বিএসটিআইর সনদ সত্যয়ন গ্রহণের ক্ষেত্রে কাজ করছে ভারত : হাইকমিশনার
মো. আখতারুজ্জামান : মঙ্গলবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রাহমানের সঙ্গে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামীর দ্বিপাক্ষিক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা চেম্বার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় ডিসিসিআই’র পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সাক্ষাৎকালে ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী বলেন, বাংলাদেশে উৎপাদিত ভোজ্যতেল অথবা আমদানিকৃত ভোজ্যতেলের কমপক্ষে ২০ শতাংশ মূল্য সংযোজন করা সম্ভব হলে, তা ভারতে রপ্তানি করতে কোন বাধা নেই। তিনি বলেন, বিশেষ করে বাংলাদেশের ভোগ্য পণ্যসহ অন্যান্য পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে বিএসটিআইর সনদের সত্যয়ন যেন ভারতে গ্রহণযোগ্য হয়, এ বিষয়ে ভারত সরকার কাজ করছে। এ বিষয়ে ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া সম্ভব হবে।
হাইকমিশনার বলেন, সমুদ্র পথে ঢাকা হতে দিল্লীতে পণ্য পরিবহনের খরচ অত্যন্ত বেশি, যা কোন ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটা কমিয়ে আনতে দুদেশের ব্যবসায়ী সমাজকে নিজ নিজ দেশের সরকারের সাথে আলোচনার পরামর্শ প্রদান করেন। তিনি বলেন, বেনাপোল এবং পেট্রাপোলসহ বাংলাদেশের স্থলবন্দর সমূহের ভৌত অবকাঠামো এবং প্রযুক্তিগত সুযোগ-সুবিধার উন্নয়ন আবশ্যক, কারণ এ ধরনের সেবার অনুপস্থিতির কারণে পণ্য পরিবহনে দীর্ঘসূত্রিতার ফলে ব্যবসা পরিচালন ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়াও ভারতীয় হাইকমিশনার পণ্য পরিবহনে রেলপথ ব্যয় সাশ্রয়ী হওয়ায়, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে রেলপথের ব্যবহার বাড়ানোর উপর জোরারোপ করেন। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশের রেল ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা বাড়ানোর আহ্বান জানান, পাশাপাশি সিরাজগঞ্জে রেলওয়ের একটি কনন্টেইনার ডিপো স্থাপনেরও প্রস্তাব করেন। তিনি জানান, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নৌবন্দর ব্যবহারে ভারত অত্যন্ত আগ্রহী, তবে এ জন্য বিদ্যমান নৌপথের বেশকিছু জায়গার নাব্যতা বৃদ্ধিতে ড্রেজিং করা খুবই জরুরি। এর সাথে সংশ্লিষ্ট কিছু নীতিমালার সংষ্কার প্রয়োজন। কাক্সিক্ষত মাত্রায় ভারতীয় বিনিয়োগ বাংলাদেশে আকর্ষণ এবং এদেশের বিনিয়োগ সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য তিনি দুদেশের ব্যবসায়ীদের একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান।
ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ভারত ও বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৬.৯০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে ভারতীয় বিনিয়োগ এসেছে প্রায় ৬৪ কোটি ৫৫ লাখ মার্কিন ডলার। তিনি দুদেশের বাণিজ্য ব্যবধান কমাতে বাংলাদেশ হতে ওভেন গার্মেন্টস, নিটওয়্যার, টেক্সটাইল ফাইবার, হোম টেক্সটাইল প্রভৃতি পণ্য আরও বেশি হারে আমদানির জন্য ভারতীয় উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান।
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বলেন, সরকার দেশে বিনিয়োগ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও নানাবিধ সুবিধা সম্বলিত বিনিয়োগ প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এ ধরনের সুযোগ গ্রহণ করে অটোমোবাইল, তথ্য-প্রযুক্তি, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পুঁজিবাজার, ঔষধ, খাদ্য ও কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাত করা। সেইসঙ্গে হালকা প্রকৌশল প্রভৃতি খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
ডিসিসিআই সভাপতি জানান, ২০১৭ সাল হতে বাংলাদেশের প্রতি টন পাটজাত পণ্য ভারতে রপ্তানির ক্ষেত্রে ১৯ থেকে ৩৫১.৭২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের এন্টি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। যার ফলে ভারতের বাজারে আমাদের পাট রপ্তানি কমে এসেছে। এ অবস্থা নিরসনে দ্রুততার সাথে আরোপিত শুল্ক প্রত্যাহারের প্রস্তাব করেন।
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বলেন, ২০২০ সাল হতে ভারত সরকারের চালুকৃত ‘কাস্টমস রুলস ২০২০’ আইনের কারণে সাফটা ও আপটার আওতায় ভারতের বাজারে বাংলাদেশের পণ্য প্রবেশাধিকারের ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা গ্রহণ হতে সমস্যা হচ্ছে। বিষয়টি পুনঃবিবেচনার আহ্বান জানান। রিজওয়ান রাহমান বলেন, ভারতের দিল্লীতে বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী পণ্য সমুদ্র পথে পরিবহনের খরচ যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশসমূহের চেয়ে তুলনামূলক বেশি। এর ফলে দুদেশের বাণিজ্য সম্প্রারণের অন্যতম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। ডিসিসিআই সভাপতি, একই সাথে তিনি স্থলবন্দর সমূহের অবকাঠমো উন্নয়নে জোরারোপ করেন। সম্পাদনা : ভিক্টর রোজারিও