সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ
ফাতেমা আহমেদ : সিলেটের সকল পর্যটন স্পট আগামী দুই সপ্তাহের জন্য বন্ধ থাকবে। দ্বিতীয় ধাপে করোনার সংক্রমণ রোধে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ সিলেট রিজিওনের পুলিশ সুপার মো. আলতাফ হোসেন জানান, সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক সিলেট রিজিওনের সব হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট ও পর্যটন স্পট আগামী দুই সপ্তাহের জন্য বন্ধ থাকবে। করোনার সংক্রমণ রোধে সকলকে মাক্স পরিধান ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেন তিনি।
বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে দেশের সকল পর্যটন স্পট ও বিনোদন কেন্দ্র দুই সপ্তাহের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়।
এর আগে ২০২০ সালের ১৮ মার্চ সিলেটের সকল পর্যটন স্পট বন্ধের ঘোষণা দেন সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম। ছয় মাস পর গত ৯ সেপ্টেম্বর ২৫ শর্তে এসব পর্যটন স্পট ও রিসোর্ট সেন্টার খোলার অনুমতি দেয়া হয়। কিন্তু, কোনো পর্যটন কেন্দ্রই এসব নির্দেশনা পালন করেনি। এ অবস্থায় ফের সিলেটের পর্যটন স্পটসমূহ বন্ধের ঘোষণা এলো।
এছাড়া চট্টগ্রাম নগরের অন্যতম জনপ্রিয় বিনোদনকেন্দ্র ফয়েজ লেকস্থ চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা বৃহস্পতিবার থেকে দুই সপ্তাহের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় এর প্রতিরোধের অংশ হিসেবে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বুধবার রাতে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা নির্বাহী কমিটির সদস্য সচিব ও হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রুহুল আমিন এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।
তিনি জানান, ‘সার্বিক করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় ১ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা বন্ধ থাকবে। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক এ নির্দেশনা দিয়েছেন।’
এদিকে, কক্সবাজারের টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসন। তবে অভ্যন্তরীণ নৌপথে যাত্রী পরিবহনের নিয়োজিত সার্ভিস ট্রলারগুলোকে চলাচল করবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রী পরিবহনের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে এ নৌপথে চলাচলকারী সকল পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বুধবার রাতে এ তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো: মামুনুর রশীদ। তিনি বলেন, স্বাভাবিকভাবে প্রতিবছর ৩১ মার্চ পর্যন্ত পর্যটকবাহি জাহাজ চলাচল করে থাকে। অনেক সময় এই সময়সীমা ১৫ দিন বাড়ানো হয়। কিন্তু করোনার কারণে এবার তা সম্ভব হচ্ছে। তাই স্বাভাবিক নিয়মে ১ এপ্রিল থেকে জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকবে।
অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় (বিআইডব্লিটিএ) টেকনাফে স্টেশনের সমন্বয় কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন বলেন, গত বছরের ১২ নভেম্বর থেকে এ নৌপথে পর্যটক পরিবহনের জন্য বিভিন্ন মেয়াদে আটটি জাহাজকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। জাহাজগুলো হল- গ্রীন লাইন-১, বে ক্রুজ, এমভি পারিজাত, এমভি অ্যাটলান্টিক ক্রুজ,এমভি ফারহান-১,কেয়ারি সিন্দাবাদ, কেয়ারি ক্রুজ অ্যান্ড ডাইন ও এমভি শহীদ সালাম। এরমধ্যে আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত কেয়ারি সিন্দাবাদ, কেয়ারি ক্রুজ অ্যান্ড ডাইন ও এমভি শহীদ সালামের অনুমতি থাকলেও করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় জাহাজ চলাচল বন্ধ করা হয়েছে।
পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা ভ্রমণেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে আগামী ১৫ দিনের জন্য এ নিষেধাজ্ঞা জারি করে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী।
বুধবার রাত ৯টায় সব হোটেল, মোটেল ও রিসোর্ট বন্ধ ঘোষণা করে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মাইকিং ও পর্যটন ব্যবসায়ীদের নিয়ে সভা করেছে কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশ।
এছাড়া বুধবার রাত থেকেই কুয়াকাটা সৈকতে অবস্থানরত সব পর্যটকদের বাড়ি ফিরে যেতে অনুরোধ জানান পুলিশ সদস্যরা। এদিকে সন্ধ্যা সাতটার পর জেলার সব দোকান পাট বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার থেকে এই বিষয়টি কার্যকর হয়। জেলা প্রশাসক মতিউল ইসলাম চৌধূরী বলেন, আগামী ১৫ দিনের জন্য এ আদেশ কার্যকর থাকবে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত পর্যটন সংশ্লিষ্ট সব ধরনের সেবা বন্ধ থাকবে।
করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে রাঙ্গামাটির পর্যটনকেন্দ্রগুলো। বৃহস্পতিবার থেকে এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হয়।
পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ ছাড়াও গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী পরিবহন ও কমিউনিটি সেন্টারগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
এদিন সকালে জেলার বিভিন্ন পর্যটককেন্দ্রে দেখা যায়, সকাল থেকে রাঙ্গামাটি পার্ক, পলওয়ে পার্ক তালাবদ্ধ রয়েছে। তবে ঝুলন্ত সেতুর প্রবেশপথ তালাবদ্ধ না থাকায় সেতুতে কিছু পর্যটককে ঘুরতে দেখা গেছে। হ্রদে ঘুরে বেড়ানোর বোটগুলো ঘাটে বাঁধা ছিল।
এছাড়া টেক্সটাইলের দোকানগুলোতে বিক্রয়কর্মীদের অলস বসে থাকতে দেখা গেছে। আবাসিক হোটেলগুলোও ধীরে ধীরে খালি করা হচ্ছে।
শেরপুরের সব পর্যটন কেন্দ্র দুই সপ্তাহের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। ১ এপ্রিল থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত জেলার সব পর্যটন কেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকবে বলে জেলা কালেক্টরেট অফিসের উপ-পরিচালক এটিএম জিয়াউল হক এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান।
করোনা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় জনসমাগম বন্ধে শহরের ডিসি উদ্যান, অর্কিড পর্যটন কেন্দ্র, ঝিনাইগাতী উপজেলার গজনী অবকাশ কেন্দ্র, নালিতাবাড়ী উপজেলার মধুটিলা ইকোপার্কসহ জেলার সকল পর্যটন কেন্দ্রের জন্য সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। দেশের কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়ায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
শেরপুরের জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব বলেন, ভারত সীমান্তবর্তী পাহাড়ি জেলা শেরপুরে পর্যটন কেন্দ্র থাকার কারণে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ভ্রমণ পিপাসুরা এখানে ঘুরতে আসেন। করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার কারণে জেলার মানুষদের করোনা থেকে মুক্ত রাখতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এসময় তিনি সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ জানান। সূত্র : বাসস, ইউএনবি, জাগোনিউজ