ভারতের অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন থেকে বিশে^র শিক্ষা নেয়ার আছে
বিশ্বজিৎ দত্ত : বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে, ভাগ্য, ক্ষুদ্র ঋণ, সঠিক শ্রমনীতি ও ধর্মিয় মৌলবাদ প্রতিরোধ সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে বলে টুইটারে জানিয়েছেন ভারত সরকারের সাবেক অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কৌশিক বসু।
এ বিষয়ে পরে তিনি বিস্তারিত লিখেন, মিন্ট লাইভ নিউজ পোর্টালে। সেখানে তিনি লিখেন, এই কাজগুলো করতে গিয়ে বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ফজলে হাসান আবেদ ও ড. ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংক। তিনি প্রবন্ধের শুরু করেন, ১৯৭১ সালের ২ ডিসেম্বর পাকিস্তানের উপর ভারতের বিমান হামলার দিনকে স্মরণ করে। তার মতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন, সেই দেশের শরনার্থিদের আশ্রয় দান ও ভারতীয় সেনাবাহিকে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার পরেও যুদ্ধের অনুমতি ইন্দিরা গান্ধির জীবনের সবচেয়ে বড় কাজ। ২৬ মার্চ বাংলাদেশ স্বাধীনতা ঘোষণা করলেও ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জন করে। জন্ম নেয় দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে গরীব দেশ বাংলাদেশের। ভারতের চেয়ে গরীব, পাকিস্তানের চেয়ে গরীব।
যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরী কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে বলেন, তলা বিহিন ঝুঁড়ি। ১৯৭৪ সালে যুদ্ধবিধস্ত দেশটিকে আবারো ধাক্কাদেয় মার্কিন খাদ্য নিষেধাজ্ঞা। দেশটির একমাত্র রপ্তানি পণ্য পাট কিউবায় রপ্তানির কারণে এই নিষেধাজ্ঞা। এই দরিদ্র দেশটিই ৫০ বছর উদযাপন করেছে গৌরবের সঙ্গে। দেশটি সারা বিশে^র কাছে অর্থনৈতিক রোল মডেল। দ্রুত অর্থনৈতিক বিকাশের দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বিশ^ব্যাংক ইতিমধ্যেই দেশটিকে নি¤œ মধ্য আয়ের দেশ হিসাবে ঘোষণা করেছে। পাকিস্তানকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে হারিয়ে দিয়েছে ২০০৬ সালেই। বাকি ছিল ভারত তাকেও মাথাপিছু জিডিপিতে হারিয়ে দিয়েছে। মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ ভারত পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে। বিশে^র পোশাক রপ্তানির হাব হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। দেশের অন্যান্য শিল্পের অগ্রগতিও উল্লেখ করার মতো। ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্প দেশের ওষুধের ৯৭ ভাগ চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ঋণ গ্রামীণ দারিদ্র ঘোচাতে,মহিলাদের কর্মক্ষম করতে সাহায্য করেছে। বিশে^র অন্যতম প্রধান ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহীতা দেশ বাংলাদেশ। যার মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষ সুদি ঋণের খপ্পর থেকে মুক্ত হতে পেরেছে। গ্রামীণ মহিলাদের ও শিশুদের মুক্তি দিয়েছে। এরসঙ্গে যুক্ত হয়েছে দেশটির সময়োপযোগী রাজস্ব নীতি ও মূদ্রানীতি। তিনি বাংলাদেশের শ্রম আইনেরও প্রশংসা করেন। ভারত ও পাকিস্তানে যে শ্রম আইনের কারণে শ্রমিক অসšু‘ষ ও কারখানা লাভবান হতে পারেনি। সেখানে বাংলাদেশের শ্রম আইন যুপোপযুগি করে করা হয়েছে। যার ফলে দেশে সেই অর্থে বড় কোন ধরণের শ্রমিক অসন্তুুষ নেই।
তিনি বাংলাদেশের অর্থনীতির কিছু সংকটের বিষয়ও তুলে ধরে বলেন, দেশটিতে এখনো অতিদরিদ্র রয়েছে। ক্রমান্বয়ে বাড়ছে বৈষম্য। প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবেলায় দেশটি প্রস্তুত নয়। বৈশি^ক জলবায়ূ সংকটে বিধ্বস্ত হয়ে যেতে পারে অর্থনীতি। দেশটিতে মৌলবাদি রাজনৈতিক অস্থিরতাও রয়েছে।
তিনি উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধর্মিয় স্বাধীনতার বিশেষ প্রশংসা করেন। তিনি লিখেন ক্রমবর্ধমান ধর্মিয় মৌলবাদ দমন করে তিনি দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিক বিভিন্ন দিক থেকে সমালোচনা করা হলেও তিনি অর্থনৈতিক উন্নয়নে ও মৌলবাদ নিয়ন্ত্রণে রাকতে পরেছেন। বিশে^র অনেকদেশ উন্নয়ণের এমন জায়গায় গিয়েও মৌলবাদের কারণে পিছিয়ে পড়েছে।