সংসদে প্রধানমন্ত্রী ধর্মের নামে অপকর্মে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে
অর্থনীতি ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সমস্ত বিষয় গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। এক সপ্তাহের জন্য সব কিছু লকডাউন ঘোষণা দিয়েছি। সেটা মানলে অন্তত কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে আসবে। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ করছি।
রোববার জাতীয় সংসদের দ্বাদশ অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ঠেকাতে সবার সহযোগিতা চান তিনি। এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সভাপতিত্ব করেন।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ বিশ্বব্যাপী মারাত্মক আকার ধারণ করছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, আমাদের এখানে আবার দেখা যাচ্ছে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ। এই ঢেউ সামলাতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। মানুষকে যাতে সুরক্ষা দিতে পারি সেই ব্যবস্থাপনার ফাইলে কিছুক্ষণ আগে সই করে এখানে এসেছি। জানি সকলের একটু কষ্ট হবে। মানুষের একটু সমস্যা হবে। তারপরও বলবো, জীবনটা বড়। জীবনটা আগে। জীবন বাঁচানোটাই সকলের করণীয়।
তিনি বলেন, চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। আমরা টিকার দ্বিতীয় ডোজ শুরু করবো। আরও টিকা আনা হবে। এর আগে এদিন করোনা ভাইরাসজনিত রোগের সংক্রমণ বাড়ায় দ্বিতীয় দফায় সারাদেশে লকডাউন ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার।
তিনি আরও বলেন, গত বছরের মার্চে করোনা শুরু হওয়ার পর স্বাস্থ্যবিধি মানাসহ নানা ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে আমরা এটা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হই। এখন করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। এটা সামলাতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, এবারের ভাইরাসটা কতটুকু ক্ষতি করলো তা চট করে বুঝা যায় না। কিন্তু হঠাৎ করে খারাপ অবস্থা হয়ে যায়। এজন্য সবাইকে সাবধান থাকতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মানার অনুরোধ জানাচ্ছি। ২৯ মার্চ থেকে হঠাৎ করে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বেড়ে গেল।
এরপর থেকে বেড়েই চলছে। কখনো কখনো কমছে। সেই কারণে আমরা এই ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। কাজেই স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। মাস্ক পরতে হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। বিয়েসাদিসহ এ ধরনের সমস্ত অনুষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে। পর্যটন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, কেউ বিদেশ থেকে এলে কোয়ান্টোইনে থাকতে হবে। শপিংমলগুলো অনলাইনে পণ্য সরবরাহ করতে পারবে। তারা সেখানে ভিড় বাড়াতে পারবে না। মূলত শপিংমল বন্ধই থাকবে। তবে পণ্য অনলাইনে কেনাবেচা ও লোক মারফত পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা তারা করতে পারবে। ১১ এপ্রিল নির্বাচন ছিল, তাও স্থগিত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা ভ্যাকসিন দেয়া শুরু করার পর মানুষ যেন ডেসপারেট হয়ে গেছে। তারা মনে করছে, কিছুই হবে না। সবাই যেন অবাধে চলাফেরা করে দিয়েছে। এই অবাধে চলাফেরা বন্ধ করতে হবে। এর আগে দেখেছি, বয়স্করা সংক্রমিত হয়। কিন্তু এবার দেখছি, তরুণ এমনকি শিশুরাও সংক্রমিত হচ্ছে। তাদেরকেও সুরক্ষিত রাখতে হবে।
সবাইকে সাবধানে থাকার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, প্রত্যেকে যেন একটু সুরক্ষিত থাকেন। চিকিৎসা, টিকা, ভ্যাকসিন সব ব্যাপারে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি। এক দফা টিকা আমরা দিয়েছি। দ্বিতীয় ডোজ আমরা শুরু করবো। সঙ্গে সঙ্গে আরও নতুনভাবে টিকা নিয়ে আসার ব্যবস্থা করবো। প্রত্যেককে মাস্ক পরে থাকতে হবে। দূরত্ব বজায় রাখেতে হবে। কোথাও বের হলে ঘরে ফিরে গরম পানির ভাপ নিতে হবে। গার্গেল করবেন। এটা খুবই উপকার হয়। কারণ এই ভাইরাসটা নাকের ভেতরে সাইনাসের ওখানে বাসা বাঁধে। নাকে ভাপ নিলে এবং গার্গেল করলে পরে এটা দুর্বল হয়ে যায়। এর থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। স্বাস্থ্য সুরক্ষাটা সবাই মেনে চলবেন। সেটাই আমরা আশা করি। করোনা থেকে সবাই ভালো ও সুস্থ থাকেন সেই কামনা করি।
হেফাজতকে তা-ব চালাতে বিএনপি পরামর্শ দিয়েছে বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রথমেই আমরা দেখলাম, বিএনপি তাদের সমর্থন দিচ্ছে। বিএনপি-জামাত জোট কীভাবে সমর্থন দিচ্ছে সেটাই আমার প্রশ্ন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আসবেন সেখানে তাদের আপত্তি। বিএনপির কর্মকা-ে অবাক লাগে। হেফাজতের সঙ্গে যত রকম মদদ দেয়া। এখানে জ্বালাও-পোড়াও যতকিছু করতে হবে সেটার পরামর্শ তারা দিয়েছে। পরে তাদের কর্মকা-ে সমর্থনও দেয়।’
কিছু লোকের জন্য ইসলাম ধর্মে বদনাম হবে এটা কখনোই মেনে নেয়া যায় না মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশবাসী যেন একটু ধৈর্য ধরেন। সবাইকে ধৈর্য ধরে এগুতে হবে। ধর্মের নাম নিয়ে অধর্মের কাজ জনগণ কখনো মেনে নেবে না। জনগণ কখনো সহ্য করবে না। পবিত্র ধর্মকে কেউ অসম্মান করবে সেটা আমরা চাই না। এ ধরনের অপকর্মে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠান প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ওই অনুষ্ঠানে অনেক বিদেশি অতিথি আসছেন। অনেকে বার্তা দিয়েছেন। বাংলাদেশ এত বড় সম্মান পাচ্ছে সেখানে কারা খুশি হতে পারলেন না। ২৬ মার্চ নরেন্দ্র মোদি আসবেন। তাকে আসতে দেয়া যাবে না। বাধা দেয়া- কেন? আমার এই প্রশ্ন।’
‘আজকে হেফাজতে ইসলাম কর্মসূচি দেয়। তারা কী দেওবন্দে যায় না শিক্ষা গ্রহণ করতে? তারা এ সমস্ত ঘটনা যদি ঘটায় তাহলে উচ্চ শিক্ষায় দেওবন্দে যাবে কীভাবে? সেটা কী একবারও চিন্তা করেছে? আমরা তো কওমি মাদ্রাসার সনদ দিচ্ছি। তাদের শিক্ষার ব্যবস্থা করছি। কারিকুলাম ঠিক করে দিচ্ছি। যাতে তারা দেশ-বিদেশে চাকরি পায় তার ব্যবস্থাও করে দিয়েছি। তারপরও তারা এই তা-বটা কেন ঘটাল?’
তিনি বলেন, ‘আজকে কী ঘটনা ঘটিয়েছে তারা। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে শুরু করলো হেফাজতের তা-ব। এই হেফাজত তো একা নয়। হেফাজতের সঙ্গে তো জামাত-বিএনপি জড়িত। তাদের প্রত্যেকটি কর্মকা-ে তো দেখা যায়। হেফাজতের সবাই যে এর মধ্যে জড়িত তাও কিন্তু নয়।’
রাজিব গান্ধীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশগ্রহণের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘ওই অনুষ্ঠানে আমি গিয়েছিলাম। সেই সময় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে খালেদা জিয়াও যান। সেখানে প্যালেস্টাইনের রাষ্ট্রপতি ইয়াসির আরাফাত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে দেখে হাত বাড়ালেন। খালেদা জিয়া হাত গুঁটিয়ে বসে থাকলেন। কিন্তু সেই খালেদা জিয়াকে দেখলাম মোদি সাহেবের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করা ছবি। তার সঙ্গে টেলিফোনে- সেই খিল খিল করা হাসির আওয়াজ। সেটাও সবার কানে বাজে। আবার সুবর্ণজয়ন্তীতে যখন মোদি আসবেন সেখানে বাধা দেয়া হয়। আর হেফাজতের সঙ্গে হাত মেলানো কেন? এই প্রশ্নের জবাব কোত্থেকে পাবো জানি না। তবে এই প্রশ্ন রেখে গেলাম।’
সোনারগাঁয়ের রিসোর্টে হেফাজত নেতা মামুনুল হক এক নারী নিয়ে অবস্থান এবং সেখানে হেফাজতের ভাঙচুরের ঘটনা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হেফাজতের নেতা মামুনুল হক পার্লারে কাজ করা নারী নিয়ে সোনারগাঁয়ের রিসোর্টে বিনোদনের জন্য গিয়েছিলেন। ওই নারীকে মামুনুল হক বউ হিসেবে পরিচয় দিলেও নিজের বউয়ের কাছে বলেছে অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এই পরিচয় দিয়েছেন। এদের চরিত্রটা কী তা বলতে চাই না। গতকালই আপনারা দেখেছেন। ধর্ম ও পবিত্রতার কথা বলে অপবিত্র কাজ করে ধরা পড়ে। তা ঢাকার নানা রকম চেষ্টা করেছে তারা।
তিনি বলেন, যারা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করে তারা এরকম মিথ্যা কথা বলতে পারে, অসত্য কথা বলতে পারে? তারা কী ধর্ম পালন করবে, মানুষকে কী ধর্ম শেখাবে। কয়েকদিন আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে, এখন সুন্দরী নারী নিয়ে বিনোদন করতে গেলেন। ইসলাম পবিত্র ধর্ম, সেই পবিত্র ধর্মকে এরা কলুষিত করছে। বিনোদনের এসব অর্থ আসে কোথা থেকে।’ সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন, বাংলানিউজ, জাগোনিউজ, বার্তা ২৪