আমার দেশ • প্রথম পাতা • লিড ১
দরিদ্রদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে লকডাউন দেয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের
মো. আখতারুজ্জামান : দেশে করোনার সংক্রমণ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। বাড়ছে মৃত্যুর হার। গতবছর করোনার শুরুতে দেশব্যাপী লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। এতে বেশ ফলও এসেছিলো। মাঝে কয়েক মাস করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার কমেছিলো। আবারও বাড়তে থাকা সংক্রমণ কমাতে গত এক সপ্তাহের বিধি নিষেধের ঘোষণা দেয় সরকার।
তবে ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন মহলের আন্দোলনের মুখে সেটা আর এক সপ্তাহব্যাপী অবস্থান করতে পারেনি। আবারও দেশব্যাপী পুরোপুরি লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে লকডাউনের যাওয়ার আগে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছে বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, খেটে খাওয়া লোকদের ন্যূনতম খাবার নিশ্চিত করে লকডাউন দিতে হবে। নতুবা বাস্তবায়ন করা বড় চ্যালেঞ্জ হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ জানান, আমরা ঘনবসতির দেশ। আমাদের এখানে শারীরিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধির বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করা কিছুটা চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তবে আমাদের চেষ্টা করতে হবে। কারণ এসব না মানলে করোনা সংক্রমণ আরও বাড়বে। আমার সামনে পিছনে ডাইনে বায়ে লোকজন। কার মাধ্যে করোনা রয়েছে সেটা তো আমরা জানি না।
তিনি বলেন, অর্থের চেয়ে জীবনের মূল্য বেশি। আমরা এ কথা চিন্তা করে লকডাউন দিচ্ছি। কিন্তু বাস্তবতা চিন্তা করতে হবে। একজন রিক্সাওয়া দিন আনে দিন খায়। তার ঘরে তো মজুত কিছু থাকে না। রাস্তায় প্রতিনিয়ত যে ভিক্ষুকরা ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করে তার কথাও চিন্তা করতে হবে। দিন আনে দিন খায় এসব লোকদের ন্যূনতম খাবারের চাহিদা মিটিয়ে আমাদের লকডাউনে যেতে হবে। অন্যথায় লকডাউন বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে।
এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, যারা লকডাউনের কথা বলে তাদের তো আর খাবার নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। আমাদের দেশে বর্তমানে আড়াই থেকে ৩ কোটি লোক রয়েছেন, যারা দিন আনে দিন খায়। আমরা যে ১৪ দিনের লকডাউনের কথা বলছি এই সময়ে এসব লোকদের কী হবে ভাবতে হবে। এর আগে যখন লকডাউনের ঘোষণা দেয়া হয়, তখন ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা কিভাবে চলবে বা ছোট হোটেল ব্যবসায়ীসহ তাদের কর্মচারিদের কি হবে তা ভাবলাম না। ফলে লকডাউনের বিরুদ্ধে লোকজন মাঠে নামলো।
তিনি আরও বলেন, আমরা লকডাউনের প্রসঙ্গ আসলেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কথা বলি। তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা তাদের লোকদের সক্ষমতার বিষয়ে বলি না। তারা তো আমাদের খেটে খাওয়া লোকদের মতো নয়।
অর্থনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্ট্যাডিজ (বিআইডিএস)-এর জ্যেষ্ঠ গবেষক অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, দেশে বর্তমানে প্রায় ৪ কোটি দরিদ্র মানুষের খাদ্য নিরাপত্তার প্রস্তুতি থাকতে হবে। গতবারের মানুষের হাতে সঞ্চয় ছিলো। এর মধ্যে প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ অতি দরিদ্র। এখন কিন্তু স্বল্প আয়ের মানুষের হাতে সঞ্চয় কম। কাজেই সত্যিকারের লকডাউনে গেলে অনেক বেশি সংখ্যক মানুষের সাহায্য দরকার হবে।
তিনি বলেন, এতো মানুষের দায়ভার নেয়ার প্রাতিষ্ঠানিক ও আর্থিক সক্ষমতা আমাদের রয়েছে কিনা সেটা দেখতে হবে। অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের প্রতিষ্ঠানগুলো বাঁচিয়ে রাখার উপায় কি হবে সেটা নিয়ে ভাবতে হবে। গত এক বছরে যারা ঋণ নিয়েছেন তারা ব্যবসা-বাণিজ্য এখন না করলে ফেরত দিবেন কিভাবে। আর এ ধরনের প্রতিষ্ঠান সমস্যায় পড়লে সাধারণ মানুষের কর্মসংস্থানের উপায় কী হবে তা ভাবতে হবে। সম্পাদনা : ভিক্টর রোজারিও