নরেন্দ্র মোদীর আর্য দেবতা ও পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন
মোশাররফ হোসেন মুসা
নরেন্দ্র মোদীর মুখের কথা, মাথার চিন্তা, চোখের ভাষা এক নয়। অর্থাৎ তাঁর চোখে-মুখে বহু রাজনীতি। তাঁর রাজনীতির মূল কথা হলোÑ যাদের দেবতার জন্ম এদেশে নয়, তারা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক। মোদীর এই রাজনীতিতে সমস্ত রাজনৈতিক দল দিশেহারা। জাত-পাতে বিভক্ত ভারতীয় সমাজে মোদী কোন্ জাতের পক্ষে বুঝা মুশকিল। তিনি বাংলাদেশ সফরকালে মতুয়া স¤প্রদায়ের দুটি মন্দির পরিদর্শন করবেন। মতুয়া স¤প্রদায়ের লোকেরা কোনো জাত-পাত বিশ্বাস করে না। ভক্তিবাদের মাধ্যমে তারা মানব প্রেমকে ছড়িয়ে দিতে চায়। পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনকে সামনে করে মোদীর এই মন্দির পরিদর্শন। পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে তার দল মোদীর দেবতাবাদী রাজনীতিকে কাজে লাগাতে চাচ্ছে।
এখন প্রশ্ন হলোÑ মোদী ও তাঁর দল যেসব দেবতা নিয়ে গর্ব করেন, রাজনীতি করেন, তারা কি এ দেশীয়? ভারতের বুদ্ধিজীবিরা (বিশেষ করে পশ্চিম বাংলার বুদ্ধিজীবীরা) মুখে স্বীকার করেন ‘রাম’ আর্যদের দেবতা, আর রাবন ও অসুর প্রমুখরা দেশীয় দেবতা। কিন্তু সাংস্কৃতিক আন্দোলনে তারা এটি ফয়সালা করেন না কেন? আমরা জানি, পৃথিবীতে ৪টি মহাকাব্যÑ ওডিসি, ইলিয়াড, রামায়ন ও মহাভারত। কোনো কাল্পনিক কেচ্ছা-কাহিনী (মিথোলজি) যদি প্রতিভাবানদের হাতে সাহিত্যরূপ পায়, তাহলে সেটা হয়ে পড়ে মহাকাব্য (হোমার, ব্যাসদেব ও বাল্মিকীর হাতে ওগুলো সাহিত্যরূপ পায়)। কিন্তু যথাযথ সাংস্কৃতিক আন্দোলন না হওয়ায় মমতা সরাসরি বলতে পারছেন নাÑ মোদীর দেবতা মানি না। অনেকে মনে করেন, মমতা বামফ্রন্টকে পরাস্ত করতে নিজেই দেবতাবাদী রাজনীতিকে পশ্চিমবঙ্গে আগমনের সুযোগ করে দিয়েছে। ফলে তিনি প্রকাশ্যে বলতে পারছেন নাÑ এ দেশে জন্ম নেয়া বহু দেবতা আছে; রবীন্দ্রনাথ, বিদ্যাসাগর, রাজা রামমোহন রায়, রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব, স্বামী বিবেকানন্দ, সুভাষ চন্দ্র বসু, মাইকেল মধুসূদন প্রমুখরাই আসল দেবতা।
লেখক : গণতন্ত্রায়ন ও গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকার বিষয়ক গবেষক।