অধিক লাভে আখ, সাথী ফসল চাষ
মতিনুজ্জামান মিটু : পুরানো আখ চাষি মো. ওসমান গনি দুই বিঘা জমিতে বছরে আয় করেছেন ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা। তিনি দুই সারি আখের মাঝে সাথী ফসল হিসেবে বিএসআরআই-এর পরামর্শে আলু, টমেটো, মুগ, মসুর, সরিষা, তিল, পেঁয়াজ ও রসুনসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করেন। গত বছর তিনি ২ বিঘা (৬৬ শতক বা ০.২৭ হেক্টর) জমিতে চিবিয়ে খাওয়ার আখ চাষ করেন। তিনি ৩৩ শতকের ১ বিঘা জমিতে বিএসআরআই-এর আখ ৪২ (রংবিলাস) এর সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে পেঁয়াজ (জাত তাহেরপুরি) এবং অন্য ১ বিঘায় (৩৩ শতক) বিএসআরআই আখ ৪১ (অমৃত) এর সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে আলু (জাত বারি আলু ২৫) চাষ করেন।
তিনি নভেম্বর মাসে আখ, আলু ও পেঁয়াজ রোপন করেন। তারপর তিনি মার্চ মাসে আলু ও পেঁয়াজ সংগ্রহ করেন। আগস্ট মাস থেকে চিবিয়ে খাওয়া আখ বিক্রি শুরু করেন। প্রতি বিঘায় তিনি ২.৪ টন আলু ও ২.০ টন পেঁয়াজ পান। খরচ বাদ দিয়ে আলু থেকে (প্রতি কেজি ২০ টাকা দরে) বিঘাপ্রতি ৩০,০০০ টাকা ও পেঁয়াজ থেকে (প্রতি কেজি ৩০ টাকা দরে) বিঘাপ্রতি ৪০,০০০ টাকা লাভ পান। এ ছাড়াও তিনি ১ বিঘায় প্রায় ১০,০০০টি বিএসআরআই আখ ৪২ (রংবিলাস) জাতের চিবিয়ে খাওয়া আখ পান। তিনি প্রতিটি আখ ১৭ টাকা দরে ১,৭০,০০০ টাকায় বিক্রি করেন। এতে খরচ বাদ দিয়ে বিঘায় প্রায় ১ লাখ টাকা লাভ পান। তিনি অন্য এক বিঘায় প্রায় প্রায় ১০,০০০টি বিএসআরআই ৪১ (অমৃত) জাতের চিবিয়ে খাওয়া আখ পান। প্রতিটি আখ ১০ টাকা দরে তিনি প্রায় ১,০০.০০০ টাকার আখ বিক্রি করেন। এতে এই ১ বিঘায় উৎপাদন খরচ ৪০,০০০ টাকা বাদ দিয়ে তিনি ৬০,০০০ টাকা লাভ পান।
তিনি তার ২ বিঘায় (৬৬ শতক) জমিতে আখের সঙ্গে আলু ও পেঁয়াজ সাথী ফসল হিসেবে চাষ করে মোট ৭০,০০০ টাকা এবং আখ থেকে মোট ১,৬০,০০০ টাকা লাভ পান। সব মিলিয়ে ২ বিঘা জমি থেকে মোট ২,৩০,০০০ টাকা লাভ করেন। আখের সঙ্গে আলু ও পেঁয়াজ সাথী ফসল হিসেবে চাষ করার কারণে তিনি অতিরিক্ত ৭০,০০০ টাকা লাভ পান। যা আখ চাষে লাভের চেয়ে ৪৪% বেশি। তার এ সাফল্যের জন্য তিনি বিএসআরআই এর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বিশ্বাস করেন ‘অধিক লাভে আখ সাথী ফসলে চাষ।’ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রকাশিত ১০০ কৃষি প্রযুক্তি এটলাস এ মো. ওসমান গাণির সাফল্যের গল্প স্থান পায়।
চিবিয়ে খাওয়া, রস করে খাওয়া এবং উন্নত মানের গুড় তৈরির জন্য উপযুক্ত হওয়ায় বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে রংবিলাস নামে চাষ করা লাইনটি বাচাই করে ২০১৪ সালে সংগ্রহ করে। পরে লাইনটি বাছাই করে ২০১৪ সালে বিএসআরআই আখ ৪২ হিসেবে চাষাবাদের জন্য অনুমোদিত হয়। বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক কৃষিবিদ ড. মো. আমজাদ হোসেনের দপ্তর সূত্র জানায়, এ জাতের আখের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট হলো: বিএসআরআই আখ ৪২ জাতের ফুল হয় না। এটি আগাম পরিপক্ষ আখের জাত। আকর্ষণীয় রঙের কারণে এটি একটি জনপ্রিয় জাত। সনাতন ও রোপা উভয় পদ্ধতিতেই সহজে আবাদ করা যায়। জাতটি রোপনের উপযুক্ত। জাতটি রোপনের উপযুক্ত সময়। অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস। গড় ফলন প্রতি হেক্টরে ১৬৯ টন।
জাতটি বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও গাজীপুর জেলার জন্য উপযোগী। তবে বাংলাদেশের সব এলাকার উঁচু ও মধ্যম উঁচু জমিতে চাষ করা যেতে পারে এ জাতটি। এই জাতের আখ চাষে সুবিধার মধ্যে রয়েছে; জাতটি চিবিয়ে খাওয়া, রস করে খাওয়া এবং উন্নতমানের গুড় তৈরি করে কৃষক লাভবান হয়। জাতটি আগাম পরিপক্ক তাই বাজার মূল্য বেশি থাকায় চাষি লাভবান হয়। গাছ বৃদ্ধির প্রথম দিকে এ জাতের সঙ্গে আলু, পেঁয়াজ ও রসুনসহ বিভিন্ন ফসল হিসেবে চাষ করা যায়। সম্পাদনা : ভিক্টর রোজারিও