কঠোর লকডাউনে জীবন-জীবিকার সমন্বয় সাধন নিয়ে সংশয় ড. আবদুল মজিদের
আমিরুল ইসলাম : ঢিলেঢালা লকডাউনেই অসহায় অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে দেশের দরিদ্র ও অতিদরিদ্র মানুষের জীবনে। এরই মধ্যে আবার কঠোর লকডাউন দিতে যাচ্ছে সরকার। একদিকে মৃত্যু ও সংক্রমণে রেকর্ড ভাঙছে করোনা, অপরদিকে অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়ার কারণে দুর্ভোগে পড়েছে দিন এনে দিন খাওয়া মানুষেরা। করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে জীবন ও জীবিকা দু’দিক রক্ষা করে কর্মসূচি দিতে পারছে না সরকার। জীবন বাঁচাতে জীবিকা বন্ধের পথকেই বেঁছে নিতে হচ্ছে সরকারকে। জীবন-জীবিকা দু’টোই রক্ষা করা যাবে কীভাবে, দরিদ্র ও অতিদরিদ্র মানুষকে এই সংকটকালে কীভাবে সহায়তা করা যাবে, জানতে চাইলে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ এই প্রতিবেদকে বলেন, জীবিকার প্রয়োজন জীবনের জন্য আবার জীবনেরও নিরাপত্তার প্রয়োজন জীবিকার জন্য। লকডাউন দিয়ে মানুষর আয় উপার্জনের পথ বন্ধ করে দিলে সে টিকবে কী করে। আবার জীবিকার জন্য শৃঙ্খলা ভেঙে আন্দোলন-সংগ্রাম করে আরও বেশি লোককে সংক্রমিত করলে যারা আমার ক্রেতা তারাই যদি না বাঁচে, আক্রান্ত হয়ে যায় তাহলে আমার জীবিকার কী হবে? সুতরাং এই দুটোর মধ্যে সমন্বয় লাগবে। স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে পালন করে সব কাজ চালাতে হবে। ব্যবসা-বাণিজ্য, সামাজিক যোগাযোগ ও যাতায়াত সবকিছু রাখতে হবে। কারণ বিচ্ছিন্ন হয়ে জীবন ধারণ হয়ে জীবন ধারণ করে লাভ নেই।
তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্যবিধি পালনের ব্যাপারে সকলকে উদ্বুদ্ধ, সচেতন এবং প্রয়োজনবোধে করতে হবে। জীবন ও জীবিকার মধ্যে সমন্বয় করতে হবে। টিকমতো স্বাস্থ্যবিধি পালন করা হলে এই সমস্যা হতো না। স্বাস্থ্যবিধি পালন কে করাবে? একদিকে সরকার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বলছে, অন্যদিকে সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যবিধি না মেনে অন্যকে সংক্রমিত করছে। এই দুটোর মধ্যে ভারসাম্য হচ্ছে না। সেখানেই সরকারের করণীয় আছে। কর্তৃপক্ষ কঠোর আইন জারি করবে কিন্তু তার বাস্তবায়ন করবে না, এমন হলে হবে না। এর ফলে মানুষের মধ্যে একধরনের বিভাজন ও আস্থাহীনতার পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে। তখন মানুষের মধ্যে জীবিকার প্রশ্ন এমনিতেই চলে আসে। আমার জীবীকার কী হবে? অন্যসবকিছ চলছে আমি কেন আমার ছোট দোকান বন্ধ রাখবো? এটা মানুষ হঠাৎ করে মানবে না। জনগণের মধ্যে আস্থা সৃষ্টি করতে হবে।
তিনি বলেন, সামনে পহেলা বৈশাখ, রমজান ঈদ এই তিনটি উৎসব হচ্ছে ছোটখাট ব্যবস্যা-বাণিজ্যের অর্থ আয়ের সবচেয়ে বড় উপলক্ষ্য। তার আগেই এমন একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি হলো কেন সেটা দেখতে হবে। কর্তৃপক্ষের যেটা করণীয় ছিলো সেটা করলো না কেন? একেবারে ঢিলেঢালা ভাব সৃষ্টির করার ফলে সংক্রমণ বেড়ে গেলো। আর এটা বাড়লো কোন সময় যখন জীবিকা অর্জনের সবচেয়ে বড় সময়। গত বছরও ঈদ ও পহেলা বৈশাখ উদ্যাপন করা যায়নি। এবার একটা সুযোগ এসেছিলো কিন্তু এমন একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো। পহেলা রমজান থেকে লকডাউন দেওয়া হচ্ছে। এটা দেওয়া না দেওয়া সমান কথা। ঢিলেঢালাভাবে লকডাউন দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই, এতে করে সাধারণ মানুষ আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।