভাবক বলেছেন, তাদের সন্তানকে স্কুলে পাঠাতে নিরাপদ বোধ করছেন না। বাকি অন্য অভিভাবকেরা ইতিবাচক মত দিয়েছেন। ৫০ দশমিক ৭ শতাংশ অভিভাবক মনে করেন, তাদের সন্তানের স্কুল স্বাস্থ্য নির্দেশিকা মেনে চলতে সক্ষম না। এ ছাড়া ৬৭ শতাংশ অভিভাবক সুরক্ষার জন্য অতিরিক্ত ফি দিতে আগ্রহী নন। অন্যদিকে, ৮৭ শতাংশ শিক্ষক স্কুলে যেতে নিরাপদ বোধ করছেন। সমপরিমাণ শিক্ষক মনে করেন, তাদের স্কুলের স্বাস্থ্য নির্দেশিকা নিশ্চিত করার সামর্থ্য রয়েছে। প্রায় ৬৯ শতাংশ শিক্ষক অতিরিক্ত ব্যয়ভার বহনে সরকারি অনুদানের কথা বলেছেন। আর অভিভাবক ও শিক্ষক বাদে জরিপে অংশ নেওয়া অন্যান্য শ্রেণি-পেশার ৫৬ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ সরকারের স্বাস্থ্য নির্দেশিকা বাস্তবায়নযোগ্য বলে মনে করেন। ভার্চ্যুয়াল এই সংলাপে পর্যায়ক্রমে এলাকাভিত্তিক স্কুল খুলে শ্রেণিভিত্তিক (একসঙ্গে সব শ্রেণি না করে নির্ধারিত শ্রেণি) ক্লাস শুরুর ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে অবশ্যই স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী দ্রুত স্কুল খুলে দেওয়ার পক্ষে বলেছেন। তবে তারাও স্বাস্থ্যবিধি মানার ওপর জোর দিয়েছেন।
করোনাভাইরাসের কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি চলছে। সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছুটি আছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায় দেশের প্রায় চার কোটি শিক্ষার্থীর পড়াশোনা বিঘিœত হচ্ছে। এর মধ্যে গতকাল সোমবার শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ঘোষণা দিয়েছেন, দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষে ক্লাস শুরু হবে আগামী ২৪ মে। তার আগে ১৭ মে আবাসিক হলগুলো খোলে দেয়া হবে।
সংলাপে মাউসির মহাপরিচালক প্রফেসর সৈয়দ গোলাম ফারুক স্কুল খুলে দিলে স্কুলগুলোর জন্য সরকার যে প্রস্তুতি নিয়েছে তার একটি বিবরণ দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন,স্কুল খুললে শিক্ষার্থীদের জন্য ফলিক এসিড ট্যাবলেট খাওয়া ও ওজন মাপা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। উচ্চমাধ্যমিক স্কুলগুলোর জন্য ৫ কোটি ফলিক এসিড ট্যাবলেট ও দেশের প্রতিটি স্কুলে ওজন পরিমাপের যন্ত্র দেয়া হচ্ছে।
গতকাল ‘স্কুল খুলছে প্রস্তুতি কেমন’ নাগরিক প্ল্যাটফর্মের এক আলোচনায় এ কথা বলেন তিনি বলেন, স্কুল খোলার আগে সংসদ সদস্য, স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি, গণমান্য ব্যাক্তিবর্গ নিয়ে কমিটি গঠন করে দেয়া হবে। তারা দেখবেন স্কুল খুলতে কোন অসুবিধা হচ্ছে কিনা। স্কুলে শিক্ষার্থীদের মাস্ক পরে আসতে হবে। হাত ধোয়ার ব্যবস্থা থাকবে। প্রতিটি স্কুলে তাপমাত্রা মাপার ব্যবস্থা থাকবে। প্রয়োজনে একটি আইসোলেশান কক্ষ থাকবে। স্কুলের শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন স্কুল পরিস্কার পরিচ্ছন্ন কাজে অংশ নিবে।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এই সব কাজ করতে স্কুলগুলোর আর্থিক সংস্থান কিভাবে হবে। জবাবে মহাপরিচালক বলেন, সবাই নিজ অর্থেই থার্মোমিটার ক্রয় করেছে। যদি সমস্যা হয় তবে সরকারের কর্মকর্তাদের জানলে তারা সহায়তা করবে। অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞরা স্কুলের পাঠ্যক্রমে বাংলা, ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞান ছাড়া অন্যান্য বিষয় বাদ দিয়ে পাঠ্যক্রম শেষ করার কথাও বলেন।