আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ৪
টিকিট ফেরত দিতে কমলাপুর রেলস্টেশনে যাত্রীরা লকডাউনের খবরে রাজধানীর বাস কাউন্টারগুলোতে ভিড়
সুজন কৈরী : করোনা পরিস্থিতির ক্রমাগত অবনতি হওয়ায় সোমবার থেকে এক সপ্তাহের জন্য সারাদেশে লকডাউন ঘোষণা করছে সরকার। লকডাউনের ঘোষণা হওয়ার পর রাজধানীর বাস টার্মিনালগুলোতে ঘরমুখো মানুষের ভিড় বাড়তে শুরু করে। যাত্রীদের ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে দেখা গেছে টিকিট কাউন্টারগুলোকে। এ সুযোগে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়াও আদায়েরও অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া কমলাপুর রেলস্টেশনে যাত্রীদের মাঝে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। যেসব যাত্রীরা অগ্রিম টিকিট কেটেছিলেন তাদের অনেককেই টিকিট ফেরত দিয়ে নতুন করে শনি ও রোববারের টিকিট কাটার চেষ্টা করতে দেখা গেছে।
বাস যাত্রীরা জানান, সোমবার থেকে লকডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। তাই শনি বা রোববার বাড়ি না গেলে রাজধানীতে আটকে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য আগেভাগে বাড়ি চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।
শনিবার গাবতলি বাস টার্নিমালে গিয়ে কাউন্টারগুলোতে যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে। পুর্বাশা পরিবহন কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা নাইমুল ইসলাম বলেন, লকডাউনের ঘোষণা শুনে গাবতলির প্রতিটি কাউন্টারে প্রচ- ভিড় রয়েছে। আমাদের কাউন্টারেও দীর্ঘ লাইন। অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের কারণে আসন দিতে সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছি। সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে।
সায়দাবাদ টার্মিনালের হানিফ পরিবহনের টিকিট বিক্রির দায়িত্বে থাকা ইকবাল উদ্দিন বলেন, আমাদের কাউন্টারে অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা না হলেও অন্যদিনের চেয়ে শনিবার যাত্রীদের চাপ অনেক বেশি। বাস আসার আগেই সব আসন বিক্রি হয়ে যাচ্ছে।
এদিকে মহাখালী বাস টার্মিনালেও ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুরসহ উত্তরাঞ্চলের যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে। এই টার্মিনালে উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বেশি যাত্রী যাতায়াত করে এনা পরিবহনে। এই পরিবহন কাউন্টারের টিকিট বিক্রির দায়িত্বে থাকা সাহেদ আলী বলেন, করোনা সংক্রমণ রোধে কয়েক দিন ধরে বাসের অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে যাত্রী পরিবহন করছেন তারা। এতে যাত্রীর চাপ কিছুটা বেড়েছে। তবে শনিবার লকডাউন ঘোষণার পর তুলনামূলক যাত্রীও বেশি আসা শুরু করেছে। রোববার ঘরমুখো মানুষের চাপ আরও বাড়তে পারে।
অপরদিকে কমলাপুর রেল স্টেশনেও বেড়েছে যাত্রীদের ভিড়। তাদের মধ্যে অধিকাংশ যাত্রীই অগ্রিম টিকিট কেটেছিলেন। তারা গেন টিকিট ফেরত দিয়ে শনি বা রোববারের টিকিট কাটার চেষ্টা করেন। রবিউল ইসলাম নামের একজন যাত্রী জানান, তিনি সিলেটগামী কালনী এক্সপ্রেসে তিনি সোমবারের জন্য অগ্রিম টিকিট কাটতে স্টেশনে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর লকডাউনের খবর শুনতে পান। এরপর শনিবার বাড়ি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং টিকিট কাটার চেষ্টা করেন। সিল্ক সিটির যাত্রী আব্দুল কাদের জানান, সোমবারের অগ্রিম টিকিট সংগ্রহ করেছিলাম। তবে লকডাউনের সংবাদ শুনে স্টেশনে এসে সেটি ফেরত দিতে এসেছি। টিকিট না পেলে সড়ক পথেই চলে যাব। পঞ্চগড়ের বাসিন্দা মেহেদী হাসান নামের আরেক যাত্রী বলেন, লকডাউনের খবরে কমলাপুরে ছুটে এসেছেন। তিনি বলেন, আমার অসুস্থ ভাইকে নিয়ে গত তিন দিন আগে স্যার সলিমুল্লা মেডিকেল কলেজে এসেছি। সোমবার আমার ভাইকে নিয়ে পঞ্চগড় ফিরে যাওয়ার কথা। কিন্তু লকডাউনের সংবাদ শুনে টিকিটের জন্য স্টেশনে এসেছি। তবে কাউন্টার থেকে টিকিট নেই বলে জানালো। সিলটগামী উপকূল এক্সপ্রেসের যাত্রী তারেক জানান, সোমবারের টিকিট নিয়ে শঙ্কায় আছেন তিনি। তাই টিকিট ফেরত দিতে স্টেশনে গিয়েছিলেন।
কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার মো. মাসুদ সারওয়ার বলেন, লকডাউনের সংবাদ শুনে অনেক যাত্রী ফোন করছেন। আবার অনেকেই স্টেশনে এসেছেন। যারা সোমবারের টিকিট ফেরত দিতে আসছেন আমরা তাদেরগুলো ফেরত নিচ্ছি।