২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি জঙ্গি ইকবাল গ্রেপ্তার
সুজন কৈরী : রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলার মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গ্রেপ্তারকৃতের নামÑ ইকবাল হোসেন ওরফে ইকবাল ওরফে জাহাঙ্গীর ওরফে সেলিম। সন্ত্রাসবিরোধী ওই সমাবেশে মঞ্চ লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছুঁড়েছিলেন তিনি। হামলার পর আত্মগোপনে চলে যান ওই দিনের হামলা মামলায় যাবজ্জীবন দ-প্রাপ্ত ইকবাল। মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন।
তিনি বলেন, আত্মগোপনে থাকাকালীন কখনও নিরাপত্তাকর্মী, শ্রমিক, রিকশা মেকানিকের ছদ্মবেশ ধারণ করেছিলেন ইকবাল। তবে র্যাব ও জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার উপর্যপুরি অভিযান ও গোয়েন্দা তৎপরতার মধ্যে ২০০৮ সালে দেশ ত্যাগ করেন তিনি। প্রথমে সেলিম এবং পরে জাহাঙ্গীর নাম ধারণ করেন।
র্যাব ডিজি বলেন, মালয়েশিয়ায় গিয়ে প্রবাসে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার পর ২০২০ সালের শেষের দিকে অন্যদের মতো তাকেও দেশে ফেরত পাঠানো হয়। সর্বশেষ এনএসআইর সহযোগিতায় র্যাবের একটি দল রাজধানীর দিয়াবাড়ী এলাকা থেকে সোমবার দিবাগত রাত তিনটায় ইকবালকে গ্রেপ্তার করা হয়। চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি ঘৃণিত, কলঙ্কজনক ও বিভীষিকাময় একটি দিন। সেদিন তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ঘৃণ্যভাবে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিলো।
আলোচিত গ্রেনেড হামলায় শাহাদত বরণ করেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেত্রী আইভী রহমানসহ দলের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীসহ অনেকেই এখনও সেই দুঃসহ এবং বিভীষিকাময় স্মৃতি ও ক্ষত বয়ে চলেছেন। ইতোমধ্যে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষ হয়েছে। আদালতে দীর্ঘ সাত বছরে সর্বমোট ২২৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও শুনানি শেষে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর মামলাটির রায় দিয়েছেন যুগান্তকারী এ রায়ে অভিযুক্তদের মৃত্যুদন্ড, যাবজ্জীবন কারাদ-সহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করা হয়। তিনি বলেন, এ চাঞ্চল্যকর মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করতে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতো র্যাবও তৎপরতা চালায়। এর আগে র্যাব ২০০৫ সালে জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নান ও তার ভাই মুহিবুল্লাহ ওরফে মফিজ ওরফে অভিকে গ্রেপ্তার করেছিলো। এছাড়া এ মামলার সংশ্লিষ্টতায় ২০০৭ সালে ১৬টি আরজিএস গ্রেনেড উদ্ধারসহ এখন পর্যন্ত ১৫ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। এরই ধারাবাহিকতায় এনএসআই’র দেওয়া তথ্যে র্যাবের গোয়েন্দা শাখার সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ আভিযানিক দল সোমবার রাতে রাজধানীর দিয়া বাড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার যাবৎজীবন সাজাপ্রাপ্ত জঙ্গি ইকবালকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার ইকবাল ঝিনাইদহের আব্দুল মজিদ মোল্লার ছেলে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার ইকবালের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব মহাপরিচালক বলেন, জঙ্গি ইকবাল এইচএসসি পাশ। স্কুল ও কলেজে অধ্যায়নরত অবস্থায় ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। ১৯৯৪ সালে কেসি কলেজ, ঝিনাইদহে ছাত্র সংসদে ছাত্রদলের নির্বাচিত শ্রেণী প্রতিনিধি ছিলেন। ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত মালয়শিয়ায় প্রবাসী কর্মজীবি হিসাবে অবস্থান করেন। দেশে ফিরে আইএসডি ফোন ও অন্যান্য ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করেন। এ সময় সর্বহারা ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের সঙ্গে বিরোধ বা কোন্দলে জড়িয়ে পড়েন তিনি। ২০০১ সালে তার চিন্তা-চেতনা ও মনস্তাত্তিক পরিবর্তন আসে। ঝিনাইদহের স্থানীয় এক জঙ্গি সদস্যদের মাধ্যমে হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশে (হুজিবি) যোগ দেন। ২০০৩ সালে মুফতি হান্নান ও অন্যান্য শীর্ষ নেতাদের সান্নিধ্যে চলে আসেন। জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিতে থাকেন। ২০০৪ সালের আগস্টে মুফতি হান্নানের নির্দেশে ঢাকায় আসেন এবং গোপন আস্তানায় অবস্থান করতে থাকেন। সেখানে হুজিবি নেতা মুফতি হান্নানসহ অন্যান্য সমমানদের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক তৈরি হয়। মুফতি হান্নানের সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে দলীয় গোপন বৈঠকে অংশগ্রহণ করতেন জঙ্গি ইকবাল। ২১ শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা সম্পর্কে ইকবাল জানিয়েছেন, মুফতি হান্নানের নির্দেশে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। মুফতি হান্নান হামলা পরিচালনার জন্য তাকে গ্রেনেড সরবরাহ করেছিলেন। হামলা চলাকালীন ইকবাল মঞ্চ লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছুঁড়েছিলেন। ঘটনার পর তিনি ঝিনাইদহে যান এবং সেখানে আত্মগোপনে থাকেন। ঘটনার পর র্যাব ইকবালকে গ্রেপ্তারের উদ্দেশ্যে একাধিক স্থানে অভিযান চালায়। ২০০৮ সালে জঙ্গি ইকবালকে গ্রেপ্তারের উদ্দেশ্যে ঝিনাইদহে তার নিজ বাড়ি এবং পরে গাজীপুর ও সাভারসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায় র্যাব। আত্মগোপনে থাকাকালীন ইকবাল নিরাপত্তাকর্মী, শ্রমিক, রিক্সা মেকানিক ইত্যাদি ছদ্মবেশ ধারণ করেছিল বলে জানিয়েছেন। ২০০৮ সালে দেশ ত্যাগ করেন। প্রবাসে আত্মগোপন থাকা অবস্থায় প্রথমে সেলিম এবং পরে জাহাঙ্গীর নাম ধারণ করেন। এক পর্যায়ে প্রবাসে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে চিহ্নিত হলে, ইকবালকে ২০২০ সালের শেষের দিকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। দেশে ফেরত এসে জঙ্গি ইকবাল আত্মগোপনে থেকে সমমানদের সাথে আবারও যোগাযোগ শুরু করেন। তবে জাতীয় নিরাপত্ত গোয়েন্দা এবং র্যাবের গোয়েন্দা শাখা জঙ্গি ইকবালের বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ অব্যাহত রাখে। এরই ধারাবাহিকতায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে র্যাব প্রধান বলেন, ২০০৮ সালে ম্যানুয়াল পাসপোর্ট ছিল। ওই সময় ইকবাল নিজ নাম পরিবর্তন করে দেশত্যাগ করেন। দেশে ফেরার সময় অন্য অবৈধ অভিবাসীর মতো ফেরত আসেন। সম্পাদনা : ভিক্টর রোজারিও