ইউনেস্কোর বিশ^ ঐতিহ্য-স্মারক তালিকায় বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ : একটি সামাজিক ও যোগাযোগতাত্তি¡ক বিশ্লেষণ
ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক
‘মুক্তি? ওরে, মুক্তি কোথায় পাবি/মুক্তি কোথায় আছে’Ñরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ÔCourage and perseverance have a magical talisman, before which difficulties disappear and obstacles vanish into airÕ.ÑJohn Quincy Adams যুক্তরাষ্ট্রের ৬ষ্ঠ রাষ্ট্রপতি
ভাষা হচ্ছে শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা, প্রশাসনসহ সকল ক্ষেত্রের মূল চালিকাশক্তি। মায়ের ভাষাতেই আমরা খুঁজে পাই জীবন জীবিকার প্রাণশক্তি। পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরপরই গভর্নর জেনারেল জিন্নাহর অযৌক্তিক ঘোষণার কারণেই ভাষা আন্দোলন শুরু হয়ে যায়। পাকিস্তানিরা বাংলা ভাষার গুরুত্ব অস্বীকার করে। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের আইন অনুষদের অধ্যায়নরত তদানিন্তন ছাত্র তরুণ ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের প্রথম পর্বে ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ গ্রেফতার হন। গ্রেফতারের পূর্বেই তিনি বলেছিলেন, ‘পাকিস্তানের এই অদ্ভুত কাঠামোতে আর যাই হোক বাঙালির মুক্তি সম্ভব নয়। বাঙালির মুক্তির জন্য প্রয়োজন তাদের স্বাধীন মাতৃভ‚মি।’
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ৬ মে তারিখে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের আমন্ত্রণে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে এসে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘স্বাধীনতা আন্দোলনের সূচনা হয় ১৯৪৮ সালের ১১ই মার্চ।’ (দৈনিক বাংলা, ৭ মে ১৯৭২)। পৃথিবীর প্রতিটি মাতৃভাষাই যে গুরুত্বপূর্ণ সেই বোধটি এসেছে আমাদের একুশে ফেব্রæয়ারি থেকে। ইউনেস্কোর সাধারণ অধিবেশনে ১৯৯৯ সালে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০০০ সাল থেকে সমগ্র বিশে^ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে একুশে ফেব্রæয়ারি উদযাপিত হয়ে আসছে। ইউনেস্কোর উদ্যোগে এ বৎসর থেকে ‘ইউনেস্কো-বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সৃজনশীল অর্থনীতি পুরস্কার’ প্রদান করা হবে। গত বৎসর ১১ই ডিসেম্বর ইউনেস্কোর ২১০তম নির্বাহী বোর্ডের সভায় এই পুরস্কার প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। মুজিব শতবর্ষের এই সময়ে বিশ^ সংস্থা কর্তৃক তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য এ পুরস্কার ঘোষণা আমাদেরকে দারুণভাবে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করে।
বঙ্গবন্ধুর ৪৫তম শাহাদৎ বার্ষিকীতে ইউনেস্কো মহাপরিচালক অদ্রিয়া জুলে যে বাণী দিয়েছেন তাতে তিনি উল্লেখ করেছেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিকট বঙ্গবন্ধুর জীবনদর্শন সর্বদাই অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। তাঁর ভাষায়, ÔIt is certain that BangabandhuÕs legacy will continue to be a great source of inspiration for generations to come and for those working to reinvent the world. The Unesco shares this aspiration for an inclusive, equitable, and democratic society – a dream that Bangabandhu presented on March 7, 1971 in a historic speech now inscribed on Unesco Memory of the World International Register.
ইতোপূর্বে ইউনেস্কোর ১০ম মহাপরিচালক ইরিনা বকোভা ৩০ অক্টোবর, ২০১৭ তারিখে ঘোষণা করেন যে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণটি ইউনেস্কোর বিশ^ ঐতিহ্য-স্মারক তালিকায় (গবসড়ৎু ড়ভ ঃযব ডড়ৎষফ ওহঃবৎহধঃরড়হধষ জবমরংঃবৎ) সংযোজিত হয়েছে। ১৯৯৭ সাল থেকে বিশ^ সভ্যতার ঐতিহ্য-স্মারক তালিকা প্রণয়নের কাজ শুরু করে ইউনেস্কো। মানব সভ্যতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ দালিলিক ঐতিহ্যসমূহ সংরক্ষণ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সহজে অভিগম্য করার লক্ষ্যে ইউনেস্কো এই কর্মসূচি গ্রহণ করে। আন্তর্জাতিক সাময়িকী নিউজউহক কর্তৃক ‘রাজনীতির কবি’ বলে অভিহিত বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ছিল প্রকৃতপক্ষে রাজনীতির মহাকাব্য। রাজনীতির লক্ষ্য যদি হয় জনগণের কল্যাণ, তাহলে স্বাধীনতা অর্জন ও সমুন্নত রাখাই হবে জনকল্যাণের সর্বোচ্চ ধাপ। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ মূলত বাঙালি জাতির মুক্তির মহাকাব্য।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর এই ঐতিহাসিক ভাষণ সম্পর্কে বলেন, ‘স্বাধীনতা সংগ্রামের চ‚ড়ান্তপর্বে ৭ মার্চের এই ভাষণ গোটা জাতিকে উপনিবেশিক পাকিস্তানি শাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করে। জাতির পিতার এই সম্মোহনী ভাষণে অনুপ্রাণিত হয়ে বাঙালি জাতি সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্রই ছিল ৭ মার্চের এই অনন্যসাধারণ ভাষণ। বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণে মানবমুক্তির চিরন্তন সত্যটি জোরালোভাবে প্রস্ফুটিত হয়েছে এবং অন্ধকারকে পেছনে ফেলে আলোর পথে যাত্রার গতিপ্রবাহ সৃষ্টি করেছে। বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণের বিশ^ প্রাসঙ্গিকতা চিরদিন থাকবে কারণ বাঙালির মুক্তি তথা মানবমুক্তি একটি শ^াশ^ত সত্য যার ওপর ভিত্তি করে মানবসভ্যতা এগিয়ে যাচ্ছে।
ইতিহাসবিদ ও লেখক জ্যাকব এফ ফিল্ড সম্পাদিত ‘ডব ঝযধষষ ঋরমযঃ ঙহ ঞযব ইবধপযবং’ গ্রন্থে পুরো পৃথিবীকে আন্দোলিত করেছে এমন ৪১টি ভাষণের মাঝে স্থান করে নিয়েছে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ। খ্রিস্টপূর্ব ৪৩১ সাল থেকে ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এই সুদীর্ঘ সময়কালের ইতিহাসে যে ভাষণসমূহ মানবসভ্যতায় স্থায়ী প্রভাব ফেলেছে, কালজয়ী অনুপ্রেরণাদায়ী সে ভাষণগুলোই এ গ্রন্থের আধেয়। একটি ভাষণ যে কতো শক্তিশালী হতে পারে, নিরস্ত্র বাঙালিকে সশস্ত্র বাঙালিতে রূপান্তর করতে পারে ও পরাধীন বাঙালিকে স্বাধীন জাতিসত্তা দিতে পারে তার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণ। সাতই মার্চের রেসকোর্স ময়দানের চিত্র উত্থাপন করে পরবর্তী দিন আট মার্চ তারিখের দৈনিক ইত্তেফাকে ‘উত্তাল-উদ্দাম জলধিতরঙ্গ’ শিরোনামে লেখা হয়- ‘৭ মার্চ একটি অবিস্মরণীয় দিন। অনন্যসাধারণ এই দিনের ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দান। অবিস্মরণীয় এই অনন্য দিনের রেসকোর্সে বাংলার স্বাধিকার আন্দোলনের মহানায়ক শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর নির্দেশকামী স্বাধিকার সৈনিকদের সংগ্রামী সম্মেলন। সংগ্রামী বাংলা দুর্জয় দুর্বিনীত।’
অধুনালুপ্ত ‘দৈনিক পাকিস্তান’ ‘লক্ষকণ্ঠের বজ্রশপথ” শিরোনামে পরদিনের (৮ মার্চ, ১৯৭১) পত্রিকায় বর্ণনা করে ‘লক্ষ হস্তে শপথের বজ্রমুষ্টি মুহূর্মুহু উত্থিত হচ্ছে আকাশে। জাগ্রত বীর বাঙালির সার্বিক সংগ্রামের প্রত্যয়ের প্রতীক, সাত কোটি মানুষের সংগ্রামী হাতিয়ারের প্রতীক বাঁশের লাঠি মুহূর্মুহু ¯েøাগানের সাথে সাথে উত্থিত হচ্ছে আকাশের দিকে। এই ছিল রবিবারের (৭ মার্চ, ১৯৭১) রমনার রেসকোর্স মায়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক সভার দৃশ্য।’
‘জয় জনতার জয়’ শিরোনামে দৈনিক ইত্তেফাক পরদিন অর্থাৎ ৮ মার্চ, ১৯৭১ তারিখে রিপোর্ট করে যে গভীর রাত্রিতে প্রাপ্ত খবরে প্রকাশ, ‘সামরিক কর্তৃপক্ষ শেষ পর্যন্ত ঢাকা বেতার হইতে শেখ মুজিবুর রহমানের রমনা রেসকোর্স ময়দানে প্রদত্ত ভাষণের পূর্ণ বিবরণ প্রচারের অনুমতি দিতে স্বীকৃত হইয়াছেন। সোমবার (৮ মার্চ, ১৯৭১) সকাল সাড়ে ৮ ঘটিকায়, ঢাকা বেতার কেন্দ্র হইতে শেখ মুজিবুর রহমানের রমনা রেসকোর্স ময়দানে প্রদত্ত ভাষণ প্রচার করা হইবে। বাংলার অন্যান্য বেতারকেন্দ্র হইতেও ইহা রিলে করা হইবে।’ বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী ও হত্যাকাÐের দোসররা দীর্ঘ একুশ বৎসর বঙ্গবন্ধুর এই সম্মোহনী ভাষণটিকে একদিনের জন্যও প্রচার করেনি। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের একুশ বৎসর পর ১৯৯৬ সালের ২৩শে জুন সন্ধ্যায় বাংলাদেশ টেলিভিশন প্রথমবারের মত এই ভাষণ সম্প্রচার করে। বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ একাত্তরের অপরাহ্নে যখন ভাষণ দিচ্ছিলেন তখন বেতার-টেলিভিশন বন্ধ করার যে ঘটনা ঘটিয়েছিল পাকিস্তানি শাসকেরা, ঠিক তেমনই ঘটনা আমাদের প্রত্যক্ষ করতে হয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশে। ৮ মার্চ, ১৯৭১ তারিখের সংখ্যায় অধুনালুপ্ত দৈনিক আজাদ ‘ঢাকা বেতার কেন্দ্র নীরব’ শিরোনামে নি¤েœাক্ত সংবাদ পরিবেশন করে : ‘ঢাকা বেতার কেন্দ্র গতকাল রবিবার সহসা স্তব্ধ হইয়া যায়। অপরাহ্ন ৩টা ১৫ মিনিট হইতে এই কেন্দ্র আর কোন অনুষ্ঠান প্রচার করেনি। কবে আবার এই কেন্দ্র চালু হইবেÑ সংশ্লিষ্ট কোনো মহলই গতকাল তাহা জানাইতে পারে নাই।’
‘গতকাল বেতারে বঙ্গবন্ধুর রেসকোর্সের ভাষণ প্রচারের কথা ছিল। তদানুযায়ী ব্যবস্থাও করা হয়। বঙ্গবন্ধু যখন রেসকোর্সে বক্তৃতা-মঞ্চে আরোহন করেন, তখন ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ এই গানটি প্রচার করা হয়। কিন্তু নেতার বক্তৃতা শুরু হওয়ার পর নাকি একটি মহল ইহা রিলে করিতে বাধা দেয়। অতঃপর, রোসকোর্স ময়দান হইতেই শেখ মুজিবুর রহমান বেতারের বাঙালি কর্মচারীদের অসহযোগ শুরু করার আহŸান জানান। সঙ্গে সঙ্গে কর্মচারীগণ নিজ নিজ দায়িত্ব ত্যাগ করিয়া রাস্তায় নামিয়া আসে এবং বেতারও স্তব্ধ হইয়া যায়।’ (আজাদ, ৮ মার্চ ১৯৭১)
ঐদিন অর্থাৎ ৭ মার্চ (১৯৭১) সন্ধ্যায় ঢাকায় অবস্থানরত গণঐক্য আন্দোলনের প্রধান অবসরপ্রাপ্ত এয়ার মার্শাল আসগর খান যখন এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, ‘শেখ মুজিবের গৃহীত সকল ব্যবস্থাই যুক্তিসংগত এবং সংখ্যাগুরু প্রতিনিধির বৃহত্তম দলের প্রধান হিসেবে শেখ মুজিবের দেশকে শাসন করার ন্যায্য অধিকার রহিয়াছে।’ বাংলাদেশের স্বাধীনতার পেছনে এই ভাষণের ভ‚মিকা ও তাৎপর্য অনুধাবন করে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তাই এই ঐতিহাসিক ভাষণটি আজ আমাদের সংবিধানের অংশ। আজ থেকে পঞ্চাশ বৎসর পূর্বে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রদত্ত একাত্তরের ৭ মার্চের ভাষণ যোগাযোগ বিজ্ঞানের তাত্তি¡ক প্রয়োগের এক বিস্ময়কর ঘটনা। যোগাযোগ বিষয়ে আধুনিক নিয়ম-কানুনের এক আশ্চর্য প্রতিফলন ঘটেছে এ ঐতিহাসিক ভাষণে।
প্রতি মিনিটে গড়ে ৫৮ থেকে ৬০টি শব্দ উচ্চারণ করে বঙ্গবন্ধু ১৯ মিনিটে এ কালজয়ী ভাষণটি শেষ করেছিলেন। সম্প্রচারতত্তে¡ প্রতি মিনিটে ৬০ শব্দের উচ্চারণ একটি আদর্শ হিসাব। একহাজার একশত সাতটি শব্দের এ ভাষণে কোনো বিরক্তিকর পুনরাবৃত্তি নেই, কোনো বাহুল্য নেই Ñ আছে শুধু সারকথা, সারমর্ম। তবে দু-একটি স্থানে পুনরাবৃত্তি বক্তব্যের অন্তর্লীন তাৎপর্যকে বেগবান করেছে। ভাষণের সূচনাপর্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বলা হয়ে থাকেÑ ‘ঞযবৎব রং হড়ঃযরহম ষরশব ধ মড়ড়ফ নবমরহহরহম ভড়ৎ ধ ংঢ়ববপয’। বক্তব্যের প্রারম্ভে শ্রোতার মানসিক অবস্থান (ধঁফরবহপব ড়ৎরবহঃধঃরড়হ) ও সাম্প্রতিক ঘটনা উল্লেখ করা অত্যাবশ্যক বলে যোগাযোগতত্তে¡ যা বলা হয় (ৎবভবৎবহপব ঃড় ধঁফরবহপব ধহফ ৎবভবৎবহপব ঃড় ৎবপবহঃ যধঢ়ঢ়বহরহমং) তার আশ্চর্য প্রতিফলন ঘটে বঙ্গবন্ধুর এ যুগান্তকারী ভাষণে।
বঙ্গবন্ধু ভাষণ শুরু করেছিলেন, ‘ভাইয়েরা আমার, আজ দুঃখভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। আপনারা সবই জানেন এবং বোঝেন। আমরা আমাদের জীবন দিয়ে চেষ্টা করেছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় আজ ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, রংপুরে আমার ভাইয়ের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়েছে। আজ বাংলার মানুষ মুক্তি চায়, বাংলার মানুষ বাঁচতে চায়, বাংলার মানুষ তার অধিকার চায়।’ অত্যন্ত কার্যকর বক্তৃতার অবতরণিকা- যা পুরো বক্তৃতার মূলভিত্তি তৈরি করেছে ও শ্রোতাকুলকে অভ্যুদিত বক্তৃতার আভাস দিচ্ছে। পুরো বক্তৃতার আধেয় বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, বক্তৃতাটি মূলত পৃথিবীর মানচিত্রে একটি নতুন দেশের অভ‚্যদয়বার্তা ও তার স্বাভাবিক অনুযাত্রায় পাকিস্তানের তদানিন্তন রাষ্ট্রকাঠামোর পূর্বাঞ্চলের পরিসমাপ্তির প্রজ্ঞপ্তি ও বিবরণী। বাংলাদেশের স্বাধীনতার মূলমন্ত্র ও মূলসূত্র ৭ মার্চের এ বক্তৃতা। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস এ বক্তৃতা ছিল আমাদের সিংহনাদ বা যুদ্ধশ্লোগান। শিশু-কিশোর-যুবক-বৃদ্ধ সকলের গায়ের রোম খাড়া হয়ে যেতো এ বক্তৃতা শ্রবণে। বঙ্গবন্ধুর স্বকণ্ঠে বক্তৃতা সাড়ে সাতকোটি বাঙালিকে শুধু ঐক্যবদ্ধই করেনি, মাত্র আঠার দিন পর তাদেরকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার মন্ত্রে দীক্ষিত করেছিল। কারণ এ ভাষণই ছিল কার্যত (ফব ভধপঃড়) বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা যা পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে।
সংক্ষিপ্ত। লেখক : সাবেক উপাচার্য, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়
তথ্য নির্দেশিকা : -ইউনেস্কো ওয়েবসাইট। -বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ রাজনীতির মহাকাব্য, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, ঢাকা, ২০১৭। ভড়ড়ঃবৎ;যবধফবৎ;