আমার দেশ • নগর সংস্করণ • প্রথম পাতা • লিড ৫
আজ ঢাকা আসছেন জন কেরি
কূটনৈতিক প্রতিবেদক : মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আহ্বানে আগামী ২২-২৩ এপ্রিল এবারের জলবায়ু বিষয়ক সম্মেলন ভার্চুয়ালী অনুষ্ঠিত হবে। ৪০ দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের এরই মধ্যে আমন্ত্রণ জানিয়েছে দেশটি। দক্ষিণ এশিয়ার তিন নেতাকে আমন্ত্রণ জানাতে আবুধাবি, নয়াদিল্লী হয়েই ঢাকা সফরে আসছেন মার্কিন প্রেসিডেন্টের জলবায়ু সংক্রান্ত বিশেষ দূত জন কেরি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সশরীরেই আমন্ত্রণপত্র নিয়ে আসছেন জন কেরি। ৯ এপ্রিল ঢাকা সফরে তিন ঘন্টারও কম সময় অবস্থান করবেন তিনি।
জলবায়ু ও ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজিতে বাংলাদেশকে গুরুত্ব দিচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম (সিফিএফ) এর চেয়ার হিসেবে বাংলাদেশ জলবায়ু সম্মেলনে অভিজ্ঞতা শেয়ার করার পাশাশি প্রতি বছর ১০ হাজার কোটি ডলারের বৈশ্বিক তহবিল গঠন ও কার্বন নিঃসরণে প্রতিটি দেশ যেন তাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবয়ন করে সে আহ্বান জানাবে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভঙ্গুর দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশের অনেক অর্জনও আছে। উন্নত বিশ্বের সম্পদ অপব্যবহারের জন্য যে ক্ষতি হচ্ছে এজন্য তাদের উচিত এই বোঝার কিছু অংশ বহন করা। জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে পাশে চায় উল্লেখ করে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, প্যারিস চুক্তি থেকে দেশটির সরে যাওয়া ও আবার যুক্ত হওয়াসহ বড় পরিবর্তন এসেছে। জন কেরি’র ঢাকা সফর বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ককে আরো ঘনিষ্ঠ করবে। উইড্রো উইলসন ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর স্কলার্সের এশিয়া কর্মসূচির উপপরিচালক ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সিনিয়র অ্যাসোসিয়েট কুগেলম্যানেমর মতে বাইডেন শাসনামলে ঢাকা ও ওয়াশিংটনের মধ্যে সম্পর্ক আরও গভীর এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। ওয়াশিংটন জানে যে চীন-ভারত দুই দেশই বাংলাদেশের মূল প্রতিযোগী উল্লেখ করে তিনি বলেন, অর্থনৈতিক সহযোগিতার মাধ্যমে ঢাকা এবং ওয়াশিংটনের মধ্যকার সম্পর্ক সামগ্রিকভাবে সৌহার্দ্যপূর্ণ এবং স্থিতিশীল হওয়া উচিত। দিল্লির সাথে ঢাকার সম্পর্ক বেইজিংয়ের তুলনায় উষ্ণ এবং আরও বহুমুখী। স্পষ্টতই এখানে একটি প্রতিযোগিতা চলছে। মার্কিন উদ্যোগ ‘ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি’ ও রিজিওনাল প্ল্যাটফর্মের বাইরে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ করতে গত বছর অক্টোবরে ঢাকা সফর করেন মার্কিন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টিফেন বাইগান। সে সময় তিনি বলেন, নয়াদিল্লির চোখে বাংলাদেশকে দেখেনা যুক্তরাষ্ট্র। ঢাকার সঙ্গে সরাসরি অংশিদারিত্বমূলক সম্পর্ক চায় ওয়াশিংটন।
বাইগানের ঢাকার এনগেজমেন্টের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত অবাধ, মুক্ত, সমন্বিত, শান্তিপূর্ণ এবং নিরাপদ ইন্দো-প্যাসিফিক রিজিওন প্রতিষ্ঠার যে প্রয়াস, যা বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের কমন ভিশন, তা এগিয়ে নেয়ার বিষয়ে বিস্তর আলোচনা হয়।
দক্ষিণ এশিয়ায় পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের পর বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সামরিক সম্পর্ক জোরদারের পাশাপাশি ইন্দো-প্রশান্ত কৌশলগত পরিকল্পনায় বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেছে দেশটির নতুন প্রশাসন।
ঢাকার পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ও ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক সূত্র বলছে, বাংলাদেশ যেন খাদ্য উৎপাদন, যোগাযোগ ব্যাবস্থায় সাফল্য, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত ও সেনা দক্ষতা বৃদ্ধিতে আরো এগিয়ে যেতে পারে সেই সহযোগিতা করতে চায় দেশটি।
সম্প্রতি উভয় দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর টেলিফোন আলাপে অর্থনৈতিক সহযোগিতা, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আরও গভীর করার উপায় ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে একমত হন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেছেন, দেশটির সঙ্গে যদি আমাদের সম্পর্ক আরও উন্নত করতে পারি, দিজ ইজ এ উইন-উইন। বাংলাদেশেরও এখন অনেক কিছু অফার করার সুযোগ আছে।