আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ১
পরামর্শ অর্থনীতিবিদদের লকডাউনে সবশ্রেণির কথা বিবেচনা করে পদক্ষেপ নিতে হবে
মো. আখতারুজ্জামান : করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার, যা আগামী সোমবার থেকে কার্যকর হবে। লকডাউনে যাতে অর্থনীতির চাকা বন্ধ না হয় সে বিষয়ে সরকারকে সতর্ক করেছেন দেশের অর্থনীতিবিদরা। দেশের সকল পর্যায়ের লোকদের কথা চিন্তা করতে হবে বিশেষ করে ছোট ব্যবসায়ীরা যাতে দ্বিতীয় দফায় ক্ষতির মুখে না পড়েন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ জানান, আমাদের দেশের বর্তমান অর্থনীতির যে অবস্থা তাদের কোনও কিছু একেবারে বন্ধ করা যাবে না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবকিছুই চালু রাখতে হবে। ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের বিষয়ে গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে। কারণ তাদের ক্ষতিটা সব থেকে বেশি হয়।
সাবেক এ গভর্নর জানান, গার্মেন্টসখাত আমাদের অর্থনীতির বড় চাকা। এটার সঙ্গে আমাদের রেমিটেন্সের বড় সম্পর্কর রয়েছে। আমরা এর আগে দেখেছি। কারখানা বন্ধ রাখায় বায়াররা তাদের অর্ডার বাতিলের পাশাপাশি একটা অংশ আমাদের দেশ থেকে পণ্য নেয়া বন্ধ করে দিয়েছে। তাই যে কোনো উপায়ে এ খাতকে চালু রাখার বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে হবে।
পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশ চেয়ারম্যান ড. মাশরুর এম রেজা জানান, করোনা সংক্রমণের যে চিত্র তাতে লকডাউনের বিকল্প নেই। গতবছরের লকডাউনে আমাদের অর্থনীতিতে যে ক্ষতি হয়েছে সেটা এখনও সাভাবিক অবস্থায় যায়নি। তবে আমাদের ভাবতে হবে জীবনের উপরে কিছু নেই। আগে জীবন পরে জীবিকা আহরণ।
লকডাউন যদি না দেয় হয় তাহলে বড় ক্ষতি হবে। আর যদি দুই বা তিন সপ্তহের লকডাউন দেয়া হয় তাদের যে ক্ষতি হবে তা সময়ের ব্যবধানে আমরা পুষিয়ে নিতে পারব।
তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে কয়েক দফা লকডাউন দেয়ার বিষয়ে আমরা দেখেছি। তবে সঙ্গে সঙ্গে আর একটা বিষয় লক্ষ্য করা উচিৎ। তাহলো আগের লকডাউন থেকে আমরা যে শিক্ষাগুলো নিয়েছি তা কাজে লাগাতে হবে। যে স্থানগুলো করোনার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ সেসব জায়গাকে পুরোপুরি লক করে দিতে হবে।
পোশাক কারখানার মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ লকডাউনে সরকারি দিক নির্দেশনাসহ কঠোর স্বাস্থ্য প্রটোকল মেনেই কারখানা খোলা রাখাবে। ইতোমধ্যে সদস্যভুক্ত কারখানাকে ১৬টি দিক নির্দেশনা দিয়েছে বিজিএমইএ।
অন্যদিকে অর্থনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্ট্যাডিজ (বিআইডিএস) এর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ জানান, আমরা লকডাউনে যাচ্ছি। তবে এক্ষেত্রে আগের কিছু দুর্বলতা রয়েছে সেগুলোকে সামনের নিয়ে এসে আমাদের প্রস্তুতি নেয়া প্রয়োজন। লকডাউনে সব পর্যায়ের লোকদের কথা মাথায় নিয়ে সরকারকে কাজ করতে হবে।
এ অর্থনীতিবিদ বলেন, বিশেষ করে দরিদ্র দিনমজুর খেটে খাওয়া মানুষের জন্য খাদ্য সহায়তার প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রণোদনার অর্থ যারা লোন নিয়েছেন তাদের টাকা ফেরত দেয়ার সময়ের পরিবর্তন নিয়ে আসতে হবে। কারণ লকডাউনে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি হবে। ফলে তারা তাদের ঋণের কিস্তি পরিশোধ করার মত অর্থ পাবেন না।
তিনি বলেন, লকডাউনের সময় বিভিন্ন পণ্যের অনলাইন ডেলিভারি দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে করে সহজেই বাসায় বসে পণ্য পাওয়া যায়। শুধু ব্যবস্থা করলেই হবে না, এ বিষয়ে প্রচার প্রচারণা চালাতে হবে। যাতে করে সাধারণ মানুষ বিষয়টি জানতে পারে। কারণ আমরা এর আগে দেখেছি লকডাউনের ঘোষণা আসার সঙ্গে সঙ্গে পণ্য না পাওয়ার ভয়ে সাধারণ মানুষ পণ্য মজুদ করেছে। এতে করে আমাদের বাজারে পণ্যের দাম বেড়েছিলো।
নাজনীন আহমেদ বলেন, লক ডাউন হলে বেড়াতে যাওয়া কিংবা গ্রামে চলে যাওয়া ঠেকানোর ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ কোনো ছুটি পেলেই আমাদের মধ্যে ঘুরতে যাওয়া বা গ্রামে যাওয়ার একটা প্রবণতা রয়েছে। কৃষিপণ্য সঠিকভাবে সরবরাহের ব্যবস্থা ঠিক রাখতে হবে। এ সময় জরুরি সেবা দেয়ার যানবাহনকে প্রস্তুত রাখতে হবে। যাতে করে সংশ্লিষ্ট সেবার কোনো কমতি না হয়।
তিনি আরও বলেন, লকডাউন ঘোষণা দিলেই হবে না। এটা যাতে সঠিকভাবে বাস্থাবায়ন হয়, সে বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। লকডাউনের সঙ্গে সঙ্গে এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসা জরুরি, নইলে গতবছরের অর্থনৈতিক ধীর গতির প্রভাবে দুর্বল অর্থনীতি বড় রকমের নতুন চ্যালেঞ্জে পড়বে। আমাদের মনে রাখতে হবে গতবারের লকডাউনের সময় ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে। তাদের অনেকেই সেই ক্ষতি এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি। কারণ তাদের নগদ অর্থ থাকে না, যা তারা লকডাউনে খরচ করতে পারেন। ফলে যে এক সপ্তাহ লকডাউনের ঘোষণা দেয়ার সিদ্ধান্ত আসছে তা যেন সঠিকভাবে কার্যকর হয়। এ লকডাউনের সময় বাড়ানো যাবে না। এতে ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে। সম্পাদনা : ভিক্টর রোজারিও