শনাক্তের হার ২২ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ প্রতিদিনই ভাঙ্গছে শনাক্তের রের্কড
শোভন দত্ত : দেশে করোনায় এক দিনে সর্বোচ্চ ৭ হাজার ৬২৬ রোগী শনাক্ত হয়েছে। টানা চার দিন ধরে দেশে করোনায় শনাক্ত ৭ হাজারের ওপরে। গত চব্বিশ ঘণ্টায় করোনায় আরও ৬৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
মঙ্গলবার করোনা শনাক্ত হয়েছিল ৭ হাজার ২১৩ জনের। আর মারা গিয়েছিলেন ৬৬ জন। এর আগে করোনায় দেশে এত মৃত্যু দেখা যায়নি। গত বছরের ৩০ জুন মারা গিয়েছিলেন ৬৪ জন।
গত সোমবার করোনা শনাক্ত হয়েছিল ৭ হাজার ৭৫ জনের। তার আগের দিন রোববার শনাক্ত হয়েছিল ৭ হাজার ৮৭ জনের, যা দেশে করোনার সংক্রমণ শুরুর পর থেকে এক দিনে ছিল সর্বোচ্চ।
গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা শনাক্তের কথা জানায় সরকার। গত বছরের মে মাসের মাঝামাঝি থেকে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত শনাক্তের হার ২০ শতাংশের ওপরে ছিল। এরপর থেকে শনাক্তের হার কমতে শুরু করে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয় ৩৪ হাজার ৬৬৮টি, অ্যান্টিজেন টেস্টসহ নমুনা পরীক্ষা করা হয় ৩৪ হাজার ৬৩০টি। এখন পর্যন্ত ৪৮ লাখ ৮২ হাজার ৫৬৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর আরও জানায়, শনাক্ত বিবেচনায় গত ২৪ ঘণ্টায় প্রতি ১০০ নমুনায় ২২ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ এবং এখন পর্যন্ত ১৩ দশমিক ৫০ শতাংশ শনাক্ত হয়েছে। শনাক্ত বিবেচনায় প্রতি ১০০ জনে সুস্থ হয়েছে ৮৫ দশমিক ১৯ শতাংশ এবং মারা গেছেন এক দশমিক ৪৩ শতাংশ।
গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ৩৯ জন পুরুষ এবং নারী ২৪ জন। এখন পর্যন্ত পুরুষ সাত হাজার ৮২ জন এবং নারী মৃত্যুবরণ করেছেন দুই হাজার ৩৬৫ জন।
বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায় যায়, ৬০ বছরের ওপরে ৪০ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১২ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে পাঁচ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে দুই জন, ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে তিন জন এবং ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে একজন মারা গেছেন।
বিভাগ বিশ্লেষণে দেখা যায় মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে মারা গেছেন ৪১ জন, চট্টগ্রামে ১০ জন, রাজশাহীতে চার জন, খুলনায় দুই জন, বরিশালে এক জন, ময়মনসিংহে দুই জন এবং সিলেটে তিন জন মারা গেছেন।
গত জুন থেকে আগস্ট- এই তিন মাস করোনার সংক্রমণ ছিল তীব্র। মধ্যে নভেম্বর-ডিসেম্বরে কিছুটা বাড়লেও বাকি সময় সংক্রমণ নি¤œমুখী ছিল। এ বছর মার্চে শুরু হয়েছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। প্রথম ঢেউয়ের চেয়ে এবার সংক্রমণ বেশি তীব্র। মধ্যে কয়েক মাস ধরে শনাক্তের চেয়ে সুস্থ বেশি হওয়ায় দেশে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা কমে আসছিল। কিন্তু মার্চ মাস থেকে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যাও আবার বাড়তে শুরু করেছে।
কোনো দেশে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আছে কি না, তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ঠিক করা কিছু নির্দেশক থেকে বোঝা যায়। তার একটি হলো রোগী শনাক্তের হার। টানা দুই সপ্তাহের বেশি রোগী শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে ধরা যায়। এ বছর ফেব্রুয়ারি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শনাক্তের হার ৩ শতাংশের নিচে ছিল। দুই মাস পরে গত ১০ মার্চ দৈনিক শনাক্ত আবার হাজার ছাড়ায়। এরপর দৈনিক শনাক্ত বাড়ছেই।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় গত ২৯ মার্চ বেশ কিছু বিধিনিষেধসহ ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করেছে সরকার। এর মধ্যে ঘরের বাইরে গেলে মাস্কের ব্যবহার অন্যতম। কিন্তু সংক্রমণ আশঙ্কাজনকভাবে বাড়তে থাকলেও জনগণের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে এখনো উদাসীনতা দেখা যাচ্ছে। জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে হলে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানার বিকল্প নেই।