ব্যাংক কোম্পানি সংশোধন আইন দ্রুত প্রয়োগ প্রয়োজন, অভিমত অথনীতিবিদদের
আমিরুল ইসলাম : ব্যাংক-কোম্পানি আইন, ১৯৯১ (১৯৯১ সনের ১৪নং আইন)-এর অধিকতর সংশোধনকল্পে প্রণীত আইনকে কীভাবে দেখছেন জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আইন করার সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োগের প্রক্রিয়া না থাকলে ঋণখেলাপিরা ফাঁকফোঁকর দিয়ে বের হয়ে যাবে। কোনো এজেন্সি আইন পালন করবে কোনো এজেন্সি করবে না। অনেকে বলবে এটা আমাদের দায়িত্ব না। সুবিধাভোগী যে ঋণখেলাপি সেটা আমি জানি না। সবচেয়ে বড় জিনিস হচ্ছে তথ্যগুলোকে কনসুলেট করতে হবে। একটি জায়গায় যেন সবকিছু জানা যায়। উন্নতে দেশগুলোতে সোশ্যাল সিকিরিউটি নাম্বার থাকে। সেটা চেক করলে সব তথ্য বেরিয়ে আসে। তথ্য নিশ্চিত করতে না পারলে এবং কোন এজেন্সি থেকে কি কাজ করলো সেটা না জানালে এই আইন প্রয়োগ করা কঠিন হবে। আইন করে তালিকা করে বলে দিতে হবে কারা কারা এই আইন প্রয়োগের দায়িত্বে থাকবে। এজেন্সিগুলো জানবে কি করে একজন ব্যক্তি ঋণখেলাপি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি রিপোর্ট ব্যাংক রেগুলেটর ছাড়া কাউকে তথ্য দেবে না। বিআরটি চাইলে তথ্য দেবে কিনা সেটা নিশ্চিত করতে হবে। কেন্দ্রীয়ভাবে আমাদের এন আইডিতে যে ডাটাগুলো আছে তার সঙ্গে এগুলো যেন থাকে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ এর অধিকতর সংশোধনকল্পে প্রণীত আইন ঠিক আছে কিন্তু বাস্তবায়ন কতোটুকু হয় সেটা দেখার বিষয়। ঋণখেলাপিদের সময় বাড়ানো হচ্ছে, খেলাপিঋণকে খেলাপি হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে না। একদিকে ঋণ খেলাপিদের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে অন্য দিকে আইনের সংশোধন করা হচ্ছে। দেখা যাক আইনে কি পরিবর্তন আসে এবং তার প্রয়োগ কতোটকু হয়। আইনের বাস্তবায়নটাই এখানে মূল বিষয়।
রূপালী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আহমদ আল কবির, সংশোধিত ব্যাংক আইন বাস্তবায়ন খুব সহজ কাজ নয়। আইন অমান্য করলে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য হবে, এই বিধান রাখা উচিত। ঋণখেলাপির তালিকায় থাকায় ব্যক্তির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের যেকোনো প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি যেন মামলা করতে পারে সে ব্যবস্থা নিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সব প্রতিষ্ঠানের খবর রাখে না। ঋণখেলাপি হওয়াকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে না নিলে এই আইনের বাস্তবায়ন পুরোপুরি হবে না। ব্যাংক কোম্পানি আইনে এখনো আছে দুই টার্মের বেশি কেউ ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিচালক হিসেবে থাকতে পারবে না।
কিন্তু এখনো অনেক ব্যাংকেই আছে। আইন সংশোধন খুবই ভালো উদ্যোগ। ঋণখেলাপিদের সামাজিকভাকে চিহ্নিত ও বয়কট করার প্রক্রিয়া শুরু হবে এই আইনের মাধ্যমে। কিন্তু শাস্তিযোগ্য অপরাধ না হলে কাউকে না জানিয়ে ঋণখেলাপিরা বিভিন্ন সুবিধা নেবে। আইন বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নির্ধারণ করতে হবে এবং ঋণখেলাপি হওয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে হবে। দেশের যে কোনো নাগরিক আইন অমান্যের জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানাতে পারার ব্যবস্থা রাখতে হবে। আইনে এই কথাটি আসতে হবে। এটা না হলে এতো বড় একটা পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হবে না পুরোপুরি।