আমার দেশ • নগর সংস্করণ • প্রথম পাতা • লিড ১
সাবেক ও বর্তমান চেয়ারম্যানের পাল্টাপাল্টি চিঠি পদ্মা ব্যাংকে দুর্নীতির নতুন মোড়
মো. আখতারুজ্জামান : ঋণ কেলেঙ্কারিতে জর্জরিত ও নানা অনিয়মের কারণে ব্যাংকপাড়ায় সমালোচনার শীর্ষ ছিলো ফারমার্স ব্যাংক। পরে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ব্যাংকটির নাম পরিবর্তন করে পদ্মা ব্যাংক করা হয়। নাম পরিবর্তন নিয়ে অনেক আশা বাদি ছিলো বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু এখনও দুর্নীতি পিছু ছাড়ছে না ব্যাংকটির। বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসিতে দেয়া ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান মহীউদ্দীন খান আলমগীর এবং ব্যাংকটির বর্তমান চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ শরাফতের পাল্টাপাল্টি চিঠির বিষয়ে দুর্নীতির নতুন মোড় নিয়েছে ব্যাংকটিতে।
চিঠিতে তারা পরস্পর পরস্পরকে ব্যাংকটির অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তুলেছেন। ব্যাংকটির নাম পরিবর্তনের পর দুর্নীতির বিষয়টা অনেকটা আলোচনার বাহিরে চলে যায়। দুই বছর পর আবার আলোচনায় চলে এসেছে।
গত ৭ মার্চ পদ্মা ব্যাংকের অন্যতম স্পন্সর-শেয়ারহোল্ডার মহীউদ্দীন খান আলমগীর বাংলাদেশের ব্যাংকের গভর্নরকে এক চিঠি দেন। চিঠিতে তিনি পদ্মা ব্যাংকের ১০০ কোটি টাকার এক বিনিয়োগ তহবিল নিয়ে তদন্তের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক অনুরোধ জানিয়েছেন। এই অর্থ ব্যাংকটির বর্তমান চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ শরাফতের মালিকানাধীন স্ট্র্যাটেজিক ইকুইটি ম্যানেজমেন্ট নামের একটি প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে বলে তিনি তার চিঠিতে উল্লেখ করেন।
চিঠিতে মহীউদ্দীন খান আলমগীর বলেন, তার অনুপস্থিতিতে ২০১৫ সালের ১ নভেম্বরে তৎকালিন ফারমার্স ব্যাংকের একটি বোর্ড মিটিংয়ে এই তহবিল ছাড়ের অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু এই বিনিয়োগের লভ্যাংশ বা মূলধন কিছুই ফেরত আসেনি। ব্যাংকের পরিচালক হওয়ার পর এই টাকা তুলে নিয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান ব্যাংক আইন লঙ্ঘন করেছেন। বেআইনিভাবে এই পাচারের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। যা ব্যাংকের অর্থের অপব্যবহার। এ বিষয়ে তদন্ত করে অর্থ শেয়ারহোল্ডারদের কাছে ফেরত দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন মহীউদ্দীন খান।
অন্যদিকে একই দিনে পদ্মা ব্যাংক থেকে দুর্নীতি দমন কমিশন এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) চিঠি পাঠানো হয়েছে। পদ্মা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. এহসান খসরু স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, সিটি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে বিনিয়োগ করার নামে আট কোটি ৩৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও ব্যাংকের অডিট কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতী। তারা উভয়েই ব্যাংক থেকে ঋণ দেয়ার নাম করে গ্রাহকদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক তদন্তেও তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার ও ঋণ প্রদানের অনিয়মের বিষয়টি উঠে এসেছে। পদ্মা ব্যাংক ৮৪৫ দশমিক ৪৫ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ আদায়ে মহীউদ্দীন খান আলমগীরের সগযোগিতা চেয়েছে বলেও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ চিঠিতে জানিয়েছে। এই বিষয়ে আলমগীর ব্যাংকে কোনো ধরনের সহযোগিতা করেননি বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
উল্লেখ, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুসন্ধানে ফারমার্স ব্যাংকের গ্রাহকদের কাছ থেকে ঘুস ও ঋণের ভাগ নেওয়া এবং জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে মহীউদ্দীন খান আলমগীর ও মাহবুবুল হক চিশতীর বিরুদ্ধে। পরে ২০১৭ সালের নভেম্বরে ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ড থেকে তারা পদত্যাগ করেন। ২০১৮ সালে নাফিজ ব্যাংকের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন।
২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ফারমার্স ব্যাংক। চালু হওয়ার তিন বছরের মধ্যেই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আর্থিক অব্যবস্থাপনার অভিযোগ ওঠে। সাড়ে তিন হাজার টাকারও বেশি অঙ্কের ঋণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ আলোচনায় আসে। ২০১৮ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ, সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক ও রুপালী ব্যাংক ৭১৫ কোটি টাকায় ফারমার্স ব্যাংকের ৬০ শতাংশ শেয়ার কিনে নেয়। ব্যাংকটি রক্ষার উদ্দেশ্যে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়। তবে মহীউদ্দীন খান আলমগীর মনে করেন, রাষ্ট্রয়ত্ত প্রতিষ্ঠানের কাছে শেয়ার বিক্রির পরিবর্তে ঋণ সহায়তা দিয়ে ব্যাংকটির তারল্য সংকট দূর করতে পারে বাংলাদেশ ব্যাংক।
২০১৯ সালে ব্যাংকটি নাম পরবর্তন করে পদ্মা ব্যাংক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ২০২০ সাল পর্যন্ত ব্যাংকটির ৩০৯ দশমিক ৯৯ কোটি টাকা মূলধন ঘাটতি রয়েছে, খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ৬০ শতাংশ।