করোনার ১১ মাসে ই-ব্যাংকিংয়ে লেনদেন বৃদ্ধি সোয়া ৪ হাজার কোটি টাকা
মো. আখতারুজ্জামান : করোনা মহামারীর শুরু থেকেই ব্যাংকিং কার্যক্রম সীমিত আকারে চালু ছিলো। মাঝখানে বেশ কয়েক মাস ব্যাংকের কার্যক্রম সাভাবিক ছিলো। আবারও সীমিত করা হয়েছে ব্যাংকিং কার্যক্রম। গ্রাহকরা ব্যাংকে না গিয়ে ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে তাদের লেনদেনে বেশি আগ্রহি হয়ে উঠেছেন। গত বছরের মার্চ থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত এ ১১ মাসে ই-ব্যাংকিংয়ে লেনদেন বেড়েছে ৪ হাজার ২০৭ কোটি ৭ লাখ টাকা। এই সময়ে এটিএম বুথের মাধ্যমে ১ হাজার ৯৮৪ কোটি ৫ লাখ টাকা উত্তলন করেছে গ্রাহকরা। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
করোনাকালে ব্যাংকগুলো শাখা কার্যক্রমের চেয়ে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে ই-ব্যাংকিংয়ে। বাড়ানো হয়েছে এ সেবার কার্যক্রমের পরিধিও। প্রতিনিয়ত সহজ করা হচ্ছে এই ই-ব্যাংকিং কার্যক্রম। রীতিমত ব্যাংকগুলোর মধ্যে একটি প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে কোনো ব্যাংক তাদের গ্রাহকদের খুব সহজেই ই-ব্যাংকিং সেবা বেশি দিতে পারে। আর এতে করেই গত জানুয়ারিতে শুধু ডেবিট, ক্রেডিট ও প্রিপেইড কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে ২০ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা। ইন্টারনেট ব্যাংকিং ব্যবহার করে লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৫৪৩ কোটি টাকা। আর ই-কমার্সে লেনদেন বেড়ে ৬৬০ কোটি টাকায় ঠেকেছে। এর বাইরে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ব্যবসায়ীক লেনদেন হচ্ছে প্রচুর।
জানুয়ারি মাসে এটিএম বুথের মাধ্যমে ১৬ হাজার ৬৪৬ কোট ৮ লাখ টাকা জমা ও উত্তলন করেছে গ্রাহকরা। এই মাসে এটিএম বুথে ১ কোটি ৮৬ লাখ ১০ হাজার ৫৯৮ বাবার টাকা উত্তলন করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গ্রাহকদের মাঝে শাখায় গিয়ে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার প্রবণতা কমে আসছে। লাইনে দাঁড়ালে যেমন সময় নষ্ট হয় তেমন করোনা ঝুঁকি থাকে। করোনার সংক্রমণে ভয়ে অনেকেই এখন আর টাকা উত্তোলন বা জমা দিতে শাখায় যায় না। তবে কার্ডের চার্চ কমানো গেলে ই-ব্যাংকিং কার্যক্রম আরও বাড়ত বলে মত দেন ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা। করোনার শুরু থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের ব্যাংকখাতকে অনলাইন ভিত্তি লেনদেন বাড়ানো জন্য বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আসছে।
এখন একজন গ্রাহকের যে ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট রয়েছে তার যে কোনো শাখা থেকে লেনদেন করতে পারেন। আর কার্ড দিয়ে যে কোনো ব্যাংকের বুথ থেকে টাকা তুলতে বা পরিশোধ করার সুযোগ রয়েছে। ইন্টারনেট ব্যাংকিং ব্যবহার করে ঘরে বসেই পরিশোধ করতে পারেন। করোনার সময়ে এ ধরনের লেনদেনের বাড়তি চাহিদাকে কেন্দ্র করে ব্যাংকগুলো অনলাইনভিত্তিক সেবার ওপর বেশি জোর দিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জানুয়ারি পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর ইস্যু করা মোট কার্ডের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৪১ লাখ ২০ হাজার। এর মধ্যে ডেবিট কার্ডের সংখ্যা ২ কোটি ১৭ লাখ ৭১ হাজার।
জানুয়ারি মাসের তথ্য অনুযাই দেশে ক্রেডিট কার্ড ১৬ লাখ ৯৩ হাজার এবং প্রিপেইড কার্ডের সংখ্যা ৭ লাখ ৫৬ হাজার। গত জানুয়ারিতে ডেবিট কার্ডে মোট ১৮ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। আগের মাস ডিসেম্বরে ১৮ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকা ও নভেম্বরে ছিল ১৭ হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা। আর করোনা শুরুর আগে গত বছরের জানুয়ারিতে ডেবিট কার্ডে ১৫ হাজার ২৭০ কোটি টাকা লেনদেন হয়। ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন বেড়ে গত জানুয়ারিতে এক হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা হয়েছে। আগের বছরের জানুয়ারিতে যা এক হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা ছিল। প্রিপেইড কার্ডে জানুয়ারিতে লেনদেন হয়েছে ১৭৫ কোটি টাকা। সম্পাদনা : ভিক্টর রোজারিও