২০ বছরে ২৮ হাজার লোকের কর্মসংস্থান রংপুরের কর্মসংস্থানের কেন্দ্র উত্তরা ইপিজেড
মো. আখতারুজ্জামান : দেশব্যাপী রংপুর মঙ্গা নামেও পরিচিত হলেও বর্তমানে সেই চিত্র অনেকেটা বদলে গেছে। এই অঞ্চলে অভাবের বড় কারণ হচ্ছে কর্মসংস্থান না থাকা। এই এলাকায় কর্মসংস্থান তৈরি ও দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে ২০০১ সালে রংপুর বিভাগের জেলা নীলফামারীতে প্রতিষ্ঠিত হয় উত্তরা ইপিজেড। কর্মসংস্থানের একমাত্র ভরসার কেন্দ্র এই ইপিজেডে বর্তমানে ২৮ হাজার ৩৬৩ জন শ্রমিক তাদের জীবনমান উন্নয়নের সুযোগ পেয়েছে। সেইসঙ্গে ইপিজেডকে কেন্দ্র করে বদলে গেছে নীলফামারীর অর্থনৈতিক চিত্র।
ইপিজেডে চাকরি করে কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার আলম। তারা সস্ত্রীক এখানে দীর্ঘদিন থেকে চীনের একটি কোম্পানিতে চাকরি করে। আগে তাদের আয় তেমন একটা ছিলো না। বর্তমানে দুজনের আয় দিয়ে ভালোই চলছে তাদের সংসার। সেইসঙ্গে প্রতিমাসে বেতনের একটা অংশ ভবিষৎতের জন্য সঞ্চয় করছে।
প্রতিদিন সকাল হলেই এমন হাজার হাজার শ্রমীক ছুটে চলে ইপিজেডের দিকে। প্রথম দেখাই মনে হবে তারা কোনো মিছিল বা এমন কিছু করার জন্য রাস্থায় চলে এসেছে। এসব শ্রমিক শুধু নীলফামারীর জেলার নয় তারা রংপুর বিভাগসহ বিভিন্ন এলাকার। এসব শ্রমিকদের কেন্দ্র করে স্থানীয়রাও বেশভালো আছে। তারা পাছচ্ছেন ঘর ভারাসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা।
বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেপজা) তথ্যমতে- ২১২ একর জমিতে এই ইপিজেড স্থাপিত হয়। উত্তরবঙ্গের মঙ্গা পিড়ীত এ অঞ্চলে উত্তরা ইপিজেড প্রতিষ্ঠার পর হতেই দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছ হতে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়। বিনিয়োগের সাথে সাথে কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি হয় যা দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। বিমান বন্দরের সুবিভা নিয়েছে এই ইপিজেড। নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দর থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত উত্তরা ইপিজেড। সেইসঙ্গে সরকারের বিনিয়োগবান্ধব নীতির কারণে উত্তরা ইপিজেডে দেশি বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে আগ্রহী হয়েছে। উত্তরা ইপিজেডে মোট ২৪ চালু শিল্প আছে এর মধ্যে সম্পূর্ণ বিদেশি মালিকানাধীন বা এ টাইপ ১১ এবং দেশি মালিকানাধীন বা সি টাইপ প্রতিষ্ঠান ১৩। বর্তমানে ৫ শিল্পপ্রতিষ্ঠান বাস্তবায়নাধীন রয়েছে যার প্রস্তাবিত বিনিয়োগ প্রায় ৬০ কোটি মার্কিন ডলার। এছাড়াও পাইপলাইনে রয়েছে বেশ কিছু দেশ যারা উত্তরা ইপিজেডে বিনিয়োগে আগ্রহী। বর্তমানে উত্তরা ইপিজেডের বেশিরভাগ প্লটই বরাদ্দ দেয়া আছে।
বেপজার মতে, উত্তরা ইপিজেডে ফেব্রুয়ারি ২০২১ পর্যন্ত মোট কর্মসংস্থান হয়েছে ২৮ হাজার ৩৬৩ জন যার প্রায় ১ শতাংশ বিদেশি। সেই হিসেবে বিদেশি কর্মী রয়েছে ২৮৫ জন। উত্তরা ইপিজেডে বর্তমানে চালু রয়েছে ২৪ শিল্প প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি হয়েছে ১৪৭ কোটি ৬৭ লাখ মার্কিন ডলার (ফেব্রুয়ারি ২০২১ পর্যন্ত)। উত্তরা ইপিজেডে মোট বিনিয়োগ ২১ কোটি ১৬ লাখ মার্কিন ডলার। ক্রমবর্ধমান হারে উত্তরা ইপিজেডে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
উত্তরা ইপিজেডে বাংলাদেশসহ বিনিয়োগকারী দেশ হিসেবে চীন, যুক্তরাজ্য, হংকংও (চীন) সহ বাংলাদেশ ট্রাভেল ব্যাগ ও অন্যান্য ব্যাগ, লাগেজ, চশমা, ম্যনিকুইন হেড ও উইগ, সোয়েটার, বাশের কফিন বক্স, খেলনা, রাবার, সোয়েটার, পলিব্যাগ, হ্যাঙ্গার, ব্যাকবোর্ড, ববিন ইত্যাদি পণ্য উৎপাদন করছে। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন, দারিদ্র্যতা দূরীকরণ। সেইসঙ্গে শিল্প খাতের দ্রুত বিকাশে উত্তরা ইপিজেড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বেপজা শুরু থেকেই শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষাসহ বিনিয়োগকারীদের সর্বোচ্চ সুযোগ সুবিধা প্রদান করে আসছে। এ ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে ভবিষ্যতে বিনিয়োগ আরও সম্প্রসারিত হবে বলে আশা করছে বেপজা।