উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তিতে তারুণ্য ও অগ্রগতির সোনালী বীজ রোপিত হবে
ড. ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিশে^র মানচিত্রে বাংলাদেশ নামের নতুন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটেছিলো। সবুজের জমিনে রক্তিম সূর্যখচিত মানচিত্রের এ দেশটির ৫০ বছর পূর্তিতে ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করছি আমরা। বিজয় অর্জনের পর ৫০ বছরের পথচলায় দুর্দান্ত গতিতে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। একাত্তরে স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা একটি স্বতন্ত্র দেশ পেয়েছি, আর তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গড়ে তুলতে চলেছি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। একটি দেশ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য, বাঙালির হাজার বছরের লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নির্ভর একটি সময়োপযোগী আধুনিক রাষ্ট্র গঠনের জন্য-সম্ভাব্য সব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন জাতির পিতা। প্রযুক্তিনির্ভর জাতির ভিত্তি গড়তে তিনি স্বাধীনতার পর রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ায় স্থাপন করেন ভ‚-উপগ্রহ কেন্দ্র। জোর দেন শিক্ষার ওপর। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের আগে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে শিক্ষা খাতে বিনিয়োগকে বঙ্গবন্ধু সর্বোৎকৃষ্ট বিনিয়োগ বলেছিলেন। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা ভাবনার প্রতিফলন দেখা যায় রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন পদক্ষেপে। বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা সরকারিকরণে সংবিধানের ১৭নং অনুচ্ছেদে গণমুখী ও সার্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষার বিধান রাখেন। নিরক্ষরতা দূর করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথাও সংবিধানে বলা হয়। প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করে বিনামূল্যে বই, অন্যান্য শিক্ষা উপকরণ ও খাবার বিতরণ করার উদ্যোগ নেন। বর্তমানে বাংলাদেশে শিক্ষার হার বৃদ্ধিতে যে সাফল্য, এর পেছনেও বঙ্গবন্ধুর এসব পদক্ষেপের বড় ভ‚মিকা রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় তার কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে মানসম্মত ও সময়ের চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়ে শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।
বিদ্যমান করোনা পরিস্থিতিতে আমাদের মানতে হচ্ছে সামাজিক দূরত্ব, সঙ্গনিরোধ, বিছিন্ন থাকা ইত্যাদি। আমরা বাধ্য হচ্ছি ঘরে থাকতে। দীর্ঘ লকডাউন শেষে জীবন-যাপনের প্রয়োজনে ‘নিউ নরমাল’ হতে শুরু করেছে বিশ^। বাংলাদেশও খুলতে শুরু করেছে কলকারখানা, অফিস-আদালত। স্কুল-কলেজ এখনও খুলছে না। লাখ লাখ মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। অর্থনৈতিক অবস্থা শোচনীয়। মানুষের মাঝে হতাশাও বাড়ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেড়েছে অপরাধ। সরকারের উদ্যোগে এ ধরনের সামাজিক বিষয়কে বেশ গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। বলা হচ্ছে, দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধের পর মানব জাতি এতো ভয়াবহ সংকটে আর পড়েনি। প্লেগ, কলেরা, ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো মহামারীতে ব্যাপক মানুষের মৃত্যু হলেও পৃথিবীজুড়ে এমন শঙ্কা, অনিশ্চয়তা নাকি আর কখনও দেখা যায়নি। পৃথিবী আগে কখনও এভাবে স্থবির হয়নি, অবরুদ্ধ হয়নি। বর্তমান দুর্যোগ কেটে যাবে। ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হবে বিশ^। বাংলাদেশও বিপদমুক্ত থাকবে না। তবে নানা সংকট-দুর্যোগকাল অতিক্রমণের অভিজ্ঞতাও আমাদের আছে। মুক্তিযুদ্ধের পর আমরা একটি বিধ্বস্ত দেশ পেয়েও পুর্নঠন প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়েছি। তবে হ্যাঁ, স্বাধীনতার পর রাজনৈতিক উত্থান-পতনে আমরা পথবিচ্যুত হয়েছি। তারপরও আমরা এগিয়েছি। স্বাধীনতার সুফল হয়তো সবাই সমানভাবে পাননি, তবে চরম বঞ্চনার শিকার হওয়ার প্রবণতা অনেকটাই রোধ করা সম্ভব হয়েছে।
বাংলাদেশ বিশে^র কাছে উন্নয়নের রোল মডেল ও সম্ভাবনার অপার বিস্ময়কর একটি উদীয়মান অর্থনীতির দেশ। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা প্রতিবেশী দেশ ভারতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছিলাম, আর এখন বাংলাদেশই হয়ে উঠছে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয়, খাদ্য ও নির্ভয়ে জীবন-যাপনের জোগানদাতা। এর আগে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় বিশ^ প্রচারমাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘মাদার অব হিইউমিনিটি’ তথা মানবতার জননী খেতাবে ভ‚ষিত করেছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে বর্তমান সরকার যেভাবে কার্যকরী ভ‚মিকা পালন করে, মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি এনে দিয়েছে তা রীতিমতো পৃথিবীর কাছে বিস্ময়কর। সরকার দেশ থেকে দারিদ্র্য দূরীকরণে সফলতা অর্জন করেছে। এর ফলে আমাদের দেশে এখন ভিক্ষাবৃত্তিসহ সামাজিক বৈষম্য বহুলাংশে কমে এসেছে। গ্রাম্য প্রধান বাংলাদেশের সকল গ্রামকে সাজানো হচ্ছে শহরের আদলে সকল সুযোগ সুবিধা দিয়ে।
স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে দাঁড়িয়ে এ বাংলাদেশের আছে নানা অর্জন, আছে নানা চ্যালেঞ্জ। মুক্তিযুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ভ‚মিকা রেখেছিলো দেশের তরুণ সমাজ। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছে, গড়ে তুলেছে ‘মুজিব বাহিনী’। ধ্বংস করেছে হানাদার বাহিনীর একের পর এক পরিকল্পনা। এনে দিয়েছিলেন গৌরবময় বিজয়। দিয়েছে বিশে^র বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার প্রত্যয়। কষ্টার্জিত এ বিজয় তাই আমাদের অস্তিত্ব, এগিয়ে যাবার প্রেরণা। কোনোভাবেই অবজ্ঞা করার সুযোগ নেই মহান মুক্তিযুদ্ধের। বর্তমান প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে পড়ুক সেই চেতনা আর দেশান্তবোধ। আর আমাদের বিজয় সেদিনই সফল হবে, যেদিন মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে কাজে লাগিয়ে বর্তমান প্রজন্মের তরুণরা বাংলার ১৬ কোটি মানুষের মুখ হাসি ফুটাবে। সেদিন থাকবে না কোনো দুর্নীতি, থাকবে না কোনো অনাহারী, থাকবে না অশিক্ষিত মানুষ। পৃথিবীর মানচিত্রে লাল সবুজের বাংলাদেশ হবে নবজাগরণে উদ্দীপ্ত বাংলাদেশ। সর্বোপরি স্বাধীনতার সম্পূর্ণ সুফল পেতে আমাদের একতাবদ্ধ হয়ে সকল সেক্টরে নিরলসভাবে কাজ করতে হবে, নিজেদের অধিকার নিয়ে সচেতন হতে হবে। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত দেশের নানা অর্জন থাকলেও ১৯৭১ সালে যে উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এ দেশের মানুষ স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলো বিজয়ের ৫০ বছর পরও সে উদ্দেশ্য সম্পূর্ণভাবে পূরণ হয়নি। তবে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত আছে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, দুর্নীতিসহ নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে কাক্সিক্ষত উন্নয়ন এখনো দেখতে পাইনি। অর্জন করতে পারিনি স্বাধীনতার মূল উদ্দেশ্য। আমাদের বিজয় সেদিনই সফল হবে,যেদিন মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে কাজে লাগিয়ে সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে এগিয়ে যাবে দেশ। সেদিন থাকবে না কোনো দুর্নীতি। থাকবে না কোনো অনাহারী। থাকবে না মৌলিক অধিকারে কোনো বাধা। থাকবে না অশিক্ষিত মানুষ। পৃথিবীর মানচিত্রে লাল-সবুজের বাংলাদেশ হবে নবজাগরণে উদ্দীপ্ত বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ইতিহাসে লড়াই কিংবা চ্যালেঞ্জের অভাব নেই। এবারও করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বিশাল একটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি আমরা। তবে তরুণ সমাজ এ সময়ে বিজয় দিবস উপলক্ষে নানা উদ্যোগ নিতে পারে, যাতে বিজয়ের মাসের গুরুত্ব যেকোনো অবস্থানে পালন করে পৃথিবীর সামনে তুলে ধরতে পারি। ১৯৭১ সালে তরুণ সমাজ যেভাবে মুখ্য ভ‚মিকা পালন করেছে, একইভাবে উদ্যোগ নিয়ে কাজ করতে পারবো এ সময়েও। মুক্তিযুদ্ধের সময়কার তরুণদের চেতনার সঙ্গে আজকের তরুণদের একটা মিল খুঁজে পাওয়া যায় আজকের তরুণরা হয়তো মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে পারেনি। কিন্তু প্রতিনিয়ত মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে লালন করছে। সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছে। আজকে কোথাও যদি রাষ্ট্রবিরোধী কোনো শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, তখন সর্বপ্রথম তরুণরাই প্রতিরোধ গড়ে তোলে। নিজেরা বিভিন্নভাবে এ দেশের সম্মান ছড়াচ্ছে বিদেশের মাটিতে। তবে এটা অস্বীকার করা যাবে না, দেশের একটা বিশাল তরুণ জনগোষ্ঠী আজও হতাশায় দিন পার করছে।
বিজয়ের এ মাসে একজন তরুণ হিসেবে প্রত্যাশা করি, দেশটি যেন বেকারত্বের গøানি থেকে মুক্তি পায়। দেশের অগ্রযাত্রায় তরুণদের ভ‚মিকা বরাবরই ব্যাপক প্রাধান্য পেয়েছে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে, নিপীড়িতকে বিচার পাইয়ে দিতে, এমনকি নিজেদের অধিকার বাস্তবায়নে রূপ দান করতে তরুণরা সর্বদাই হয়ে উঠেছে বজ্রকণ্ঠী। প্রিয় স্বাধীনতা আমাদের দিয়েছে আত্মসম্মান বোধ সম্পর্কিত জাতি হিসেবে বেঁচে থাকার সুযোগ। যা যেকোনো জাতির জন্যই বহু কাক্সিক্ষত, বহু মূল্যবান। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে তরুণ সমাজের হাত ধরে তাদের শক্ত সামর্থ্যবান কাঁধে দেশের উন্নয়নে ভার প্রদান করে দেশের সব নাগরিকের উচিত দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার মন্ত্রে বলীয়ান হওয়া। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সাহসী নেতৃত্বে শেষ স্প্যান বসানোর মধ্যদিয়ে জাতির স্বপ্ন পূরণ ও স্বপ্ন ছুঁয়েছে প্রমত্ত পদ্মার এপার-ওপার। তিন বছর দুই মাস দশ দিনের মাথায় এলো সেই স্বপ্নের দিন। ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর সেতুতে শেষ স্প্যান বসানোর পর প্রমত্ত পদ্মার দুই পাড়ে রচিত হলো সেতুবন্ধন। বিশ^নেতৃবৃন্দ ও বিশ^বাসীকে তাক লাগিয়ে বিশে^র ইতিহাসে স্থান করে নিল এ সেতু। এক মহাকর্মযজ্ঞের সাক্ষী হয়ে অবশেষে মাথা তুলে দাঁড়াল স্বপ্নের পদ্মা সেতু। যুক্ত হলো প্রমত্ত পদ্মার এপার-ওপার। কল্পিত দুর্নীতির সাজানো অভিযোগে বিশ^ব্যাংক এ সেতু নির্মাণের অর্থায়ন থেকে সরে যায়। একই সাঙ্গে সরে যায় আরও কয়েকটি দাতা সংস্থাও। সেতু নিয়ে শুরু থেকেই দেশি-বিদেশি স্বার্থান্বেষী মহতু ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলো। এতো বাধা বিপত্তিকে পেছনে ফেলে বঙ্গবন্ধু কন্যা নিজস্ব অর্থায়নে সেু নির্মাণের উদ্যোগ নেন। এবং শতভাগ সফলতা অর্জন করে ঠিক যেমন করে ১৯৭১ সালের এ মাসেই পাকি হানাদার বাহিনী বাংলাদেশের দামাল তরুণদের কাছে পরাস্ত হয়েছে, হার মেনেছিলো। সামগ্রিকভাবে গৌরব করার জন্য আমাদের আরও জায়গা রয়েছে। সে জায়গাগুলোতে এগিয়ে যেতে হবে, আরও কিছু কাজ করতে হবে। সুষ্ঠু ও উন্নত রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রচলন করতে হবে, যার প্রভাব পড়বে সমাজে-অর্থনীতিতে। পরিশেষে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে ৫০ বছরে আমাদের অঙ্গীকার হোক, যে চেতনা ও উদ্দেশ্য নিয়ে একাত্তরে বঙ্গবন্ধুর ডাকে স্বাধীনতাযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো আপামর জনসাধারণ, তার বাস্তবায়ন। মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাঁথা নিয়ে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ তথা বঙ্গবনন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলবে নতুন প্রজন্ম- এই হোক সুবর্ণ জয়ন্তীতে আমাদের প্রত্যয়। দেশের সব মানুষের শিক্ষা, অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসা ও বাসস্থান নিশ্চিত হোক। স্বাধীনতাহীনতায় কেউ থাকবে না।
স্বাধীনতার সুফল, সুষমভাবে সবার ঘরে ঘরে পৌঁছে যাক। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরেই সূচনা হয় বাঙালির নবজীবনের। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে লাখো শহীদের রক্তে রাঙিয়ে রাতের অন্ধকার ভেদ করে বাংলার দামাল ছেলেরা কেড়ে এনেছিলো ফুটন্ত সকাল। বাঙালি জাতির হাজার বছরের শৌর্য-বীর্য ও বীরত্বগাঁথা এবং এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এ স্বাধীনতা। বিশে^র মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন ভ‚খÐের নাম জানান দেওয়ার মাস। করোনার কারণে হয়তো বিরাট আয়োজন সম্ভব হবে না। তবুও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি আজীবন স্মরণ করিয়ে দেবে আমাদের। জাগ্রত করবে বিজয়ের চেতনা। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তির প্রাক্কালে চলুন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই- মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ও চেতনা বাস্তবায়নে নিজ নিজ অবস্থান থেকে আরও অবদান রাখি। দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নেই সমৃদ্ধ আগামীর পথে। করোনা-পরবর্তী বিশ^ পরিস্থিতিতেও ভাঙচুর হবে, পরিবর্তন আসবে। যেকোনো বড়ো ঘটনাই মানুষের চিন্তার জগতে নতুন আলো ফেলে যায়। করোনাভাইরাস মানুষকে এটা দেখালো যে, তারা এখনো কতো অসহায়। সভ্যতা নিয়ে অহংকার করার মতো অবস্থানে মানব জাতি এখনও পৌঁছতে পারেনি। এত আবিষ্কার, এত উন্নতি, এত শক্তির দম্ভ, হাতের মুঠোয় দুনিয়া-একটি ভাইরাসের কাছে কিছুই না। তাই এ অচলাবস্থা থেকে মানব জাতিকে আরও গভীরভাবে মুক্তির পথ খুঁজতে হবে। মূল্যায়ন, পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে তার পথরেখার। করোনা-ঝাঁকিতে নড়েচড়ে বসতে হবে চিন্তাবিদ ও রাষ্ট্রনায়কদের। বাংলাদেশেও রাজনৈতিক ভাবনায় নতুন চিন্তার প্রকাশ ঘটবে বলে আশা করা যায়। মানুষের মধ্যে বৈষম্যবিরোধী সাম্যচিন্তা প্রবল হয়ে ওঠার সম্ভাবনা আছে। অপার সম্ভাবনা ও প্রত্যাশা নিয়েই আগামীতে উদযাপিত হবে স্বাধীনতার ডায়মন্ড জুবিলি ও বাংলাদেশ ২০৭১।
লেখক : সাবেক উপ-মহাপরিচালক, বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি