আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ১
বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৪তম
সোহেল রহমান ও আখতারুজ্জামান : বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা সূচকে বিশ্বের ১১৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৪তম। তবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বনিম্নে অবস্থান রয়েছে। দ্য ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ)-এর নবম বার্ষিক বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা সূচক (জিএফএসআই) ২০২০ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান জানান, আমাদের দেশে খাদ্য অনিরাপদ। এর অনেক কারণ রয়েছে। প্রথম মত আমরা যারা ভোক্তা তাদের মধ্যে খাদ্য সচেতনতা নেই। আমরা যেখানে রান্না করা খাবার রাখি সেখানেই আবার অন্যান্য সবজি রাখি। এটা সচেতনার অভাবেই করে থাকি।
তিনি বলেন, অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা অতি মুনাফার আশায় খাদ্যে ভেজাল মেশায়। তবে সরকার চেষ্টা করছে এতে কোনো সন্দেহ নেই। খাদ্য নিরাপদ রাখতে আইন তৈরি করা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। তবে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে আরও বেশি কাজ করতে হবে। সাধারণ মানুষদের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে বিশেষ বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য অধ্যাপক ড. আব্দুল আলিম জানান, ইআইইউ যে সব সূচক নিয়ে কাজ করে তা অর্জন করা অনেক কঠিন। তবে আমরা সেগুলোতেও আগের তুলনায় ভালো করছি।
তিনি জানান, নিরাপদ খাদ্যের বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে। আমরা জুতা ক্রয় করি এসি মার্কেট বা দোকান থেকে আর খাদ্যপণ্য শাক সবজি ক্রয় করি ময়লা আবর্জনার পাশ থেকে। এভাবে চলতে তো আর আমার নিরাপদ খাদ্যের বিষয়ে পিছিয়ে থাকব। আমরা যত কাজই করি না কেন তা ভালো ফল বয়ে আনবে না। অনেকেই আছেন যারা এক দেশ থেকে অন্য আর এক দেশে যান ভালো খাবার বা নিরাপদ খাবারের জন্য।
দ্য ইআইইউ ২০১২ সাল থেকে তিনটি ক্যাটাগরির ওপর বিবেচনা করে জিএফএসআই প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে। এগুলো হচ্ছেÑ খাদ্য সামর্থ্য (অ্যাফর্ডিবিলিটি), প্রাপ্যতা (অ্যাভেইলিবিলিটি) এবং গুণমান ও সুরক্ষা (কোয়ালিটি ও সেফটি)। গত বছর নতুন করে চতুর্থ ক্যাটাগরি হিসেবে প্রাকৃতিক সম্পদ ও জলবায়ু অভিযোজন (ন্যাচারাল রিসোর্সেস ও রিসিলিয়েন্স) অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া সূচকে খাদ্য নিরাপত্তা ও অংশগ্রহণ বিষয়ে সরকারি নীতি ও প্রতিশ্রুতি, খাদ্যের পুষ্টিমান ভালো থাকা, খাদ্যশস্য নষ্ট কম হওয়া ও কৃষি উৎপাদনে অস্থিরতা কম থাকা অন্যতম অর্জন হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ সামগ্রিকভাবে ১০০ এর মধ্যে ৫০ পয়েন্ট অর্জন করেছে। ২০১৮ সালে এই স্কোর ছিল ৫১ দশমিক ৬, যা এর আগের বছরের স্কোরের তুলনায় শূন্য দশমিক ৩ কম। এ বছর এটি আরও ১ দশমিক ৬ পয়েন্ট কমেছে। সূচক কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে প্রধানত খাদ্য তালিকায় বৈচিত্র্য নিশ্চিত করা, প্রাকৃতিক সম্পদেরÑ যেমন কৃষি জমি ও পানির ব্যবহার এবং জলবায়ু-সহিষ্ণু কৃষি বাস্তবায়নে দুর্বল কার্যকারিতা ইত্যাদি কারণে পয়েন্ট কমেছে।
২০২০ সালের র্যাংকিং বলছে অতিমহামারী ও জলবায়ু পরিবর্তন বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। এই গবেষণাটি বলছে, আমাদের ভবিষ্যৎ ততটাই সমৃদ্ধ হবে, আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা যতটা থাকবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সারা বিশ্বের খাদ্য নিরাপত্তাই বড় ধরনের সঙ্কটে পড়ছে।
এবার এই সূচকে নতুন একটি ভ্যারিয়েবল যুক্ত ছিলো। ন্যাচারাল রিসোর্সেস অ্যান্ড রেসিলেন্স ক্যাটাগরিতে সবচেয়ে খারাপ করেছে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে স্কোর ৩৫.৮। খাদ্য সংগ্রহ সামর্থ্যে ৪৮.৩, কোয়ালিটি ও নিরাপত্তায় ৪০.৯, সরবরাহে স্কোর ৬৪.৪। দক্ষিণ এশিয়ার সবগুলো দেশ এই তালিকায় বাংলাদেশের উপরে রয়েছে। পাকিস্তান (৮০), নেপাল (৭৭), শ্রীলঙ্কা (৭৫), ভারত (৭১) ও মিয়ানমার (৭০)। খাদ্য নিরাপত্তায় বিশ্বের শীর্ষ ৫ দেশ যথাক্রমেÑ ফিনল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া ও চেক প্রজাতন্ত্র। সর্বনিম্ন অবস্থানে থাকা ৫ দেশ হলোÑ ইয়ামেন, সুদান, জাম্বিয়া, মালাউয়ি ও সিয়েরা লিওন।