টেকসই উন্নয়নশীল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় এখনই দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে
মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী
সম্প্রতি জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্টের (সিডিপি) বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে উত্তরণের সুপারিশ করেছে। উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে উত্তরণে বাংলাদেশ তিনটি সত্যই পূরণ করেছে। এখন বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে উন্নয়ন, প্রবৃদ্ধি, জনসম্পদ সৃষ্টিসহ সকল ক্ষেত্রে সিডিপির এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার নিয়মাবলী অনুসরণ করে চলতে হবে। বাংলাদেশের সম্মুখে উন্নয়নশীল এবং উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে ওঠার অপার সম্ভাবনা যেমন তৈরি হয়েছে, একইসঙ্গে সম্ভাবনাসমূহকে কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে যথেষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে, এর মাধ্যমেই রাষ্ট্র চরিত্রের উন্নয়ন ও পরিবর্তন প্রক্রিয়াগতভাবেই সাধিত হবে। রাষ্ট্রপরিচালনায় যে সরকার রয়েছে এবং ভবিষ্যতে যে বা যারাই ক্ষমতায়আসীন হবে তাদের উন্নয়নের নীতি ও কৌশল অব্যাহত রেখেই উন্নয়নশীল রাষ্ট্র থেকে উন্নত রাষ্ট্রে উত্তরণ ঘটাতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের সকল মন্ত্রণালয় এবং বিভাগসমূহকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় করণীয় সম্পর্কে স্পষ্ট একটি ধারণা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যেসব উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে সেগুলোতে যৌক্তিক কারণ ছাড়া প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি ও অতিরিক্ত অর্থ চাওয়া যাবে না। এককথায়, তিনি প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি এবং অতিরিক্ত অর্থের আবেদন নাকচ করার কথায় বুঝিয়ে দিয়েছেন। দীর্ঘদিন থেকে উন্নয়ন প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রিতা এবং অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের মাধ্যমে ব্যয় বৃদ্ধির যে সংস্কৃতি চালু রেখেছিলো, তা বিশেষজ্ঞ মহল সবসময় সমালোচনার চোখে দেখেন এবং রাষ্ট্রের অর্থের অপচয় রোধের কথা বলে আসছিলেন। কিন্তু আমলাতন্ত্রের অভ্যন্তরীণ সংস্কৃতির সঙ্গে বিভিন্ন গোষ্ঠী সম্মলিতভাবে উন্নয়ন প্রকল্পের নামে নিজেদের পকেট ভারি করার নানা কৌশল অবলম্বন করেই অর্থ লোপাটের এমন ধারা অব্যাহত রেখেছিলো। এভাবেই বাংলাদেশে সরকারি বিভিন্ন কর্মকা-ে অর্থের অপচয় ও দুর্নীতি বেশ ক্রিয়াশীল ছিলো এবং বর্তমানেও আছে। সাম্প্রতিক সময়ে দু’একটি মন্ত্রণালয়ের অধিদপ্তরের সর্বনিম্ন থেকে সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি, সম্পদ লুটপাট, বিত্তবৈভব এবং বিদেশে অর্থ পাচারের বেশ কিছু ঘটনা উদ্ঘাটিত হয়েছে, যা সকল মহলকে বিস্মিত করেছে। সরকারের সকল মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর এবং উপজেলা শাখা সমূহের অভ্যন্তরের চিত্র প্রায় একই রকম। সুতরাং নির্দ্বিধায় বলা চলে যে, এসব অপচয়, দুর্নীতি, অনিয়ম এবং কাজের মানহীনতা রোধ কার গেলে বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ রাষ্ট্রের সকল ক্ষেত্রেই ব্যাপক উন্নতি ও পরিবর্তন অনেক আগেই সাধিত হতো।
তারপরও বাংলাদেশ মাত্র একযুগের প্রচেষ্টায় আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন অর্জন করেছে তার ফলেই স্বল্পোন্নত দেশ থেকে নিম্ন মধ্যম আয় এবং উন্নয়শীল দেশের কাতারে উত্তরণ ঘটার স্বীকৃতি লাভ মোটেও খাটো করে দেখার বিষয় নয়। এখন দরকার হচ্ছে সম্মুখের দিনগুলোতে যেসব লক্ষ্যমাত্রা সরকার নির্ধারণ করেছে, সেগুলোকে সময়মতো পূরণ করেই এগিয়ে যাওয়া। ২০২৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে চূড়ান্তভাবে পরিণত করতে হবে। এরপর ২০৪১ সালে উন্নত দেশে উত্তরণ ঘটার জন্য দেশকে নেতৃত্ব দিয়ে যেতে হবে। রাষ্ট্রীয় সকল ক্ষেত্রে অপচয় এবং দুর্নীতি সর্বনি¤œ পর্যায়ে নামিয়ে আনতে হবে। উন্নত দুনিয়ায় সরকারি-বেসরকারি সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতি এবং অপচয়কে কঠোর আইনে ও নিয়ম-কানুনে রোধ করা হয়, ফলে বিপুল অর্থ রাষ্ট্রের সরকারি-বেসরকারি অর্থনৈতিক ও সামাজিক কর্মকা-ে বড় ধরনের অবদান রাখে। এভাবেই দেশগুলো উন্নত হচ্ছে আমাদেরও উন্নত জাতীয় রাষ্ট্র গঠনে অপচয় ও দুর্নীতি রোধের মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া খাতসমূহ এবং জনগণকে দক্ষ, শিক্ষিত, কারিগরি ও প্রযুক্তি জ্ঞানে-সম্পদে পরিণত কারার নীতি ও কৌশলে অগ্রসর হতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।
পরিচিতি : শিক্ষাবিদ। অনুলেখক : আব্দুল্লাহ মামুন