অর্থ পাচার বন্ধে দেশে বিনিয়োগের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করতে হবে
আমিরুল ইসলাম : অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুব উল্লাহ বলেছেন, অর্থ অনেক কারণেই পাচার হয়। যেভাবে দেশ চলছে এতে করে মানুষের যদি আস্থা না থাকে, তাহলে যাদের অর্থ আছে তারা মনে করেন এদেশে থেকে লাভ নেই। এখানে থাকলে টাকাপয়সার অপচয় হবে, নষ্ট হবে এবং ধন সম্পদ ধরে রাখতে না পারার আশঙ্কায় তারা বিদেশে পারি জমান। আরেকটা কারণ হচ্ছে লোভ। ওভার ইনভয়েন্সিং করে বিদেশে তারা কিছু টাকা গচ্ছিত রাখেন। এক্সপোর্টের আর্নিংয়ের একটা অংশ গচ্ছিত রাখেন সেদেশে তাদের খরচ মেটানো ও জীবনের অন্যান্য সুযোগ-সুবধিা কাজে লাগানোর জন্য। ব্যবসায়ী শ্রেণির লোকেরা বিষয়-সম্পত্তি বাজেয়াপ্তকরণ বা জাতীয়করণের ভয়ে অর্থ পাচার করে। দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ না থাকার কারণে এবং ঘাটে ঘাটে চাঁদা দিতে হয় বলে তারা মনে করেনÑ দেশে কোনো শিল্পকারখানা তৈরি করা যাবে না। সাধারণ মানুষের জন্য কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করা যাবে না। এরকম পরিবেশ তৈরি হলে তারা দেশ ছেড়ে চলে যান।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপে তিনি বলেন, পোশাকখাতকে অর্থপাচারের মাধ্যম হিসেবে যেন ব্যবহার করতে না পারে তার জন্য শুল্ক গোয়েন্দাদের নজরদারি বাড়াতে হবে। প্রকৃতপক্ষে কতো টাকায় পণ্য বিক্রি হচ্ছে? কতো টাকা ব্যবসায়ীরা বিদেশে রেখে দিচ্ছেন এবং কতো টাকা কাগজে-কলমে দেখাচ্ছেন? শুল্ক গোয়েন্দা ও এনবিআরের গোয়েন্দাদের কাজ কী? মূল উদ্দেশ্য দোষীকে খুঁজে বের করা হতে পারে না। নৈতিক জায়গায় এটা ঠিক আছে, কিন্তু অর্থনীতির জগতে পুরো বিষয়টিকে দেখতে হবে ইনসেনটিভ রেজাল্টের হিসেবে। যদি ইনসেনটিভ থাকে টাকা বিদেশে রাখার, তাহলে মানুষ টাকা বিদেশে রাখবে, পাচার করবে। যদি ইনসেনটিভ থাকে দেশে বিনিয়োগ করার, দেশে শিল্পকারখানা গড়ে তোলার, তাহলে সেই টাকা দেশেই ব্যবহার হবে। এখন প্রশ্নটা হচ্ছেÑ সরকার যে নীতি অনুসরণ করছে, সে অনুযায়ী ইনসেনটিভটা কোন দিকে ভারী? বিদেশে টাকা রাখার জন্য ভারী হলে টাকা বিদেশে রাখবে, দেশে রাখার জন্য ভারী হলে দেশে রাখবে। দেশে আরও নতুন নতুন কলকারখান হবে। মানুষর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। ব্যবসায়ীদের ঘাটে ঘাটে টাকা পয়সা দিতে হয়, ব্যবসা চালু করার জন্য বিভিন্ন অফিসে যোগাযোগ করতে হয়। এ সমস্ত বিষয়গুলো ঠিক করতে হবে। এগুলোকে সহায়ক পরিবেশের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। বাজার অর্থনীতিতে সরকারের কাজ ব্যবসা করা নয়, ব্যবসার সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা।