দেশের কৃষিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে মুজিব বর্ষের উপহার সমলয় চাষাবাদ
মতিনুজ্জামান মিটু : আইলের পরে আইলে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর অংশে বিভক্ত হয়ে যাওয়া জমিকে একই সূতোয় গেথে দেশের প্রায় সব জেলায় শুরু হচ্ছে নতুন সময়ের এই চাষাবাদ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনেক আগেই আধুনিক পদ্ধতির এই চাষাবাদ হলেও বাংলাদেশে প্রথম। আধুনিকসব যন্ত্র ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশে ধানসহ বিভিন্ন ফসলের উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর তাগিদ থেকেই এই পদ্ধতিকে বেছে নেওয়া হচ্ছে।
সিনক্রোনাইজ কালটিভেশন বা সমলয়ে চাষাবাদ নামে কৃষি মন্ত্রণালয় বোরো ধানের উৎপাদন বৃদ্ধিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও সময়োপযোগী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। কৃষি পুনর্বাসন সহায়তা খাতের অর্থ থেকে সমলয়ের চাষাবাদ নামের এ কর্মসূচিটি মাঠ পর্যায়ে প্রথমবারের মতো বাস্তবায়ন করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। কৃষি তথ্য সার্ভিসের পরিচালক কৃষিবিদ কার্তিক চন্দ্র চক্রবর্তী জানান, সারা দেশে ৬১টি জেলায় ৫০ থেকে ৬০ একরের ৬১টি ব্লক প্রদর্শনী হিসেবে বাস্তবায়িত হবে। পাশাপাশি জমি আছে এমন কৃষক-কৃষানির গ্রুপ নির্বাচন করতে হবে এবং গ্রুপে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী কৃষক অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
চলমান বোরো মৌসুমে বোরো ধানের হাইব্রিড জাত যার ফলন হেক্টরপ্রতি ৪ থেকে ৫ টনের বেশি এমন জাতের বীজ সংগ্রহ করতে হবে। সমলয়ে চাষাবাদের মাধ্যমে উৎপাদিত বীজ পরবর্তী মৌসুমে উপযুক্ত মূল্যে (বিএডিসি’র বীজের মূল্যের বেশি নয়) কিনে কৃষকদের মাঝে বিতরণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং বীজের গুণগত মান সম্পর্কে ব্রি, ডিএই ও এসসিএ’র কর্মকর্তা সমন্বয়ে গঠিত কমিটি প্রত্যয়ন করবে। সমলয়ে চাষাবাদের প্রতিটি কার্যক্রমে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে।
জমি তৈরি, ট্রেতে চারা উৎপাদন, রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের সাহায্যে চারারোপণ, সার, বীজ, বালাইনাশক, কম্বাইন্ড হারভেস্টারের সাহায্যে ফসল কাটা, মাড়াইসহ সব কাজে আধুনিক কৃষিযন্ত্রের ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং সরকার এসব কাজে সহায়তা দেবে। পরবর্তী বছরে সরকার এডাপশনের এর জন্য বীজ সহায়তা দেবে। সমলয়ে চাষাবাদ কর্মসূচিতে উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর লক্ষ্যে সরকারের নেওয়া পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। অর্থাৎ কৃষি উৎপাদনে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার, উচ্চফলনশীল আধুনিক জাতের সম্প্রসারণ, কৃষি কাজে নারীর অংশগ্রহণ, সুষম সার ব্যবহার, সঠিক সময়ে সঠিকভাবে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহার, আধুনিক সেচ ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ সুরক্ষায় পরিবেশবান্ধব উৎপাদন কৌশল প্রয়োগ এবং বাজার ব্যবস্থায় কৃষক গ্রুপের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। সমলয়ে চাষাবাদের কর্মসূচিটি প্রাথমিকভাবে বোরো ধানের উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করা হলেও বাংলাদেশের টেকসই কৃষি উন্নয়নের জন্য এটিকে আরও সম্প্রসারিত করার দরকার রয়েছে। দেশের অধিকাংশ কৃষক ক্ষুদ্র, মাঝারি এবং প্রান্তিক কৃষক। চাষের জমিগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত। ক্রমবর্ধমান জনঘনত্বের দেশে ক্রমহ্রাসমান কৃষি জমি। এ রকম বাস্তবতায় সমলয়ে চাষাবাদ কর্মসূচি টেকসই কৃষি উন্নয়ন, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট বা এসডিজি বাস্তবায়ন, উত্তম কৃষি চর্চা, জাতীয় কৃষিনীতি-২০১৮সহ কৃষিবিষয়ক নীতি ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য একটি সময়োপযোগী কর্মসূচি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সরেজমিন উইং এর পরিচালক কৃষিবিদ এ কে এম মনিরুল আলম বলেন, সরকারে রাজস্ব খাতের অর্থ সহায়তায় ৩টি পার্বত্য জেলা অর্থাৎ বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি ছাড়া দেশের বাকী ৬১টি জেলার ৬১টি উপজেলার ৩ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে এই পদ্ধতির চাষাবাদ করা হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সচেতনতামূলক কাজের ফলে সরকারি উদ্যোগের আগেই দেশের অনেক উপজেলার কৃষকরা নিজেদের উদ্যোগে এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ করছেন। পোঁকা মাকড় কম ও ফলন ভালো হওয়াসহ সুফল সম্পর্কে অবগত হয়ে দেশের কৃষকরা সহজেই এই পদ্ধতিকে বেছে নিচ্ছেন। গ্রুপ গঠনে বেগ পেতে হচ্ছেনা। কৃষকদের মধ্যে বন্ধন শক্তিশালী করছে এই পদ্ধতি।