নগর সংস্করণ • প্রথম পাতা • লিড ৫ • শেষ পাতা
ব্যবসা সহজিকরণ সূচকে উন্নতি করতে বিচার ব্যবস্থায় ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন : সালমান এফ রহমান
মো. আখতারুজ্জামান : প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান বলেন, দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে সরকার বেশ কিছু প্রয়োজনীয় সংস্কার সিদ্বান্তবাস্তবায়ন করেছে। আগামীতে তা অব্যাহত থাকবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, বিডার ওএসএস সেবা পুরোদমে চালু হলে ব্যবসা কার্যক্রম পরিচালনা আরও সহজতর হবে।
শনিবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত এক ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়। ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন আইন ও বিচার বিভাগর সচিব মো. গোলাম সারওয়ার।
উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, আমাদের জিডিপিতে করের অবদান খুবই কম এবং যতবেশি করের আওতা বাড়ানো যাবে ততই করের হার কমানো সম্ভব হবে। এটি আমাদের ব্যবসা পরিচালনা ব্যয় হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। তিনি জানান, গত অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড প্রায় ৫৫ হাজর নতুন করদাতাকে করের আওতায় নিয়ে আসতে পেরেছে। তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে দেশের সব বন্দরসমূহের সক্ষমতা বেড়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে আরো উন্নয়নে জন্য আমাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
সালমান এফ রহমান বলেন, সরকার গৃহীত বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্প যেমন- বে টার্মিনাল, মাতারবারি গভীর সমুদ্র বন্দর, কক্সবাজার ২য় বৃহত্তম এয়ারপোর্ট, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল যোগাযোগসহ পদ্মা সেতুর মত বৃহৎ প্রকল্পসমূহের কাজ সম্পন্ন হলে আমাদের অর্থনীতিকে যুগান্তকারী পরিবর্তন পরিলক্ষিত হবে। সামনের দিনগুলোতে বৈশি^ক প্রতিযোগিতা মোকাবেলার জন্য সরকার মানব সম্পদের দক্ষতা উন্নয়নে এবং গবেষণা ও উন্নয়নকার্যক্রমে আরও বেশি হারে গুরুত্বসহ বিশেষ বরাদ্দ বৃদ্ধির পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এছাড়াও তিনি মামলা পরিচালনার দীর্ঘসূত্রিতা নিরসনকল্পে মামলার সময় ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের প্রতি জোরারোপ করেন। বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, সরকার অনেক সময় বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা সত্বেও ব্যাংক, ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট মহলের নিকট তা যথাসময়ে না পৌছানোর জন্য জরিপের সময় কম পয়েন্ট পেতে হয়। এতে সংস্কার করেও তেমন লাভ হয় না। তিনি এজন্য যে কোন সংস্কারের সংবাদ দ্রুততম সময়ে ব্যবসায়ী মহলসহ সকল স্তরে যেন সবাই প্রচার করে তার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
আইন ও বিচার বিভাগ-এর সচিব মো. গোলাম সারওয়ার জানান, ব্যবসা পরিচালনার সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান উন্নয়নে সরকার ইতোমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ বাস্তাবায়ন করেছে। তিনি বলেন, আরবিট্রেশন, ব্যবসায়িক চুক্তি বাস্তাবয়ন এবং দেউলিয়াত্ব প্রভৃতি বিষয়ে দেশের বেসরকারিখাতকে সরকারের পক্ষ হতে প্রয়োজনীয় নীতি সংস্কার সহায়তা প্রদান করা হবে। তিনি জানান, বাণিজ্য বিরোধ বিষয়ক মামলা পরিচালনায় ই-জুডিশিয়ারি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছেযার আওতায় ই-ফাইলিং, প্রমানাদি সংরক্ষণে ডিডিটাল ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হবে। ফলে এ ধরনের বিরোধ দ্রুততম সময়ে নিষ্পত্তি করা সম্ভব হবে। তিনি আরো বলেন, বিদ্যমান দেউলিয়াত্ব আইন-১৯৯৭ সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তি সহজতর করার জন্য সরকার ঢাকা ও চট্টগ্রামে কমার্শিয়াল কোর্ট ও কমার্শিয়াল এপিলেট কোর্ট স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, সাত্তার অ্যান্ড কোং-এর প্রধান মো. সামির সাত্তার। তিনি বলেন,কোম্পানীগুলোরবাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তির সময়সীমা কমানোর লক্ষ্যে ‘সিভিল প্রসিডিউর কোড (সিপিসি)’-এর সংষ্কার একান্ত জরুরী, সেই সাথে মামলার ক্ষেত্রে ই-ফাইলিং প্রক্রিয়া ও কোর্ট ফি প্রদানের ক্ষেত্রে ই-পেমেন্ট ব্যবস্থার প্রবর্তন, ইলেকট্রনিক কেইস ম্যানজেমেন্ট প্রভৃতি চালু করা যেতে পারে। তিনি আরো বলেন, ‘ব্যবসা পরিচালন সূচক’-এ দেউলিয়ার বিরোধ নিষ্পত্তির বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, সেলক্ষ্যে একটি রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্ক গঠনের প্রস্তাব করেন। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশে বাণিজ্য বিরোধ ইস্যুগুলোর সমাধানের গতি আনায়নের আরবিট্রেশন, মিডিয়েশন এবং লিটিগেশন প্রভৃতি বিষয়ের উপর আরো অধিক হারে গুরুত্বারোপ করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ ব্যাংক-এর ফরেন এক্সচেঞ্জ ইনভেস্টমেন্ট বিভাগের মহাব্যবস্থাপক জগন্নাথ চন্দ্র ঘোষ, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)-এর পরিচালক জীবন কৃষ্ণ সাহা রয়, জেট্রো বাংলাদেশ-এর প্রতিনিধি কাজিমুরি ইয়ামাডা, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ এর চেয়ারম্যান এবং সিইওআহসান খান চৌধুরী এবং ওরিক্স বায়ো-টেক লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডেভিড বাও ওয়েবিনারে নির্ধারিত আলোচক হিসেবে যোগদান করেন।তাঁরা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে বেশ কিছু সংষ্কার কার্যক্রম গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে বিদেশি কোম্পানীগুলোর মুনাফা নিজদেশে নিয়ে যাওয়ার অনুমোদন, বাংলাদেশে ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাক্টরিং-এর কার্যক্রম চালুকরণ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। আলোচকরা ভ্যাট ব্যবস্থাপনা, বন্দরগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি ও কাস্টমস ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, বন্ড প্রবর্তন প্রভৃতি বিষয়ের উপর জোরারোপ করেন। পাশাপাশি বাণিজ্য বিষয়ক আইনসমূহের প্রয়োজনীয় সংষ্কার, স্থলবন্দরগুলোতে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি এবং ব্যাংক পরিসেবা বাড়ানোর প্রস্তাব করেন।